দৃষ্টান্তবিহীন এক ঘটনা-পর্ব ২
দৃষ্টান্তবিহীন এক ঘটনা-পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
একদা ছেলে তাঁর মাকে বলল, আমরা একাধারে সত্তর বছর যাবৎ একই খাদ্য খেয়ে আসছি। আমিও এখন বৃদ্ধ হয়েছি। আর তুমিত অতি বৃদ্ধা। এখন আমার মনে চাই আমি বাজারে গিয়ে নতুন কিছু খাদ্য এনে তোমাকে খেতে দেই। বৃদ্ধা জিজ্ঞাসা করল টাকা কোথায় পাবে। তখন ছেলে বলল, একদিনের দুটি আনার বিক্রি করে যে টাকা পাব, তা দ্বারা অন্য খাদ্য কিনে নিয়ে আসব। তাঁর মা বলল, বাবা! আল্লাহ খুশি হয়ে যে খাবার আমাদের দিচ্ছেন তাতে তাঁর উপর খুশি থাক উচিৎ। বিকল্প কোন চিন্তা করায় আল্লাহ তায়ালা না-শুকরী হবে।
অতএব আমাদের কোন নতুন খাদ্যর প্রয়োজন নেই। আমরা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে যা পাচ্ছি তা আমাদের জন্য যথেষ্ঠ। অতএব আমি তোমাকে দূর্ভাবনা করতে বারণ করছি। ছেলে তাঁর মায়ের উপদেশে সন্তুষ্ট হল না। সে বার বার তাঁর মাকে একই কথা বলে বিরক্ত করতে লাগল। অবশেষে তাঁর মা বলল, তোর যা মন চায় তাই করগে। ছেলে তখন সেদিনের দুটি আনার নিয়ে বাজারে গেল এবং তা বিক্রি করে সে টাকা দ্বারা বিভিন্ন রকমের খাদ্য কিনে আনল। প্রথমে তাঁর মা ছেলের ক্রয় কর খাবার কিছুই খেল না। ছেলে তখন তাঁর মাকে বলল, মা তুমি না খেলে আমি খাব না। সমস্ত খাদ্য ফেলে দিব। তখন তাঁর মা বাধ্য হয়ে বাজারের খাবার খেল। ছেলেও পেট ভরে খেল। পরে দিন দেখা গেল আনার গাছে আনার ধরেনি। তখন তাঁর মা ও ছেলে দূশ্চিন্তাগ্রাস্ত হল। এক এক করে তিন দিন অতিবাহিত হল গাছে আর ফল এল না। তারা অনাহারে খবই দুর্বল হয়ে গেল। তারা শুধু নহরের পানি করে অতিবাহিত করতে লাগল।
এ সময় প্রতিদিন একটু সুন্দর স্বাস্থ্যবান ও অলঙ্কারে সজ্জিত একটি গরু এসে তাদের দরজায় সারাদিন গড়াগড়ি করে কাটাত। তৃতীয় দিন গরুর জবান খুলে গেল। সে বৃদ্ধা কে বলল, মা! আমাকে জবাই করে আমার গোস্ত খান। আমি আপনাদের জন্য হালাল।
অতএব হালাল গোস্ত খেতে আপনাদের আপত্তি থাকা উচিৎ নয়। তখন বৃদ্ধা ও তাঁর ছেলে গরুর ভাষা শুনে চিন্তিত হল। বৃদ্ধা বলল, কার গরু খেয়ে আবার বিপদে পড়ব। ছেলে বলল, গরু নিজেই বলছে সে আমাদের জন্য হালাল। এজন্য কোন অপরাধ হলে হবে গরুর। আমাদের কোন অপরাধ হবে না। অতএব মা! আমরা গরুটিকে জবেহ করে অর গোস্ত খেয়ে ক্ষুশা নিবৃত করি।
গরু আজ তিনদিন যাবত আমাদের ঘর প্রান্তে এসে শুয়ে থাকে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের খাদ্য পরিবর্তান করে দেয়ার আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করার জন্যই আনার বন্ধ করে গরু পাঠিয়ে দিয়েছেন। বৃদ্ধা ছেলের কথায় শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে গরুটি জবেহ করার জন্য যখন তাঁর কাছে এল তখন গরু তাঁর ঘাড় মাটির সাথে মিশিয়ে জবেহ পরিবেশ সহজ করে দিল। ছেলে কোন লোকজন ছাড়াই একাই গরু জবেহ কাজ সমাধা করল। এতে তাঁর কোন অসুবিধা হল না। গরুর মাংস কেটে অল্প সময়ের মধ্যে তারা কাবাব বানিয়ে ক্ষুধা নিবারন করল। বাকি মাংস কাবাব বানিয়ে পরের দিনগুলোর জন্য রেখে দিল।
বনি ইসরাইলের সম্পদশালী ব্যক্তি যে ছিল এ সুন্দর গরুর মালিক সে কয়েকদিন যাবত গরুটি হারিয়ে উহার খোঁজ অনেক লোক লাগিয়ে দিয়েছিল।
বনি ইসরাইলের মধ্যে দেলালা নামে ধূত মেয়ে লোক ছিল। দশ হাজার টাকা প্রাপ্তির লোভে বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরু সন্ধান করতে লাগলেন, অনেক বাড়ি অনুসন্ধনের পর এক সময় বৃদ্ধার বাড়ি এসে উপস্থিত হল। তখন গরুর চামড়া ও হাড় বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। দেলালা এগুলো দেখে অনেকটা আশাবাদি হল। সে তাতক্ষনিক বৃদ্ধার ঘরে গিয়ে দেখে বৃদ্ধা ও তাঁর ছেলে ঘরে বসে কাবাব খাচ্ছে।
তখন দেলালা বলল, তোমরা কাবাব খাচ্ছ। গরুটিতো ছিল খুবই ভাল। তাঁর গোস্ত খেতে ভালই হবে। ভাল সময় আমি তোমাদের বাসায় এসেছি আমাকে কিছুটা খেতে দাও না। বৃদ্ধা তখন তাকে একটু কাবাব খেতে দিল। দেলালা কাবাব নিয়ে বের হয়ে গেল এবং বলল, আমি এটা বাড়িতে নিয়ে গিয়ে মজা করে খাব।