গল্পের ২য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
মেঘের তুমুল হাকডাক চলছে। কিছুক্ষণ আগেই শুরু হয়েছে মাত্র। সময়ের সাথে তার গর্জনও বাড়ছে। শুরুতে দুই চার মিনিট পর পর। কোথাও যেন জড়ো হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে মেঘ। দূরে কোথাও ঘুম ভাঙছে বাকি সব মেঘেদের। একটা মেঘের ডাকের পরে দূর থেকে ভেসে আসে আরও কয়েকটি মেঘের ডাক।
মুহূর্তেই আলো এসে চলে যায়। অনেক রাত হয়েছে নিশ্চয়ই। কখন সূর্য ডুবে গেছে। পায়ে পথ চলা শুরু হয়েছে তারও আগে। সূর্য তখন ঠিক মাথার উপরে ছিল।
কিছুই দেখা যায় না। দু’এক ফোঁটা বৃষ্টি গায়ে পড়ছে। তার মানে শুরু হয়ে গেছে রিমঝিম। অত্যাধিক গরম পড়েছে। বৃষ্টি এসে তাপ বাড়িয়ে দিল। একটা পুকুরে কিছুক্ষণ ডুবে থাকলে হতো।
বৃষ্টির মাত্রা বেড়ে গেলে অবশ্য একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে। দিনের বেলা রোদে চামরা ফেটে যাচ্ছিল। সন্ধের পর কোন একটা বাজারের পাশে মনে হয় স্কুল বা মন্দিরের বট গাছ তলায় কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়া হয়েছে।
তাও কোনও খাবার দাবার ছাড়াই।
পানিটা খেতে পারলেও হতো।
মাটিতে পা ছড়িয়ে কেবল বসা হয়েছে। নিঃশ্বাসগুলো কেবল স্বাভাবিক গতি পেয়েছে সেই সময় তারা দুজনেই আসলেন। দুজনই পান চিবুচ্ছেন। এটাকে বিশ্রাম বলে? আবার শুরু হলো হাঁটা।
দু’এক ফোঁটা হতে হতে মুষল ধারায় বৃষ্টি শুরু হলো। মেঘের হাসি কান্না চলতেই আছে। মাথার উপরে কোনও মেঘ চিৎকার করে উঠলে দূরের মেঘের বিরহী ডাক শোনা যায়।
ভারী বৃষ্টির ফোঁটার আঘাত লাগছে পিঠে, চোখে, মুখে। বাঁশের ও গাছের মরা ভেজা পাতাগুলো লাগছে পায়ে। অন্ধকারে ঝিঁঝিঁ পোকাদের উৎসব চলছে। লুকিয়ে থাকা ব্যাঙেরা মেঘের ডাকে বেড়িয়েছে সাঁতারের নেশায়। সাপের সন্ত্রাসী শিকার কোনও এক ব্যাঙের করুণ চিৎকার ভেসে আসছে।
সে সময় চারটি মহিষ বিদ্যুতের ঝলকানি আলোয় পেছন ফিরে তাকাল। ঝাঁপির নিচে মহিষের চোখ দেখে নিতাই আর সুমনের গা শিউরে উঠেছিল। সাপের মুখে ব্যাঙটার করুণ চিৎকার আস্তে আস্তে পেছনে চলে যায়। হাতে ধরা সাপের মতো পেঁচানো প্লাস্টিকের লাগামগুলোর দিকে তাকায় দুজন।
রাত প্রায় শেষের দিকে। মেঘের ডাকের সাথে মিলিয়ে গেছে বৃষ্টি। মহিষেরাও চলে এসেছে বেশ পরিচ্ছন্ন একটা রাস্তায়। দু’একটা ঘুমভাঙ্গা পাখির ডাক কানে আসছে।
এবার নিশ্চয়ই নিতাই আর সুমন তাদের বিশ্রাম দেবে?
খাবার দেবার কোনও সম্ভাবনাই নাই। কারণ ওদের দুজনের ঘাড়ে দুটো ব্যাগ। এই ব্যাগগুলো নিয়ে ছাত্র/ছাত্রীরা স্কুল যাওয়া আসা করে।
মহিষেরা মাঝে মাঝে রাস্তায় দেখেছিল। নিতাই আর সুমনের ওইটুকু ব্যাগে লুঙ্গি আর একটা চাদর আছে। উদয় সিংয়ের মহিষের ফার্ম থেকে যখন তারা বের হয় তখনই ব্যাগে ঢোকাতে দেখেছিল।
আর সামান্য কিছু বিস্কিট। বিস্কিটগুলো পরে বাজারের মোড়ে কিনেছিল। উদয় সিং কেন তাদের বিক্রি করল মাথায় না ধরলেও এ নিয়ে চারজনের মধ্যে বেশ হাসাহাসি হয়েছে রাস্তায়।
হরিয়ানার এক সাধারণ গৃহস্থের বাড়ি থেকে তারা যখন চুরি হয়ে উদয় সিংয়ের ফার্মে ঢোকে, তখন উদয় সিংয়ের চেঁচামেচি দেখে হাসিই পাচ্ছিল। সে এত বেশি রুপিতে তাদের কিনতে চাইছিল না।
কিন্তু উদয় সিং যখন তাদের কলকাতার এক গরু ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করছিল তখন এত অল্প রুপিতে ছাড়তে চাইছিল না। অবশ্য এটা ঠিক উদয় সিং তাদের খাইয়েছিল ভালোই।