তাবিজ মহিমা-শ্রীক্ষিতীন্দ্র নারায়ন ভট্টাচার্য-১ম পর্ব

ফেব্রয়ারি মাস প্রায় শেষ হইতে চলিল,হু-হু করিয়া ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা আসিয়া পড়িল।সপ্তাহ খানেক রোগে ভুগিয়া উঠিয়া সোমেশকে আজ আবার বই খুলিয়া বসিতে হইবে।জ্বরের সময় শুইয়া মনের মধ্যে কতরকম আশাই না ঘুরিয়া বেড়াইত-আর কয়েক টা দিন এই ভাবে কাটাইয়া দিতে পারিলেই এবছরের মতো পরীক্ষার হাত হইতে রেহাই পাওয়া যায়।একটা দিন চোখ বুজিয়া সাণ্ড খাইয়া কাটাইয়া তাতে তাহার আপত্তি নাই।কিন্তু হায়!সে করুন আবেদন ভগমানের কাছে পৌছাবার আগেই ডাক্তার বাবু তাহাকে ভাত খাইবার অনুমতি দিয়া ফেলিলেন।ফলে সর্বশরীরের গ্লানি ও সম্মুজখে অতি সামান্য কয়েক দিন এবং পর্বতপ্রমান অপঠিত পুস্তক লইয়া সোমশকে আবার পড়ার ঘরে ঢুকিতে হইল।বহুক্ষন জ্যামিতির লাইন পয়েন্ট সার্কেলের ভিতর ঢুকাইয়া বর্থ্য চেষ্টা করার পর সোমেশ তখন বিরক্তমুখে ব্যাকারণ কৌমুদী খুলিয়া সুর করিবার পর সোমেশ আওড়াইতেছে-গৃহ্নীয়াতম-“এমন করে সশব্দে দরজা খুলিয়া গেল;সঙ্গে সঙ্গে এক গাল পান চিবাইতে চিবাইতে তাহার পরম বন্ধু সিদ্ধেশ্বর আসিয়া ঘরে ঢুকিল এবং বিনা বাক্যব্যয়ে সোমেশের মাথার চাটি মারিতে মারিতে চলিল,“চাঁটীয়াৎ-চাঁতীয়াম,-চাঁটীইয়ুঃ-চাঁটীইয়ুঃ“সব সময়ে ইয়ার্কি ভাল লাগে না।আজ কত তারিখ খেয়াল আছে?বলিয়া সোমেশ হাতটা সরাইয়া দিল।আছে,আছে,বন্ধু আছে।কান্তু সারা বছর ফাঁকি দিয়া এখন মরন কালে জপ করে আর কি হবে!তার চাইতে বরং চল হরিপদ জ্যোতিষ্কের কাছে।পাশ হবে কি ফেল হবে জেনে আসা যাবে।গেল বছর বিষ্টুদাদা গিয়েছিল।জ্যোতিষ্কার বললেন,নিশ্চয় পাশ হইবে-বলে-হাটে এক মন্ত্রপূত বেধে দিলেন।ব্যস,বিষ্টুদা বাড়িতে এসে আর বই ছুল না-অথচ আশ্চর্য,গেজেট খুলে দেখা গেল দিব্যি থার্ড ডিবিসনে উৎরে গেছে।অতঃপর জ্যোতিষ্কের বাড়ি জাওয়াই ঠিক হইল।হরিপদ জ্যোতিষ্কের আস্তানা শিবপুরে-অনেক খানি পথ।কিন্তু খুঁজিয়া বাহির করিতে বেশী বেগ পেতে হইল না।বাড়ির সামনে লম্বা লম্বা ছাইন বোর্ড ঝুলিতেছে-তাহাতে ছোট-বড় নানা অক্ষরে অনেক কথাই লেখা আছে সব টা পড়ে উঠে যায় না।এক যায়গায় বড় বড় অক্ষরে লেখা-
উমেদারগণের মাহা সুসময়
চাকুরীর বাজারে নিষ্ফলভাবে ঘুরিয়া না বেড়াইয়া এইখানে আসুন,
জ্যোতিষ্কেরের মন্ত্রপুত তাবিজে আপনার অবশ্য চাকুরীরলাভ ঘটিবে
চাত্রগনের স্বর্ণসুযোগ
পরীক্ষায় পাশ সম্বন্ধে স্থির নিশ্চিত হইতে হইলে এইখানে আসুন।
জ্যোতিষ্কেরের অপর্ব গনাশক্তি দেখিয়া মুগ্ধ হউন।প্রতিরূপ থাকিলে তাহার বিধান করিয়া লউন।দক্ষিনা মাত্র দুই রজতচক্র।সোমেশ ও সিদ্ধের আর দ্বিরুক্তি না করিয়া ঢুকিয়া পড়িল।
সবখানা দেখিয়া মনে খুব যে বেশী সম্ভম হয় তা নয়।ঘরের এক কোনে কতগুলি তামাকের সরমজাম জড় করা-তামাক-টিকা-হুকায় মিলিয়া সেখানে এক অপর্ব সুরভীর সঞ্চার করিয়াছে।একটা তকতপোষের উপর এক খানা ধুলি-ধূসরিত চাঁদর বিছানো-সম্ভবতঃগত তিন বছর জাবত ওটা ধোঁপাবাড়ি যায়নি।দেয়ালে এক সময় বোধায় ডিস্তেম্পার এবং পয়েন্টিং করা ছিল,এখন সে সব চটিয়া ঝরিয়া পড়িয়াছে,এবং তার যায়গায় কোথাও বা পানের পিচ লাগানো হইয়াছে,কোথাও তেল বা সিন্দুর।দেয়লের এক দিকে পেন্সিল,ইটের টুকরো এবং কাঠ কয়লার সাহায্য পরিচিত লোকেদের এবং দেবদেবীর নাম ধাম ও ছোট ছেলেদের হাতে বড় বড় অক্ষরে ক,খ,গ,ঘ ইত্যাদি লেখা।হঠাৎ দেখিলে অশকের কথা মনে পড়িয়া যায়।এক কোথায় সাধারণ বাঙ্গালির বাড়ির বৈঠকখানা যেমনটা হয় জ্যোতিষ্ক মহাশয়ের বৈঠকখানাটি ঠিক তেমনি সরুচিপূর্ণ।
তক্তপোষের উপর একটি ৭/৮ বছরের মেয়ে বসিয়া সুর করিয়া নামতা প্রিতেছিল;কাহাকে না দেখিয়া তাকেই জিজ্ঞাসা করিল,“খুকি,হরিপদবাবু আছেন?”
খুকি চমকাইয়া মুখ ফিরাইল,তার পর আকর্ণ বিস্তুত করিয়া বলিল,অ্যা?
“হরিপদবাবু-হ-রি-প-দ জ্যোতিষ্কোর-যার ছাইন বোর্ড বাইরে ঝুলছে।
খুকি এইবার বুঝিতে পারিল এবং বুঝি একবারে শ্বনের উচ্চারণ করিয়া আবার ধারা পাতের দিকে মনোযোগ দিল,সিদ্ধেশ্বর আবার বলিল,বল না খুকি?খুকি বিরক্ত ভাবে জবাব দিল কব ক্যাম্বায়?সোমেত হত বুদ্ধি হইয়া সিদ্ধেস্বরের দিকে তাকাইল।সিদ্ধেশ্বর ব্যাপার বেগতিক দেখিয়া ঘুমাইয়া প্রশ্ন করিল, জ্যোতিষ্কেরের মাশাই তোমার কে হন?উত্তর করিল-মাউসা।খুকি কি ভাসায় কথা বলিতেছিস-ফরাসি,জার্মানি,হিব্রু বুঝতে না পারিয়া মহেশ কহিল,“ওহে ব্যাপার বিশেষ সুবিধার বোধ হচ্ছে না।এবার ফেরা যাক।বাড়ি গিয়ে ততক্ষন ব্যাকরণ বই পড়লে কাজ দেবে সিদ্ধিশ্বর বিচলিত না হইয়া পকেট হইতে একটা পয়সা বাহির করিয়া মেয়েটির সামনে ধরিয়া বলিল,তোমার মেসোমশাইকে যদি ডেকে দাও এই পয়সাটা টা তোমার- ।খুকি এবার টলিল- শুধু টলিল না,হঠাট উঠিয়া চিলের মতো ছোঁ মেরে মারিয়া পয়সাটা তুলিয়া ;লইয়া বাড়ির ভেতরে অদৃশ্য গেল।মিনিত খানিক পরেই খড়মের খট খট শব্দ শুনতে পাওয়া গেল এবং এক ঝলক বিশুদ্ধ নস্যের গন্ধে বৈঠক খানা আমোদিত করিয়া তুলিল।গন্ধের পিছু পিছু জ্যোতিষ্কার মাহাশয় ঢুকিলেন।জ্যোতিষী মহাশয় যে নেহাৎ হাতুড়ে জ্যোতিষী নন তাঁহার প্রথম কথা হইতে বুঝাগেল।বাবুরা বুঝি এবার মেট্রিক দেবেন?সোমেস ও সিদ্ধেশ্বর মুগ্ধ হইয়া গেল।লোকটি পণ্ডিত,আবার কেমন ভদ্র।এখনও তো তাহারা কলেজে উঠিনাই তবুও কেমন বাবু,আপনি করিয়া কথা বলিতেছে।বাঃবেশ তো!বলিল,আজ্ঞে হ্যাঁ।আমার জ্যোতিষ্কার আসিবার কারনেও কিছু জিজ্ঞাসা করিলেন না।কহিলেন,“অ্যাগজামিন ত আইয়া

গল্পের দ্বিতীয় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

দুঃখিত!