জ্বিনের ছেলে

গ্রামটা কিশোরগঞ্জের কাছাকাছি জাহাঙ্গীরপুর। সেখানে একজন মহিলা আছে যার বিয়ে নাকি জ্বিনের সাথে হয়েছে। মহিলার বাবা একজন পুরোদুস্তুর মসজিদের ইমাম। আগাগোড়া আল্লাহ ভক্ত মানুষ। তিনি গত হয়েছেন অনেক আগেই। তারপর থেকেই ঘটনা শুরু হয়। মেয়েটা কে মাঝে মাঝে গাছের ডালে বসে থাকতে দেখা যেত। মাঝ রাতে নদীর পাড়ে মেয়েটা একা একা কারো সাথে কথা বলত একা একা আর খুব জোরে জোরে হাসত। গ্রামদেশে মেয়েদের এহেন আচরণসত্যিই প্রশ্নসাপেক্ষ। অনেক কথা রটে গেল। অনেকে বলতে লাগল বাবার মৃত্যুর পর মেয়েটা নষ্ট হয়ে গেছে আরো হাবিজাবি।

অনেকে বললেন মেয়েটাকে জ্বিনে ধরেছে। যেহেতু সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে তাই ওর ভাইয়েরা জ্বিন তাড়ানোর ওঝা নিয়ে এল। ওঝা সরিষার তেল, তুতড়া পাতা আর ঝাটা চাইল। কাজ শুরুর আগেই হঠাৎ মেয়েটি পুরুষ্ঠ মোটা গলায় সবাইকে সালাম দিল। বলল, “আমি তো আপনাদের কোন ক্ষতি করিনি, ক্ষতি করার চেষ্টাও করিনি। তাহলে আমার সাথে এমন ব্যবহার করছেন কেন? আর মেয়েটির ওপর কোন ধরনের আঘাত কিংবা আঘাত করার চেষ্টা করবেন না। আমি ওকে বিয়ে করব”। পুরো এলাকাবাসী অবাক হয়ে গেল। ওঝা মেয়েটিকে সরিষার তেল নাকে ধরে বলতে থাকল, তুই যাবি কিনা বল। আর এখানে কিভাবে আসলি?জ্বিনটা বলল, আমি অনেক দূরে থাকি। একদিন এখানে এসেছিলাম কেন তা মনে নাই। তবে ওই মসজিদে একদিন জুম্মাহর নামাজ পরেছিলাম। হামিদার (ঐ মেয়েটির নাম) বাবা ইমামতি করেছিলেন। আমার ওনার খুতবা খুব ভাল লেগেছিল।

নামাজ শেষে আমি ওনার সাথে কথাও বলেছিলাম। নিজের পরিচয়দিয়েছিলাম। উনি আমাকে মেহমান হিসেবে নিয়েছিলেন। তখন থেকে এখানে প্রায়ই আসতাম। একদিন উনি আমাকে দাওয়াত করে খাওয়ালেন।যদিও খাবারের পরিমান কম ছিল,তবুও আমি রাগ করিনি। হামিদা খুব সুন্দর মহিলা।তখন থেকেই মেয়েটাকে পছন্দ করি। ইমাম সাহেব প্রথম প্রথম খুব বকা দিতেন। পরে আর দেন নাই।উনি ভাবতেন মানুষ আর জ্বিন বিয়ে হয় না।কিন্তু আমাদের অনেকেই মানুষকে বিয়ে করতে চায়। ওরা অনেক ভাল হয়। আমি জানিনা এটা যায়েয নাকি না যায়েয তবুও করব। আপনি তাড়ায়ে দিলে আবারো আসব। আমি ভাল জ্বিন। কারো ক্ষতি করতে চাইনা।আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন। আমি ওকে নিয়েই চলে যাব।ওঝা বিরক্ত গলায় বললেন,তুই এখনি যাবি।না হয়,ঘর বেধে ধুপ পুড়ানো শুরু করব, তখন এখানেই মারা যাবি। জ্বিনটা বলতে শুরু করল, আমি এখন গেলেও পরে তো আবার আসব। লাভ কি? আমাদের এক জায়গায় বেশীদিন থাকার নিয়ম নেই। আমি ওকে বিয়ে করে এখানে সবসময় থাকব।

ওঝা বলল, এটা বদ জ্বিন। উনি পরেরদিন এর ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু মেয়েটাকে এরপর আর পাওয়া যায়না। অনেক খোজা হয়।অনেক দিন পর মেয়েটা একটা বাচ্চা নিয়ে গ্রামে ফিরে আসে। নাক সিটকানো গ্রামের মানুষের কোন উত্তরই মেয়েটা দিতে দেয়নি। শুধু বলেছিল এটা ওর ছেলে। মেয়েটাকে ছেলেসহ গাছের সাথে বেধে ফেলে ওর ভাইয়েরা। সাথে সাথেই গর্জন শোনা গেল। মেয়েটা আড়ষ্ঠ গলায় বলছে ও আমার স্ত্রী। এখানে বেড়াতে এসেছে। কিছুদিন পরই চলে যাবে। কিন্তু সেদিনই ওঝা ডেকে ওকে বোতলে বন্দি করে ফেলা হয়। তওবা করানো হয় যাতে এদিকে আর না আসে। জ্বিনটা তখন চলে যায়। আর কখোনই আসে নি। মেয়েটাও নিখোঁজ হয়নি। সেই ছেলেটার এখন ১১বছর। মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে। অসম্ভব রকম ভালছাত্র। এখনই হাফেজী শেষ করে ফেলেছে। মহিলাটাকে অনেক বার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল কোথায় ছিল,বাচ্চা কিভাবে আসল। ও বরাবরের মতই চুপছিল। ছেলেটা অসম্ভব সুন্দর। ছেলেটাকে গ্রামের সবাই জ্বিনের ছেলে নামে চেনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়তে পারেন...

ভবিষ্যতের ভূত

এক মাস ধরে সমীকরণটা জ্বালিয়ে মারছিল বিজ্ঞানের শিক্ষক নেপাল চন্দ্র নাথকে। ঘুমের মধ্যে মানুষের রূপ…

ভূত না ভূতুড়ে— অমিত গাঙ্গুলী

গপ্পো টা অনেক দিন আগেকার, সেই আমার ছোট্টবেলার। তখন আমাদের শহর এতো ঝাঁ চকচকে ছিল…

রহস্য গল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

গহর মামা আমাদের খুব দুর সম্পর্কের মামা; কিন্তু আপন মামাদের থেকে তাঁর সঙ্গে আমাদের বেশি…