চাঁদটা যখন খিলখিল করে হেসে উঠে ,আলোতে মেতে উঠে পৃথিবী। মাঝরাত্তিরের কুয়াশার বুকে মাথাগুজে মুক্তোর মত ঘাসের ডগায় ঝিলমিল করে জ্যোৎস্নারা।
চারদিকে নিঝুমতা যখন বেশ করে ঝেঁকে বসে। ঠিক তখন, ঐযে ঐ মস্ত মাঠটা দেখছ তার সোজা ডানে গেলে পাবে একটা মস্ত দীঘি।
পূর্ণিমার রাতে জ্যোৎস্না হেসে লুটোপুটি খায় দিঘির জলে। তাই দিঘীর নামটাও চাঁদের দিঘি।
জ্যোৎস্নাদের সাথে খেলা করার জন্য প্রায়ই দিঘির পাড়ে নেমে আসে একঝাক পরী। চাঁদের আলোয় যেন পরীদের মেলা বসে দিঘির পাড়ে।
রাত্রিভর জ্যোৎস্না গায়ে মেখে হৈ হুল্লোড় করে পরীরা।
শেষরাত্রিরে যখন চাঁদটা ডুবো ডুবো হয়ে সূর্যিমামাকে আমন্ত্রণ জানায় সেসময় দিঘির জলে স্নান সেরে পরীরা আবার ফিরে যায় তাদের রাজ্যে।
ভাবছ মিথ্যে বলছি! এইযে মাথায় হাত দিয়ে বলছি।
সেবার তো দিঘিতে স্নান করতে এসে পরীদের ভারি একটা বিপদই হয়েছিল।
এসো আজ তোমাদের সেই গল্পই শুনাই।
পরীদের রাজ্য চিনত? ঐযে আকাশে রোজ সাদা সাদা মেঘের ভেলা দেখ? হ্যাঁ ,পরীদের রাজ্যে যেতে হলে তোমাকে চড়ে বসতে হবে তার একটায়।
সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে প্রথমে সাতদিন সাঁতরাত যেতে হবে সোজা উত্তরে। তারপর সেখান থেকে তিনদিন দক্ষিণে গেলেই দেখতে পাবে মস্ত একটা লাল রঙের পাহাড়। এর নাম ‘হাকুম হুতুম’। হাকুম হুতুম পাহাড়ের ওপাড়ই পরীদের রাজ্য।
পাহাড়ের ডানদিকে দেখবে মস্ত রাজহাঁসের মত দেখতে একটা প্রাসাদ। এটাই এখানকার রাজার রাজপ্রাসাদ। পরীদের রাজার নামটা ভারি বিটকেলে। তাই আর লিখলুম না। হাঁসের মত প্রাসাদের যে দুইটা পাখা আছেনা ,ছড়িয়ে ?
ওই দুটোতে থাকে দুই পরী রাজকন্যা। মিষ্টিপরী আর দুষ্টপরী।
নামের মতই মিষ্টিপরী ভারি মিষ্টি দেখতে। সে খুব ভালও। কাওকে কটু কথা বলেনা। রাজ্যের সবাই তাকে ভালবাসে।
সেসব বলছি কি , রোজ রোজ কাকডাকা ভোরে উঠে মিষ্টিপরী ঘোটা রাজ্যে একবার না বেড়ালে তো রাজ্যের কারোর ঘুমই ভাঙেনা । ভাঙবে কি করে , রাজ্যের যত পরী আছে সবার ঘুমযে মিষ্টি পরীর কাছে।
আর দুষ্টপরী। তার তো ঘুম থেকে উঠতেই ভরদুপুর! দেখতে যেমন কুৎসিত আর স্বভাবও তেমন।
কারও সাথে ঠিকমত কথা বলেনা।
তার যত কথা সব ঐ হাকুম হুতুম পাহাড়ের দুষ্টু ডাইনিটার সাথে।
সবাই দুষ্টপরীকে ভয়ে কিছু না বললেও আড়ালে কেউই তাকে ভালবাসেনা।
সেবার মিষ্টিপরীর অমন সাধের ফুলবাগানটাই না একবারে মাটির সাথে মিশিয়ে দিল। বলে কিনা , অমন বাজে গাছ কেউ লাগায় ..বিচ্ছিরি গন্ধে রাতে ঠিকমত ঘুমোতেই পারিনা !
আহারে ! মিষ্টিপরীর অমন সাধের বাগানটা। ভারি কষ্ট পেয়েছিল সেদিন।
চাঁদের আলোয় আলোকলতা
বিছনে পাতে জুই
এমন রাতে আলতা পায়ের
মিষ্টিপরী কই ?
মিষ্টিপরীর যে খুব কষ্ট। দুদিন ধরে কেবল কাঁদছে আর কাঁদছে।
একান ওকান করে এ কথা গিয়ে পৌঁছল পরীরাজার কানে।
শুনে রাজা তো রেগেই আগুন , আমার মেয়ে বলে কি হয়েছে ,এ অন্যায়ের জন্য দুষ্টপরীকে উচিত সাঁজা দেব আমি!
সেদিনই পাজি দুষ্টপরীকে পরিরাজ্য থেকে নির্বাসন দেয়া হল।
মিষ্টিপরীর জন্য একশপদের নতুন ফুলগাছ আনা হল। ভারি যত্ন করে মিষ্টিপরী সেগুলো নিজহাতে লাগালেন। এই দেখ , কদিন পেরোতে না পেরোতেই দেখ ফুলগাছগুলো কেমন হেসে উঠেছে । ফুল ফুটেছে সপ্তাহ পেরোতে না পেরোতেই। গন্ধে মৌ মৌ করে গোটা পরীরাজ্য।
এদিকে পরীরাজ্য থেকে নির্বাসিত হয়ে দুষ্টপরী গিয়ে ঠাই নিলো ডাইনি বুড়ির আস্তানায়।
সেখান থেকে রোজ রোজ জাদুর আয়নায় মিষ্টিপরীর বাগান দেখে আর হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরে।
ডাইনিকে বলে , এর একটা বিহিত তোমাই করতেই হবে।
শুনে দুষ্ট ডাইনিটা তার কালসিটে দাঁত বের করে খিল খিল করে হেসে উঠে।
বলে ,ভাবিসনারে দুষ্টু। ফন্দি আমি ঠিকই এটে রেখেছি!
: কি ফন্দি ?
: সামনে তো পূর্ণিমারে ,দিঘীর পাড়ে যাবে রাজ্যের যত পরী।
: তো কি হয়েছে ? আমি তো আর এই ফাঁকে গিয়ে বাগানটা মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে আসতে পারবনা। ওই বাগানতো জাদু দিয়ে ঘেরা ,ঢুকতেই পারবনা।
শুনে ডাইনি বুড়ি আবার খিল খিল করে হাসে।
তারপর বলে , এই বুদ্ধি তোর ঘটে ! শোন তবে বলছি ফন্দি খোলে ।
: তাই বল।
: চাঁদের দিঘিতে ঠিক মাঝরাত্তিরে যেখানে চাঁদের ছায়াটা পড়ে ? ঠিক তার নিচে আছে মস্ত এক পাতালপুরী। পাতালপুরীই আছে কেবল ,মানুষজন্যি নেই। আমার ভাইপো ,দুমাথা খোক্কস সব খেয়ে সাবাড় করে দিয়েছে।
: সেসব জেনে আমি করব ?
: আরে শোন না। আসছে চাঁদের হাটে তুইইও ভাল পরীটির মত নেমে যাবে দীঘির জলে। সেখানে ভুলিয়ে ভালিয়ে মিষ্টিপরীকে দিঘীর মাঝটাতে নিয়ে এক ডুবে চলে যাবি পাতালপুরী। সেখানে মিষ্টিপরীকে বন্দি করে চাবিটা আমার ভাইপো দুমাথা খোক্কসকে দিয়ে আসবি।
বুড়ির কূটবুদ্ধিতে ভারি খুশি হয়ে উঠে দুষ্টপরী। মাঝরাত্তিরে দুষ্টপরীর আর ডাইনির খিল খিল সর্বনাশা হাসি গুহার এদিক ওদিক হুটোপুটি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
দেখতে দেখতে এসে গেল জ্যোৎস্না হাটের রাত। রাত্রি যখন মধ্য ,চাঁদটা বেশ করে খিলখিলিয়ে হেসে উঠেছে কেবল। ঠিক সেসময় ,মেঘের ভেলা চড়ে পাখায় ভর দিয়ে দিঘির পাড়ে নেমে এলো পরীরা দলে দলে।
লাল ,নীল ,সাদা ,মখমলে ,ঝলমলে কত রঙেরই না পরী। কেউবা জ্যোৎস্না মেখে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে আবার কেউবা হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে এদিক ওদিক।
একদল পরী তো দিঘির জলেই নেমে গেল নাইতে।
মিষ্টি পরীর এসব হৈ হুল্লোড় মোটেই ভাল লাগেনা। দিঘির পাড়ে একটা ভারি সুন্দর ফুলগাছ দেখে ভাবছিল এটা পরীরাজ্যে নিয়ে গেলে কেমন হয়।
এমন সময় দুষ্ট পরী এসে হাজির ।
বলে , কি করছিস রে মিষ্টি ?
: দেখনা দুষ্ট ফুলটা ভারি সুন্দর না ?
দুষ্টপরীর কি ফুলগাছ দেখার মন আছে ? তারপেটে তো তখন কূটবুদ্ধির চাল চলছে।
সে বলে , এর আর এমন কি সুন্দর! আমি একটা জায়গা চিনি ওখানে গেলে ভারি চমৎকার চমৎকার ফুল গাছ পাবি।
মিষ্টি পরী কিনা খুব সরল। সে ভাবল দুষ্টটা তাকে সত্যি কথাই বলছে।
তাই বলল , কোথার রে সে জায়গা ? চলনা দেখি।
দুষ্টপরীকে আর পায়কে তখন। মিষ্টিপরীকে ফুসলিয়ে নিয়ে নামল দিঘির জলে। সাতরে সাতরে চলে এলো দিঘির ঠিক মাঝখানে ,যেখানে চাঁদের ছায়াটা ঝলমল করছে আর ঢেউয়ের দোলায় দোলনায় দুলছে।
আর তারপরই মিষ্টিপরীর চুলের গোছা ধরে এক ডুব ,সোজা পাতাল পুরীতে গিয়ে হাজির।
জনমানবশূন্য থমথমে পাতালপুরীর একটা ঘরে মিষ্টি পরীকে আটকে দুষ্টপরী আবার চলে এলো চাঁদের দিঘির পাড়ে।
কাকপক্ষীটিও জানলনা যে কি সর্বনেশে কাণ্ডটা ঘটে গেল।
এদিকে চাঁদটা হেসে হেসে ক্লান্ত হয়ে রোদের কাঁথামুড়ি দিয়ে ঘুমোবার তোড়জোড় করতেই পরীদের হৈহুল্লোরও থেমে গেল।
সবাই যখন মেঘের ভেলায় চড়তে যাবে ঠিক তখুনি পরী রানী বললেন , মিষ্টি পরী কোথায় ?
—
গল্পের দ্বিতীয় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।