জোলেখার প্রেম-পর্ব ৩

জোলেখার প্রেম-পর্ব ২ -পড়তে এখানে ক্লিক করুন

জোলেখা এ ধরনের ফন্দিও চালিয়ে যেতে লাগলেন। হযরত ইউসুফ (আঃ) এর নিকট পরিবেশটি অত্যন্ত অসহ্যকর হয়ে উঠল। তিনি সর্বদা জোলেখার কবল থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করতেন।

জোলেখার বয়স তখন হযরত ইউসুফ (আঃ) এর সমান বা কিছু বেশি। কিন্তু রূপে তিনি ছিলেন সমগ্র মিশরের শ্রেষ্ঠ সুন্দরী। আজিজ মেছের তার রূপের মোহে পাগল হয়ে অনেক প্রতিযোগিতার বাধ ভেঙ্গে তাকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন। বিপুল অর্থ সম্পদ ব্যয় সাপেক্ষে তাকে লাভ করা আজিজ মেছেরের সম্ভব হয়েছিল। কথিত আছে জোলেখাকে লাভ করতে গিয়ে আজিজ মেছের এক ভয়ানক যুদ্ধের সম্মুখীন হয়েছিলেন। তখন মিশরের বাদশার অনুমোদনক্রমে সামরিক বাহিনী নিয়ে তাকে বিজয় লাভ করতে হয়েছে।

জোলেখার এহেন রূপের ঝলকে হযরত ইউসুফ (আঃ) কে আদৌ আকৃষ্ট করতে পারে নাই। ফলে জোলেখা উদাসীন ও উদভ্রান্ত অবস্থায় দিন যাপন করতে থাকে। একদিন জোলেখার এক দূরবর্তী বৃদ্ধা আত্মীয়া জোলেখার মহলে বেড়াতে আসেন। সে জোলেখার শারিরীক ও মানষিক অবস্থা দেখে বলল, “তোমার অবস্থাটা ভাল দেখছি না। মনে হয় তুমি তোমার আশ্রিত নাগরের প্রেমে আত্মহারা হয়ে পড়েছ। জোলেখা বৃদ্ধার মুখে কথাটি শুনে আর ধৈর্যের বাধ ধরে রাখতে পারলেন না। তিনি সজোরে কেঁদে দিলেন এবং বৃদ্ধার হাত ধরে বললেন, ও নানী! তুমি যেভাবে আমার মনের কথা বুঝেছ, হযরত ইউসুফ (আঃ) যদি একটি বার সেটি বুঝত তবে আমার আর জীবনে কোন দুঃখ থাকত না।

 আমি ওর প্রেমে পাগল হয়েছি। ওর রূপের নেশায় আমি জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছি। ওকে লাভ করার জন্য আমি হাজার রকম কৌশল করেছি। কিন্তু কিছুতে কিছু হল না। ওর সামান্য কৃপাদৃষ্টি লাভ করতে আমি সক্ষম হই নি। ওর মনের গভীরে আমি প্রবেশ করতে পারি নি।”

আমি মিশরের সর্বসেরা সুন্দরী বলে খ্যাতি লাভ করেছিলাম। আমার প্রতি কোন পুরুষ শুধু একবার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সরে যেতে পারেনি। আমার প্রতি মিশরের কয়েক সহস্র পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি ছিল। আমাকে লাভ করার জন্য তারা অনেকে পাগল হয়েছে, অনেকে বিপুল ধন ভাণ্ডার নিঃশেষ করে রাস্তার ফকির হয়েছে আবার অনেকে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হয়ে অসংখ্য প্রাণ নষ্ট করেছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় ইউসুফের কাছে আমি ব্যার্থ হয়েছি।

দুষ্টা বৃদ্ধা জোলেখার কথা শুনে একটু হাসল, তারপরে বলল, “পাগলিনী! উপযুক্ত কৌশল ব্যবহার করতে সক্ষম হওনি। আমরা জীবনে কতই না কিছু করেছি। আমাদের হাত থেকে কেউ ফসকিয়ে যেতে পারি নি। তখন জোলেখা বললেন, নানী! তোমার জানা থাকলে আমাকে একটা পথ করে দাও।” বৃদ্ধা বলল, “আছে পথ আছে। তবে অনেক টাকা খরচ হবে।” জোলেখা বলল, “যত খরচ হয় তা করব তবুও কার্য সিদ্ধি চাই।” বৃদ্ধা বলল, “এ সব কাজের জন্য কিছুটা কৌশলের আশ্রয় নিতে হয়। সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠে না। তোমার নাগরের এখন যৌবন কাল। এ সময় পুরুষেরা একটু অভিমানী হয়। তবে এ অভিমানের বাধ একবার ভেঙ্গে দিতে পারলে আর চিন্তা নেই। তোমার কামনার সমুদ্রে সর্বদা বইতে থাকবে তেজস্বিনী খরস্রোত। সে আর কোন দিন কোন বাধ মানবে না।

এজন্য তাঁর অভিমানের বদ্ধ দ্বারে বার বার আঘাত করে দিয়ে সুপ্ত বাসনা জাগিয়ে তুলতে হবে। তাঁর লজ্জার জবনিকা ভেদ করে প্রবাহিত করতে হবে যৌন লালসার কর্মধারা। তাঁর শিরায় শিরায় প্রবাহিত করতে হবে কামনার উষ্ণ লহু। তোমার আবরণ মুক্ত উন্নত বক্ষের আলোতে ঝলসে দিতে হবে তাঁর নয়নের রাজ। তোমার অনাবৃত দেহের উষ্ণতার ছোঁয়ায় তাঁর দেহ মনে আনতে হবে যৌন লালসা। তবেই না তোমার দেহ-মন কামজাত প্রেমের তৃপ্তি লাভ করবে।”

সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী

জোলেখার প্রেম-পর্ব ৪ -পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।