এখনকার চাকরিতে পয়সা একটু বেশি পাচ্ছি। শ্রীরাধা বলে যাচ্ছে, আওয়ার্সও বেশি দিচ্ছে। রেন্ট দিয়ে, খেয়েপরে সঞ্চয় ভালই হবে। ভবিষ্যতে একটা অ্যাপার্টমেন্ট কেনার স্বপ্ন দেখছি। কিছু বলছ না যে!
ভাল শ্রীরাধা, মহিব হেসে বলল, কিন্তু তুমি কি আর বিয়ে করবে না? আই মীন বাচ্চাকাচ্চা?
আগে নিজে বাঁচি, তারপর বাচ্চা।
তুমি নিজ দেশে, আই মীন শ্রীলংকায় ফিরে যাচ্ছ না কেন?
কার কাছে? আমার বাবা-মা বেঁচে নেই। শুধুমাত্র একবোন আছে আমার, সে স্বামীর সাথে জেদ্দায় থাকে। স্বামী সেখানে একটা কোম্পানিতে ইঞ্জিনিয়ার। সারাক্ষণ তো কেবল আমার কথাই বললাম। তোমার কথা তো কখনো শুনলাম না মহিব।
আমার কথা নেই। রসকষহীন জীবনের কথা থাকতে পারে না।
জীবন জীবনই। এর অনেক কথা থাকে। বলে হেসে ফেলল শ্রীরাধা, দার্শনিকের মতো কথা বললাম না!
হ্যাঁ, বলেছ।
বলছ বলেছি! বেশ, এখন থেকে আমি দার্শনিক।
আর আমি একটা কাঠখোট্টা বেরসিক আদমসন্তান।
মোটেও না। তুমি বেশ লাইভলি, আর অবশ্যই হ্যাণ্ডসাম। শ্রীরাধার গালে এক ঝলক রক্তিম আভা খেলে মিলিয়ে গেল আবার। বলল, মহিব। তোমার গল্প কিন্তু একদিন শুনব। আজ তবে উঠা যাক।
শ্রীরাধার শিফটিং ডিউটি, মহিবেরও তাই। সুতরাং দু’জনরেই সহসা আর দেখা হয়নি। সেদিন মহিব সিসিটিভির সামনে বসে ছিল। দুই চোখের পাতা বন্ধ। না, ঘুমোচ্ছে না সে। সিসিটিভির পর্দা তার অসহ্য লাগে ইদানিং। মনে হয় এর মতো একঘেয়ে কাজ দুনিয়াতে আর দ্বিতীয়টি নেই। একটা ফোন এল। চোখ বুজেই ফোন ধরল সে – আলফা টেন। হোটেল সেভেন্টি ফোর। মহিব স্পিকিং, হাউ মে আই হেল্প ইয়্যূ?
স্ক্যুজুলিং কোর্ডিনেটর হ্যালকন বলছি। তোমার নতুন স্কেজ্যুল করতে হয়েছে আমাকে। কাল তোমার রেস্ট। পরশু থেকে নতুন স্থানে জয়েন করবে তুমি। ইয়র্ক ক্যাম্পাস। নতুন স্কেজ্যুল তোমার ইমেইল অ্যাড্রেসে পাঠিয়ে দিয়েছি।
ঠাস করে রিসিভার রাখে মহিব। এই ঠাণ্ডার মধ্যে তোরা আমাকে ক্যাম্পাসে হাওয়া খেতে পাঠাবি!
কার সাথে কথা বলছ মহিব! তুমি ঠিক আছো তো?
আরে দেখো না, আবার বদলি করে দিয়েছে। মহিব অনির্দিষ্টভাবে কথাটা বলে মুহূর্তেই সচকিত হল, আরে তুমি!
ওর নিঃশব্দ উপস্থিতি, মহিবের স্লো রিফ্লেকশন – এসবের মধ্যে শ্রীরাধা মহিবের অসহায় সত্তাকে আবিষ্কার করে ফেলল এক লহমায়। শ্রীরাধার চোখ ছলছল করছে। মহিব বলল, বলো তো তোমাকে কোথায় বসতে দিই। এই দেখনা ব্যাটাদের কাজকারবার। খালি বদলি আর বদলি। সে যাক, বল কী উদ্দেশ্যে আগমন? কোনো সমস্যা হয়নি তো?
হয়েছে। তোমার সাথে দেখা হয়না এটাই সমস্যা। শ্রীরাধা বলল, আই লাভ ইয়্যূ মহিব। শ্রীরাধা হঠাৎ নিচু হয়ে মহিবের গালে চুমু খেল। চেয়ার ছেড়ে উঠল মহিব। কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। যেন জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে। ভদ্রতার মাপকাঠিতে কেউ কিছু উপহার দিলে, প্রতিদানে তো কিছু দিতে হয়। সেরকম একটা সাদাসিধে হিসেব করে মহিবও প্রলম্বিত চুমু বসাল শ্রীরাধার ঠোঁটে। শ্রীরাধার মুখমণ্ডলজুড়ে খেলে গেল এশিয়, বিশেষত দক্ষিণ এশিয় নারীর শতসহস্র বছরের লজ্জার স্রোত। চলে গেল শ্রীরাধা। মহিব নিজের গালে, ঠোঁটে হাত বুলিয়ে শ্রীরাধার উষ্ণ স্পর্শ বারবার অনুভব করতে থাকে।
দুইটি দিন বড় অস্থিরতায় কাটল। নতুন কর্মস্থলে যোগ দিয়ে কাজশেষে সে এল ওয়াইডব্লিওসিএতে। ওর স্থানে যে ছেলেটি এসেছে, তার সাথে চাকরির ইন্টারভিউর সময় পরিচয় হয়েছিল। ছেলেটি বেশ, নাম লেসলি। ওয়েস্ট ইণ্ডিজের। অল্পক্ষণের মধ্যেই দু’জনের খুব ভাব হয়ে গেল। মহিব বলল, আমার এক বন্ধু থাকে সেকেণ্ড ফ্লোরে। ওর সাথে দেখা করতে এসেছি। পুরোটা ভাল করে শোনেওনি লেসলি, রীতিমতো দৌড়ে এসে প্যাসেজের অটোলক খুলে দিয়ে মহিবকে ভেতরে ঢোকাল।
মহিব ২০৩ কক্ষে নক করল। দরজা খুলল রোজমেরি। চোখে ঘুম ঘুম ভাব। মহিব বলল, হাই রোজমেরি। তোমার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটালাম নাকি?
না, উঠেছি আগেই। কিন্তু রাতে ঠিকমতো ঘুম হয়নি, তাই এখন আবার ঘুম পাচ্ছে। তুমি কি ভেতরে বসবে?
হ্যাঁ, আজ বসতে পারি। কারণ এখন আমি ডিউটিতে নেই। আর এখান থেকেও বদলি হয়ে গেছি।
শ্রীরাধা কি ডিউটিতে চলে গেছে? মহিব জিজ্ঞেস করল।
না। দিনে ওর ডিউটি থাকে না। কোথায় যেন একটা দরকারে বেরিয়েছে। এই হপ্তা ওর নাইট ডিউটি চলবে।
কখন ফিরবে শ্রীরাধা?
ফিরবে না। যেখানে গেছে সেখান থেকে নাকি সোজা ডিউটিতে চলে যাবে।
তবে তো আর দেখা হল না, বল আমি এসেছিলাম। দেখি সেলফোনে কথা বলব। আজ উঠি।
গল্পের শেষ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।