তা ভাবছি বৈকি, তোমাদেরকে দেখে কখনো মনে হয়নি তোমাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবে।
সে অনেক লম্বা কাহিনি। জেইয়া তোমার বন্ধু। সবকিছু বললে তোমার মন বিগড়ে যাবে। তারচেয়ে সে তোমার বন্ধু, বন্ধু হয়েই থাকুক।
তুমিও তো আমার বন্ধু। জেইয়ার সাথে পরিচয়ের পর্বে তোমার সাথেও তো পরিচয় হয়েছে আমার। জেইয়া স্টোরে ব্যস্ত থাকত। কথা তো বেশি হত তোমার সাথেই।
তা ঠিক, তাহলে সামান্য বলি তোমাকে। জেইয়া ড্রাগ নিত। যত রকমের ড্রাগ আছে, সে নিত। বহুবার বারণ করেছি, শোনেনি। কনভেনিয়েন্সটাকে ঘিরে ওর যত বন্ধু তুমি দেখেছ, তারা সবাই অ্যাডিক্টেড। তোমার সাইটের পেছনের জংলাস্থানটা ছিল ওদের আড্ডাখানা। কয়েকবারই পুলিস সেখানে হানা দিয়েছিল। একবার জেইয়াকে ধরেও নিয়ে যায়। আজেবাজে বন্ধুদের কারণে ওর স্টোর ভাল চলছিল না। আমি কয়েন ওয়াশ লণ্ড্রিতে কাজ করে সংসার চালাতাম। বহুবার বলেছি, দোকান বিক্রি করে তুমি কোনো কাজে ঢুকে পড়। সে শুনলই না। ওর বন্ধুরাই দোকান থেকে এটাসেটা সরিয়ে ফেলত। পাশের সেলুনের ক্রিস্টোফার নিজ চোখে দেখে এসব জানাত আমাকে। জেইয়াকে এসব বললে সে খেপে যেত। ওর ড্রাগ অ্যাডিক্ট বন্ধুরা ওর কাছে রীতিমতো সাধুপুরুষ। সে গাড়িটা বিক্রি করে দিল। কিছুদিন পর নজর পড়ল আমার গাড়ির দিকে। আমাকে বলল যে কিছু চালু আইটেম দোকানে তুলবে। দোকানটাকে নতুনভাবে সাজাবে। রাজি না হয়ে উপায় ছিল না। তারপর তো সে আমার গাড়িও বিক্রি করল। কিন্তু দোকানের কোনো উন্নতি দেখলাম না। এরমধ্যে এক বৃষ্টির রাতে দোকানে ডাকাতি হয়ে গেল। দু’জন কালো নাকি খরিদ্দারের বেশে দোকানে ঢুকে, ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে জেইয়ার বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে সব নিয়ে গেছে। ছোট্ট দোকানের ভেতরে বৃষ্টির জনশূন্য রাতে এমনভাবে ব্যাপারটা ঘটে গেল যে কেউ টের পেল না। শুনে কেঁদে ফেললাম। জেইয়ার চোখ লাল হয়ে ছিল সে রাতে। ড্রাগের প্রভাবে ওকে দেখাচ্ছিল দানবের মতো।
তুমি আমার সব শেষ করে দিয়েছ – এসব বলে আমি দেয়ালে মাথা ঠুকতে লাগলাম। জেইয়া আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে থাকল। বললাম, দোকানে ডাকাতি হল, পুলিস এল, চলেও গেল। আর তুমি তোমার জানের দোস্তদের নিয়ে গাঁজায় দম দিলে। আজ রাতে এই কাজটা তুমি না করলে পারতে না? বিশ্বাস করবে না মহিব, জেইয়া স্পেনদেশিয় ষাঁড়ের মতো ছুটে এল আমার দিকে। তারপর… তারপর সে আমাকে পেটাল!
মহিব মাথা নত করে শুনে যাচ্ছিল। এবার তাকাল শ্রীরাধার দিকে। মেয়েটার দুই গণ্ড বেয়ে অশ্রু ঝরছিল। মহিব বলল, তাহলে এই! একটু ভেবে মহিব আবার বলল, কী জানি হয়তো এটাই সমাধান। গড নোজ। তুমি এখন কোথায় যাবে? এগিয়ে দেবো তোমাকে?
না। বাস এখান থেকে সোজা বার্গামট অ্যাভিনিউর ওয়াইডব্লিউসিএ’র সামনে থামবে। ওখানেই উঠেছি আপাতত।
বার্গামট অ্যভিনিউর ওয়াইডব্লিউসি’এ! সেখানেই তো আমার পোস্টিং। ওখানে কীভাবে আছো, আই মীন ওটা তো বার্গামট অ্যাভিনিউর ওয়াইডব্লিউসিএ। বেশ এক্সপেনসিভ। তাছাড়া ক্রিশ্চান…।
আমার বান্ধবী রোজমেরি সেখানে একটা স্যুইটে একা থাকে। আপাতত ওর সাথে শেয়ার করছি। পরে অন্য কোথাও উঠে যাব।
তোমার কোনো কাজে লাগতে পারলে খুশি হব।
তোমার ডিউটি কি রাতে?
হ্যাঁ, সারারাত।
তাহলে আর কী, তোমাকে জানাব তেমন কোনো দরকার পড়লে।
অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে আসতে আসতে মহিব ভাবল, শ্রীরাধাকেও তবে পাহারা দিতে হবে। সেই শ্রীরাধা! অ্যাক্সিডেন্ট। নার্ভাস শ্রীরাধা। তারপর হাস্যোজ্জ্বল শ্রীরাধা। এখন কক্ষচ্যুত!
ঘুম ভেঙে অবাক হল মহিব। দুইটি কারণে। ঘরটা ফর্সা লাগছে। বাইরে তাকিয়ে দেখল সূর্য সোনা ঝরাচ্ছে প্রকৃতিতে। জমাট শাদা বরফের ওপর সূর্যের আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে অজস্র রঙে। ওর অবাক হবার দ্বিতীয় কারণটি হল রাতে বিরতিহীন তৃপ্তিকর নিদ্রা হয়েছে। এমন আরামদায়ক নিদ্রা কি শ্রীরাধার সাথে শিহরণ জাগানিয়া সঙ্গলাভের কারণে?
দীর্ঘক্ষণ ধরে শাওয়ার নিল মহিব। ডিউটিতে রওনা দিতে হবে পাঁচতায়। সন্ধ্যে সাতটা থেকে কাজ শুরু। ঠাণ্ডা তাড়াতে দ্রুত হেঁটে সাবওয়ে স্টেশনে যাবে। ট্রেনে উঠে রয়ালিয়র্ক পর্যন্ত নিশ্চিন্ত বসে থাকা। রয়ালিয়র্কে নেমে স্টেশনের ভেতরেই অবস্থান করে কাচের ভেতর দিয়ে ইপ্সিত বাসটা আসতে দেখতে পেলে এক দৌড়ে বাইরে এসে বাসে উঠে যাবে। চল্লিশ মিনিটের বাসভ্রমণের সময়টায় ঠাসা গরম কাপড়ে ঘেমে নেয়ে উঠতে হয়। বাসের ভেতরটা উষ্ণ থাকে হিটিং-এর কারণে। বাসে উঠে মহিব সাধারণত কানের উলের টুপি খুলে ফেলে। কিন্তু ডাবল মোজায় জুতোর ভেতরে পা দু’ট গরম হয়ে অস্থির করে তোলে। সমস্যাগুলো থেকে কী করে যে উত্তরণ ঘটবে সে বুঝে উঠতে পারে না।