ধুর্ত শিয়াল ও মোরগ

এমন অনেক মানুষ আছে যারা প্রতারণা, ধোঁকাবাজি ও কপটতার মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করে। কিন্তু তারা জানে না যে, কপটতা বা ধোঁকাবাজি হচ্ছে এমন এক ঘৃণ্য কাজ যা মানুষের সম্মান ও মর্যাদাকে হুমকির সম্মুখীন করে। পবিত্র কোরআনে কপট লোকদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, “তারা আল্লাহ ও ঈমানদারদেরকে ধোঁকা দিতে অথচ তারা বুঝতে পারে না যে, তারা নিজেদের ছাড়া অন্য কাউকে ধোঁকা দেয় না।”

কপটতাকে একটি আত্মিক রোগ হিসেবে আখ্যায়িত করে আমিরুল মোমেনীন হযরত আলী (আ.) বলেছেন, কপটতাপূর্ণ লোকদের ব্যাপারে সতর্ক হও। কেননা তারা ভুলপথে পরিচালিত। তারা বিভ্রান্ত, তাদের অন্তর রুগ্ন এবং তাদের চেহারা অপবিত্র। তিনি আরো বলেছেন, কপট লোক নিজের তোষামোদকারী এবং অন্যের বদনামকারী।

এ পর্বে আছে এক ধুর্ত শিয়ালের প্রতারণা সম্পর্কে একটি গল্প।

এক বাগানে এক মোরগ বাস করতো। সে গল্প বলতে ও শুনতে পছন্দ করতো। কবুতর ও চড়ুই পাখিদের দেখলেই মোরগ বিভিন্ন বিষয় জানতে চাইতো। তাদেরাও মোরগের ডাকে সাড়া দিতো এবং গোল হয়ে বসে গল্প বলতো। মোরগের ওপর শিয়াল ও শিকারীর আক্রমণ এবং তাদের বিভিন্ন ধোঁকা সম্পর্কে তারা আলোচনা করতো। এসব আলোচনা শুনতে শুনতে মোরগ শত্রুর চক্রান্ত সম্পর্কে সব সময় সজাগ থাকতো।

বসন্তের কোন এক একদিন মোরগ ছিল একা। সে ঘর থেকে উঁকি দিয়ে নানারকম ফুল, ফল এবং অঙ্কুরিত লতাগুল্ম দেখছিল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর ফুলের গন্ধে তার মন আনন্দে নেচে উঠলো এবং মনের অজান্তেই উচ্চস্বরে ডাক দিতে শুরু করলো। ওই বাগানের কাছেই ছিল একটি শিয়াল। মোরগের ডাক শোনার পর সে দৌড়ে মোরগের কাছে এলো। মোরগকে গোশত খাওয়ার জন্য সে একটা ফন্দি আঁটলো।

কিন্তু শিয়াল মোরগের কাছে পৌঁছার সাথে সাথে মোরগ প্রাণভয়ে একটি গাছের ডালে গিয়ে বসল। এরপর মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল কিছুতেই সে শিয়ালের চক্রান্তের ফাঁদে পা দেবে না। যাহোক, শিয়াল যখন দেখলো মোরগ তার নাগালের বাইরে চলে গেছে তখন সে কথার মারপ্যাঁচে মোরগকে বাগে আনার পরিকল্পনা করলো।

মোরগকে উদ্দেশ্য করে সে মিষ্টি ভাষায় বলতে লাগলো :

শিয়াল: “আরে, কি ব্যাপার! আমাকে দেখে গাছে উঠলে কেন? তোমার মিষ্টি আওয়াজ শুনে আমি তোমার সাথে বন্ধুত্ব করতে এলাম আর তুমি কিনা আমার কাছ থেকে দূরে চলে গেলে! কতইনা ভাল হতো যদি আমরা একসাথে এ মাঠে ঘুরে বেড়াতে পারতাম!!”

মোরগ: “তুমি ঠিক কথাই বলেছো, এত সুন্দর পরিবেশে তোমার সাথে ঘুরতে পারলে আমারো ভাল লাগতো। কিন্তু তো তোমাকে আমি চিনি না। তাছাড়া আমার বাবা আমাকে সব সময় উপদেশ দিতেন অপরিচিত কারো সাথে যেন বন্ধুত্ব না করি।”

শিয়াল: “আমি তোমার অপরিচিত কে বললো? আমি তো তোমার বাবার বন্ধু। তুমি যখন ছোট ছিলে তখন প্রায় প্রতিদিনই আমি তোমাদের বাসায় যেতাম। এইতো গতকালও তোমার বাবার সাথে আমার দেখা হয়েছিল। তিনি আমাকে বলেছেন, আমি যেন তোমার ব্যাপারে সতর্ক থাকি কেউ যাতে তোমার দিকে চোখ তুলে তাকাতে না পারে।”

মোরগ: “তুমি এসব কি বলছো! আমার বাবা তো মারা গেছেন বছরখানেক আগে।”

তুমি নির্ঘাত মিথ্যা বলছো। মোরগের কাছে মিথ্যা ধরা পরার পর শিয়াল কিছুটা বিবৃতবোধ করলো। তারপর স্বভাবসূলভ ভাষায় কথা ঘুরিয়ে সে বললো:

শিয়াল: “দেখ দেখি কাণ্ড! আমি আসলে তোমার মায়ের কথা বলতে চেয়েছিলাম। তিনিই আমাকে বলেছেন, তোমাকে যেন একা না রাখি। এখন তুমি যদি আমার সাথে চলতে না চাও তাহলে অন্য কথা।”

মোরগ: “তোমার ব্যাপারে আমি বাবা-মা কারো কাছেই কোন কথা শুনিনি। তবে আমি জানি যে, মোরগ ও শিয়ালের বন্ধুত্ব করা উচিত নয়। কারণ শিয়াল সবসময় মোরগকে খাওয়ার জন্য ব্যস্ত থাকে। আমার মতে, কোন মোরগেরই শিয়ালের মতো শত্রুর সাথে বন্ধুত্ব করা উচিত নয়।”

শিয়াল: “তুমি আমাকে শত্রু বললে! আরে তুমি দেখছি কোন খবরই রাখো না। কয়েকদিন আগে বনের রাজা আদেশ দিয়েছেন, সকল জীবজন্তুর মধ্যে যেন বন্ধুত্ব থাকে, কেউ যেন কারো সাথে শত্রুতা না রাখে। তুমি শুনে অবাক হবে যে, রাজার এ ঘোষণার পর এ জঙ্গলে বাঘ ও ভেড়াও বন্ধু হয়ে গেছে।”

শিয়াল যখন এসব কথা বানিয়ে বানিয়ে বলছিল, মোরগ তখন দূরে মাঠের দিকে তাকিয়ে কি যেন দেখছিল। এ দৃশ্য দেখে শিয়াল বললো:

শিয়াল: “ওদিকে তাকিয়ে কি দেখছো? তোমার কি এখানে মন নেই?”

মোরগ: “একটি প্রাণী দেখতে পাচ্ছি এদিকে দৌড়ে এগিয়ে আসছে। জানি না ওটা কোন্‌ প্রাণী। তবে শিয়ালের চেয়ে একটু বড়, লম্বা কান ও লম্বা লেজ দেখতে পাচ্ছি। পাগুলোও লম্বা ও চিকন।”

এ কথা শুনে শিয়াল খুব ভয় পেয়ে গেল। মোরগকে খাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে সেখান থেকে পালানোর চিন্তা করতে লাগলো। এরপর সে আস্তে আস্তে একটি ঝোপের দিকে রওনা হলো। এ দৃশ্য দেখে মোরগ মিটমিট করে হাসতে লাগলো। শিয়ালকে উদ্দেশ্য করে সে বললো:

মোরগ: “আরে তুমি যাচ্ছে কোথায়? ওই প্রাণীটা আসার পর্যন্ত অপেক্ষা কর। হতে পারে সে তোমারই মতো কোন শিয়াল।”

শিয়াল: “শিয়াল না ছাই! তুমি যে বর্ণনা দিয়েছো তাতে আমার বুঝতে বাকী নেই যে, ওটা একটা কুকুর। আর কুকুর যদি আমাকে নাগালে পায় তাহলে আমার খবর আছে!”

মোরগ: “তা হতে যাবে কেন? তুমি না একটু আগে বললে যে, বনের রাজা একে অপরের সাথে সাথে বন্ধুত্ব রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এ নির্দেশের পর বাঘ ও ভেড়াও নাকি একে অপরের বন্ধু হয়ে গেছে।”

শিয়াল: “হ্যাঁ বলেছি, তবে আমার ভয় হচ্ছে এ কুকুরটিও হয়তো তোমার মতো- বনের রাজার আদেশ শুনেনি। তাই আমার এখানে থাকা একটুও নিরাপদ নয়।”

এ কথা বলে শিয়াল দ্রুত ওই স্থান ত্যাগ করলো। শিয়াল চলে যাওয়ার পর মোরগ নিজের বুদ্ধির তারিফ করতে লাগলো এবং নিজেকে বাঁচাতে পেরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।

বন্ধুরা, কপটতা ও ধোঁকাবাজদের চক্রান্ত যে সব সময় সফল হয় না তা এ গল্পটি থেকে জানতে পারলে। তোমরা কপট লোকদের ব্যাপারে সাবধান থাকবে। তাহলেই তোমাদের জীবন হবে বিপদমুক্ত।

যে হোটেলের কর্মীরা কখনও ছুটি নেয় না!

এক আলুতে বাতি জ্বলবে ৪০ দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *