তেহামার যুদ্ধে সাহাবা (রাঃ) দের ক্ষুধার কষ্ট সহ্য করা
হযরত আবু খুনাইস (রাঃ) তেহামার যুদ্ধে রাসূল (সাঃ)-এর সহিত ছিলেন। তিনি বলেন, যখন আমরা উসফান নামক স্থানে পৌঁছিলাম তখন সাহাবা (রাঃ) রাসূল (সাঃ)-এর খেদমতে হাজির হইয়া আরজ করিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ক্ষুধা আমাদিগকে দুর্বল করিয়া দিয়াছে, সওয়ারীর জানোয়ার জবাই করিয়া খাওয়ার জন্য আমাদিগকে অনুমতি প্রদান করুন।
তিনি বলিলেন, আচ্ছা, ঠিক আছে। হযরত ওমর (রাঃ) এই খবর পাইয়া নবী কারীম (সাঃ)-এর নিকট আসিয়া বলিলেন, হে আল্লাহর নবী, আপনি ইহা কি করিলেন? আপনি লোকদেরকে সাওয়ারীর জানোয়ার জবাই করিয়া খাইতে আদেশ করিয়াছেন।
(এরূপ করিলে তো সাওয়ারীর জানোয়ার শেষ হইয়া যাইবে) তখন তাহারা কিসের উপর সাওয়ার হইবে? রাসূল (সাঃ) বলিলেন, হে ইবনে খাত্তাব, তোমার কি রায়? হযরত ওমর (রাঃ) বলিলেন, আমার রায় এই যে, আপনি লোকদেরকে বলুন, যাহার নিকট যাহা কিছু অবশিষ্ট খাদ্য রসদ আছে তাহা আনিয়া একটি পাত্রে জমা করুক। অতঃপর আপনি তাহাদের জন্য বরকতের দোয়া করুন।
নবী কারীম (সাঃ) লোকদেরকে ইহার আদেশ করিলেন। তাহারা নিজেদের নিকট যাহা কিছু অবশিষ্ট ছিল আনিয়া একটি পাত্রে ঢালিয়া দিলেন। অতঃপর তিনি দোয়া করিলেন এবং বলিলেন, তোমরা নিজ নিজ পাত্র লইয়া আস। সকলেই নিজ নিজ পাত্র ভরিয়া সেখান হইতে লইয়া গেলেন। অতঃপর বর্ণনাকারী পূর্ণ হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন।
হযরত ওমর (রাঃ) ইবনে খাত্তাব বলেন, আমরা নবী কারীম (সাঃ)-এর সহিত এক জিহাদে শরীক ছিলাম। আমরা বলিলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ, শত্রুগণ আমাদের সামনে আসিয়া গিয়াছে। তাহারা পানাহারে পূর্ণ পরিতৃপ্ত, আর আমরা ক্ষুধার্ত। আনসারগণ বলিলেন, আমরা আমাদের উট জবাই করিয়া লোকদেরকে খাওয়াইয়া দিব কি? নবী কারীম (সাঃ) বলিলেন, যাহার নিকট অবশিষ্ট খাদ্য রহিয়াছে সে যেন তাহা লইয়া আসে।
অতএব কেহ এক মুদ (অর্থাৎ ছটাক) পরিমাণ, কেহ এক সা’ (অর্থাৎ সাড়ে তিন সের) পরিমাণ, কেহ কম, কেহ বেশী লইয়া আসিল। সম্পুর্ণ সৈন্যদল হইতে যাহা কিছু জমা হইল তাহা বিশ সা’ হইতে সামান্য বেশী হইবে। নবী কারীম (সাঃ) স্তুপকৃত খাদ্যের এক পার্শ্বে বসিয়া বরকতের দোয়া করিলেন।
তারপর বলিলেন, শান্তভাবে নিজ নিজ পাত্র ভরিয়া লইয়া যাও, কাড়াকাড়ি করিও না। অতএব প্রত্যেকে নিজ নিজ থলি ভরিয়া লইয়া গেলেন, এমন কি কেহ নিজের জামার আস্তিনে গিঁট দিয়া ভরিয়া লইলেন। সকলে লইয়া যাওয়ার পর খাদ্যস্তুপ যেমন ছিল তেমনই রহিয়া গেল। অতঃপর নবী কারীম (সাঃ) বলিলেন, আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, আল্লাহ ব্যতিত কোন মাবুদ নাই এবং আমি আল্লাহর রাসূল। যে কোন বান্দা এই
কালেমা খাঁটি দিলে পড়িবে এবং আল্লাহর নিকট তাহা লইয়া হাজির হইবে, আল্লাহ তায়ালা তাহাকে দোযখের আগুন হইতে রক্ষা করিবেন।
সূত্রঃ হায়াতুস সাহাবা