থিসলডাউনের প্রহরী–হাসান জাহিদঃঅষ্টম পর্ব

 

শাওয়ার সেরে মহিব দুপুরের খাবার খেয়ে কম্পিউটারে বসল মেইল চেক করার জন্য। নতুন কোনো মেইল নেই। শ্রীরাধা নামটা লিখে গুগলে সার্চ দিল। যে ক’টি শ্রীরাধা এল তারা কেউ ওর চেনা শ্রীরাধা নয়। বুঝতে পারে কোনো বিষয়ে সে অস্থির। বিষয়টা কী, কেনই বা অস্থির সেটা বুঝে উঠতে পারছে না।

ওয়েবক্যামে কথা বলার সময় দুইপ্রান্তের ছবি যেমন স্লো মোশনে দেখা যায়, সিসিটিভির দৃশ্যগুলো অনেকটা তেমন। এ এক মজার খেলা। বিশাল লম্বাটে ষষ্ঠতলা ভবনের কোথায় কী হচ্ছে সব সে দেখতে পাচ্ছে এই ক্ষুদ্র কক্ষে বসে। ভাগ্যিস ওয়াশরুম আর বসবাসের কক্ষগুলোতে ক্যামেরা লাগানো নেই! রাত এগারোটায় মহিব মনিটরে সেকেণ্ড ফ্লোরের ২০৩ নম্বর কক্ষের দরজার দৃশ্য ফুলস্ক্রিনে আনল। এই কক্ষটিকে বা গোটা সেকেণ্ড ফ্লোরটাকে এভাবে মনোযোগ দিয়ে আগে কখনো দেখেনি সে। প্রতিটি ফ্লোরের প্যাসেজ একনজর দেখার পর আর খুঁটিয়ে না দেখলেও চলে। একটু আগে ফ্রন্ট ড্রাইভওয়ে দিয়ে এক যুবককে ঢুকতে দেখেছে মহিব। কোনো মহিলা বা তরুণীর সাক্ষাৎপ্রার্থী। মহিব একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল স্ক্রিনের দিকে। কক্ষের দরজাটা একটু নড়ে উঠল বলে মনে হল। দরজাটা এমনভাবে নড়ছে মনে হল ঘরের ভেতর থেকে কেউ বের হবে কিনা, সে বিষয়ে যেন দ্বিধাগ্রস্ত।

এ আবার কোন্‌ আজব খেলা! মহিব সেকেণ্ড ফ্লোরের দৃশ্যটা সরিয়ে এবার ফ্রন্ট ড্রাইভওয়েতে এল। যুবকটি ড্রাইভওয়েতে নেই। দৃশ্য পরিবর্তন করল মহিব। যুবক ইতিমধ্যে ভেতরে ঢুকে প্যাসেজের অটোলক দরজায় এসে অপেক্ষা করছে। মহিব ফের সেকেণ্ড ফ্লোর নিয়ে এল স্ক্রিনে। ২০৩ কক্ষের দরজা দিয়ে বের হচ্ছে শ্রীরাধা! সাথে ওর বান্ধবী, যার নাম রোজমেরি বলে জানিয়েছে শ্রীরাধা। যুবকটি তবে ২০৩ নম্বর কক্ষের বাসিন্দার সাক্ষাৎপ্রার্থী! কিন্তু কার? রোজমেরি না শ্রীরাধার? মহিবের কাছে এই সাইট হচ্ছে স্রেফ কামকেলী কেন্দ্র। আর এই কেন্দ্রের যুবতী ও প্রৌঢ়াগণ নির্বিবাদে যেন বহিরাগতদের সাথে কামলীলা সারতে পারে, তার নিষচয়তা বিধানের সার্বিক দায়িত্ব বর্তেছে মহিবের ওপর। থিসলডাউনে চোর-ছ্যাঁচড়ের উৎপাত ছিল, ঝুঁকি ছিল। তবুও সেটা এই কামকলা চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্রের চাইতে শতগুণ উৎকৃষ্ট অ মানসম্মত ছিল, মহিবের তাতে কোনো সন্দেহে নেই। স্ক্রিনে একটা পরিবর্তন দেখে নড়েচড়ে বস এমহিব। শ্রীরাধা আর রোজমেরি সেই যুবককে নিয়ে তাদের কক্ষে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। ঘেন্না, ঘেন্না। মহিবের শরীরজুড়ে খেলে গেল বিবমিষার স্রোত। মহিব সিসিটিভির সামনে থেকে সরে গিয়ে টহল দেয়ার সিদ্ধান্ত নিল এবং ইচ্ছে করেই সেকেণ্ড ফ্লোর থেকে শুরু করল টহল। একটা সময় খুলে গেল ২০৩ কক্ষের দরজা। তিনটি প্রাণীকে দেখা গেল – সেই যুবক, শ্রীরাধা আর রোজমেরি। আড়চোখে একবার হাতের ঘড়িটা দেখে নিল মহিব – মাত্র সোয়া বারোটা! দোলায়মানচিত্তে ভাবল, এর মধ্যেই কাজ সারা গেল! মহিব প্যাসেজের বাঁক অতিক্রম করে অন্যদিকে চলে যাচ্ছিল। শ্রীরাধা ওকে ডাকল। মহিব এগিয়ে আসতে শ্রীরাধা পরিচয় করিয়ে দিল – আমার বান্ধবী রোজমেরি। আর ও হচ্ছে ডেভিড। রোজমেরির ছোটভাই। রায়ারসন য়্যূনিভার্সিটিতে পড়ে। খুব ব্রিলিয়্যান্ট। রোজমেরি বলল, শ্রীরাধার কাছে তোমার কথা অনেক শুনেছি।

ধন্যবাদ রোজমেরি, বলে মহিব হাত বাড়ায় ডেভিডের দিকে, নাইস মিটিং ইয়্যূ। ডেভিডও হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, তুমি এখানে সিকিউরিটি অফিসার? প্রত্যুত্তরে হাসল এবং ঘাড় নাড়ল মহিব।

মহিব একটু কফি খেয়ে যাবে? কাল আমার ডিউটি নেই। শ্রীরাধা বলল।

এই কাজটি পারব না। মহিব বলল, আমি সিকিউরিটি গার্ড। প্রটোকলের মধ্যে পড়েনা।

একবার এলে কিছু আসে যাবে না, রোজমেরি বলল।

সরি রোজমেরি, সম্ভব না। বলে মহিব সেকেণ্ড ফ্লোরের অন্যপ্রান্তে চলল। শুনতে পেল রোজমেরি বলছে – রাত জাগবে না ডেভিড। শরীরের প্রতি খেয়াল রেখো।

শ্রীরাধাকে ঘিরে মহিবের ভাবনাগুলো ফের ডানা মেলল। সেদিন হঠাৎ শ্রীরাধা এসে মহিবের কক্ষে হাজিরা দিল। মহিব বলল, এনিথিং রং শ্রীরাধা?

নো। তোমার সাথে দেখা করতে আসতে পারি না? চলো আজ একসাথে কফি খাব। একটু আগেই বের হব, তোমার সাথে কথা বলে তারপর কাজে চলে যাব আমি আর তুমি চলে যাবে বাসায়।

শ্রীরাধার কথা শুনে মহিব স্বস্তি পেলেও বিভ্রান্তও হল কিছুটা। শ্রীরাধা জানাল, দিনগুলো ভালই কাটছে তার। সে এখন অভিশাপমুক্ত। আসছে মাসে অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নেবে। জেইয়া নামের অচ্ছুতের ছায়াও আর মাড়াবেনা এজীবনে। মহিব ভাবছিল, শ্রীরাধার এরকম র‍্যাডিকেল পরিবর্তন। স্বপ্নভঙ্গের পিঠেপিঠি আবার বড় স্বপ্ন দেখতে সময় লাগে। মানসিক স্থিতাবস্থায় পৌঁছুতেও তো সময় লাগে!

গল্পের নবম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!