থিসলডাউনের প্রহরী–হাসান জাহিদঃষষ্টম পর্ব

সাইট বদল হবার পর শ্রীরাধার কথা ক’দিন খুব খেলল মাথায়। এরপর স্তিমিত হয়ে গেল। এই বিদঘুটে কালো মেয়েগুলোর পাশে শ্রীরাধাকে দাঁড় করালে মনে হবে আফ্রিকার গহিন জঙ্গলে জংলি পরিবেষ্টিত হয়ে শ্রীরাধা ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ বলে আর্তনাদ করছে। এইসব চূর্ণকুন্তল ভাবনাগুলো মহিবকে একদিন টেনে নিয়ে এল পুরনো সাইটে। এক ডে-অফে মহিব হাজির হল থিসলডাউনে। বেলা তিনটা, প্রখর সূর্য। কনস্ট্রাকশন সাইটের একপ্রান্তে দুইজন লোক একমনে কাজ করে যাচ্ছে। দেখা হয়ে গেল আইভান ডাইলালোভের সাথে। তরুণ, ফর্সা ও লম্বা। সুদর্শন। ইউক্রেনিয়। আইভান ওকে দেখে যুগপৎ উচ্ছ্বসিত ও বিস্মিত হল। ইতিহাসের কুখ্যাত ‘আইভান দ্য টেরিবল’ নামেই মহিব ওকে ডাকত। শিফটিং-এর সময় ওদের দেখা হত। একরাতে দু’জনের একইসাথে ডিউটি পড়েছিল। সেরাতে ওরা গল্প করে কাটিয়েছিল। আইভান বলল, কী ব্যাপার মহিব, কোনো কাজ পড়ল নাকি এখানে?

না, কোনো কাজ নয়। সাইটটার প্রতি মায়া পড়ে গেছে।

চা খাবে?

খাওয়া যায়। তবে তার আগে জেইয়ার সাথে একটু দেখা করে আসি।

জেইয়া, ইউ মিন…।

ওই যে কনভেনিয়েন্সটা চালায় যে লোকটা।

তাই বলো। কিন্তু সে তো দোকান চালায় না আর। দোকান তো অনেকদিন যাবৎ বন্ধ দেখছি।

কেন! ওর কোনো বিপদ?

শুনেছি ওর ওয়াইফ..।

শ্রীরাধা। নামটা বেরিয়ে আসে মহিবের মুখ দিয়ে।

তুমি দেখছি ওর ওয়াইফের নাম জানো!

এই আরকি। মানে জেইয়া আমার বন্ধু তো, তাছাড়া আমরা সাউথ এশিয়ান। কিন্তু কী হয়েছে ওর ওয়াইফের?

শুনেছি ওয়াইফ নাকি সিংহলে চলে গেছে।

চলে গেছে মানে!

পোস্টে ফিরে চা বানাতে বানাতে আইভান বলল, আমি বেশি কিছু জানি না। শুনেছি চলে গেছে। আইভান চা বাড়িয়ে দিল মহিবের দিকে। দু-এক চুমুক দিয়ে উঠে পড়ল মহিব। নিজে একজন সিকিউরিটি অফিসার হিসেবে জানে আইভানের সীমাবদ্ধতা। বন্ধুকে পেয়ে বাইরের ডিউটি ছেড়ে পোস্টে এসে চা বানিয়েছে আইভান। মহিব বলল, সেলফোনে যোগাযোগ রেখো আইভান।

রাখব। হঠাৎ এমন অফ হয়ে গেলে যে মহিব? আমার কিন্তু সময় আছে হাতে আরো কিছুক্ষণ কথা বলা যেত।

না, থাক। আজ আর না। মহিব নিজের অবস্থাটা আরো মেলে দিল।

তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে ছিল আইভান। বলল, মহিব তোমাকে আনমনা দেখাচ্ছে। মহিব হাসল। বলল, তেমন কিছু না। আসলে সিকিউরিটির কাজ করে বোর্‌ড হয়ে গেছি। জানোই তো একা থাকি এদেশে। মাঝেমধ্যে দমে যায় মনটা।

আইভানের ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা, তার চোখ আরো শাণিত হল। বলল, ইয়্যূ নিড আ ওয়াইফ।

ওয়াইফ! মহিব আকাশ থেকে পড়ল। তারপর হেসে উঠল, ও ওয়াইফ।

তোমাকে রিড করতে পারছি মহিব। এভাবে চললে আর কিছুদিন পর মরে যাবে তুমি। তুমিই তো বলেছ পৃথিবীতে তোমার কেউ নেই।

ধন্যবাদ আইভান। কিন্তু…।

ওকে মহিব, ইয়্যূ ডিসাইড।

ফেরার সময় আইভানের কথাগুলো ঘুরপাক খাচ্ছিল মনে। থিসলডাউনের সেই কাচঘেরা বাসস্টপ পার হচ্ছিল মহিব, এসময় ডাকটা শুনতে পেল। এক তরুণী দাঁড়িয়ে ছিল কাচঘেরা ঘরে। এই তরুণীর ওকে ডাকবার কথা না। ভুল শুনেছে ভেবে চলে যাচ্ছিল মহিব। আবার ডাক শুনতে পেল। তাকাল মহিব, জোব্বাজাব্বা গায়ে তরুণী কাছিয়ে আসতেই মহিব চিনতে পারল। শ্রীরাধা! মিষ্টি মুখটা গরম টুপিতে প্রায় ঢাকা। ওর ঘন পাঁপড়ি ছাওয়া চোখে কৌতুকমেশানো বিস্ময়, মহিব তুমি এখানে! তুমি না বদলি হয়ে গেছ?

পুরনো স্থানটা দেখতে মন চাইল। তাই এসেছিলাম। কিন্তু তুমি এখানে কী করছ?

এখানকার নো-ফ্রিল্‌সে কাজ নিয়েছি। ডিউটি শেষ, বাসের জন্য অপেক্ষা করছি।

তোমার গাড়ি?

গাড়িটা এখন নেই।

তোমার সময় হবে শ্রীরাধা? কফিটাইমে একটু বসতে চাই তোমার সাথে। যদি…।

শ্রীরাধা ঘড়ি দেখল। তারপর বলল, বসা যায়। আমার তো ডিউটি শেষ। একটু পরেই না হয় ফিরব বাসায়।

শ্রীরাধাকে সাথে নিয়ে কফিটাইমে ঢুকল মহিব। শ্রীরাধার জন্য ডাবল-ডাবল আর নিজের জন্য ব্ল্যাক কফি নিয়ে শ্রীরাধার মুখোমুখি বসল মহিব। শ্রীরাধাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে। মহিব কফিতে চুমুক দিয়ে ভাবল কীভাবে কথা শুরু করবে। শ্রীরাধা কফিতে চুমুক দিল না। কফি আগলে বসে রইল। শ্রীরাধা বলল, তুমি তো জেইয়ার স্টোর বন্ধ পেয়েছো, কেন তা জানো?

কলিগ আইভান বলেছে দোকানটা বন্ধ, কিন্তু কেন বন্ধ তা জানিনা।

আইভান বলেনি তোমাকে?

বলেছে, যা বলেছে সেটা আমার কাছে গোলমেলে মনে হচ্ছে। তোমাদের মধ্যে কি কিছু ঘটে গেছে?

হ্যাঁ মহিব। আমাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। আরো আগে হলে ভাল হত। ভাবছ কেন ছাড়াছাড়ি হল?

গল্পের সপ্তম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!