জুল করনাইন ও ইয়াজুজ মাজুজ-১ম পর্ব

জুলকারনাইনের আসল নাম সেকান্দার। আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কোরআন শরীফে জুলকারনাইনের বিশাল রাজ্য ও তাঁর কর্মতৎপরতা সম্বন্ধে বেশ কিছু বর্ণনা দিয়েছেন। জুলকারনাইনের সঠিক পরিচিতি ও তাঁর হেদায়েতের এলাকা নিয়ে অনেক মতভেদ আছে। আমরা এখানে সেই মতভেদ ফিরিস্তি উল্লেখ না করে অধিকাংশের সমর্থিত ঘটনা বিবৃত করব।

আরবী ভাষায় করন শব্দের অর্থ প্রান্ত। করনাইন অর্থ দুই প্রান্ত। আল্লাহ তা’য়ালা তাকে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত রাজ্য বিস্তারের সুযোগ দিয়েছিলেন। এজন্য তাকে জুল করনাইন অর্থাৎ দুই প্রান্তের অধিকারী বলে সম্বোধন করা হয়েছে।

হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আরবদের নিকট দ্বীনের দাওয়াত পেশ করলেন এবং নিজে কে আল্লাহর রাসূল বলে ঘোষণা করলেন তখন আরবিওরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এড়িয়ে চলার জন্য বিভিন্ন উপায় ও যুক্তি তর্কের আশ্রয় নিতে আরম্ভ করে। রাসূলকে যখন কোন যুক্তি তর্কে ঠেকাতে পারল না তখন তাদের নেতা আবু জাহেল এক ব্যক্তিকে ইয়াসরবের বিখ্যাত ইহুদী পাদ্রীর নিকট প্রেরণ করল। সে পাদ্রীর নিকট গিয়ে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নবুয়তী দাবির সত্যতা যাচাই করে আসবে। যেহেতু তৌরাত ও ইঞ্জিল কিতাবে এ সম্বদ্ধে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি রয়েছে।

 অতএব সে নিরিখে যাচাই করে কিছু তথ্য তাঁকে বলে দিবে অথবা রাসূলকে পরীক্ষা করার জন্য কোন কৌশল তাঁকে শিখিয়ে দিবে। আবু জাহেলের প্রেরিত ব্যক্তি যথাসত্তর ইয়াসরিবের পাদ্রীর নিকট চলে গেলেন এবং বিস্তারিত ঘটনা তাঁকে বলল। পাদ্রী বলল, হ্যাঁ, একজন পরাক্রমশালী নবী আরবের মরুময় প্রান্তরে আবির্ভূত হবেন তাতে সন্দেহ নেই। তবে এ ব্যক্তি সে নবী কিনা তা যাচাইয়ের জন্য তাঁকে কয়েকটি প্রশ্ন কর। যদি প্রশ্নসমূহের জবাব তৌরাত ও ইঞ্জিল কিতাবের সাথে মিলে যায় তাহলে বুঝতে হবে তিনি খাঁটি নবী।

আর যদি না মিলে তবে বুঝে নিবে সে নবুয়তীর ভুয়া দাবীদার। প্রশ্ন কয়টি হল, রুহ কি জিনিস? আসহাবে আকাফ কারা, তারা কতজন এবং তাঁদের বর্তমান অবস্থা কি? জুলকরনাইন কে ছিলেন, তাঁর জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কি ছিল? এ প্রশ্ন কয়টি লিখে পাদ্রী সে লোকটির মারফত আবু জাহেলের নিকট পাঠিয়ে দিল। আবু জাহেল প্রশ্ন কয়টি নিয়ে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পৌঁছে বলল, তুমি যদি হযরত মুছার ন্যায় নবী হয়ে থাক এবং তৌরাতের ন্যায় কিতাব যদি তোমার নিকট এসে থাকে তবে আমাদের প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর দাও।

 আমরা অন্যান্য আসমানী কিতাবের ন্যায় তোমার জবাব পেলে সকলে ইমান এনে তোমার দ্বীন কবুল করব। হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু জাহেলের কথা শুনে বললেন, আমি আগামী দিন আপনার সকল প্রশ্নের জবাব দিব। পরের দিন বিধর্মীরা রাসূল (সাঃ) এর নিকট এসে তাঁদের প্রশ্নের জবাব চাইল। রাসূল (সাঃ) উত্তর দিলেন আমি এখন পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালার নিকট থেকে কোন নির্দেশ পাই নি। নির্দেশ পেলে তোমাদেরকে জানিয়ে দেব। রাসূল (সাঃ) এর কথায় বিধর্মীরা একটু সন্দেহ পোষণ করে চলে গেল।

এরপর একাধারে এগার দিন পার হয়ে গেল। আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে অহী আসল না। এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে কাফেরেরা তাদের জবাব না পেয়ে তারা বিরূপ মন্তব্য করতে শুরু করল। কেউ কেউ রাসূল (সাঃ)-কে বলল, হে মুহাম্মদ! তোমার খোদা কি তোমাকে ছেড়ে দিয়েছ, না তোমার নবুয়তী ছিনিয়ে নিয়েছে। না হলে তুমি প্রশ্নগুলোর জবাব দিতে এত বিলম্ব করছ কেন? রাসূল (সাঃ) ধর্মদ্রোহীদের বিদ্রুপাত্যক উক্তিতে খুবই বিষণ্ণ হয়ে পড়লেন এবং আল্লাহর দরবারে আরজ করে কাফেরদের প্রশ্নের জবাব জানতে চাইলেন।

সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী  

জুল করনাইন ও ইয়াজুজ মাজুজ-২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন  

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।