গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
শবাকি দুটো কসাইদের দিয়ে দেয়া যাবে। কিন্তু না, সুবেদার সাহেব আইনের বাইরে যাবেন না। তিনি মহিষ চারটাকে কাস্টমসে দিয়ে দেবেন বলে চেয়ারম্যানকে জানিয়ে দিলেন। সেখানে সবার সম্মুখে নিলামে ওঠানো হবে।
কাঁঠালের ছায়ায় বেশ ঘুম ঘুম লাগছে মহিষগুলোর। বিকেল হয়ে গেছে। সামনের খাবারগুলো শেষ হয়ে আবার নতুন খাবারও এসেছে। ব্যথায় টান টান শরীরের রগ আর চামড়াগুলো কেবল স্থিতি পেয়েছে।
কাঁঠাল ছায়ার বাইরে ভীষণ রোদ। রোদের তাপ গায়ে লাগছে। একটা চার চাকার বড় ট্রাক এসে থামল ক্যাম্পের সামনে। মহিষেরা বুঝে নিল আর বেশিক্ষণ এখানে নয়। তবে খবর ভালো, তাদের হাঁটতে হবে না।
ট্রাকে উঠতে উঠতে অনেক সময় লেগে গেল। বাঁশ দিয়ে সিড়ি বানিয়ে তাদের বেঁধে অনেকগুলো লোক ট্রাকের ওপর তুলল। কাশ্মির থেকে হরিয়ানার গৃহস্থ বাড়িতে এসেছিল ট্রাকে চড়ে, মনে পড়ল তাদের।
বেশিক্ষণ চলল না ট্রাক। আলো ঝলমলে শহরের একটা ঘুপচি বাড়ির খোঁয়াড়ে রাখা হলো তাদের। খাবারও দেয়া হলো। তারপর এভাবে রাত কেটে গিয়ে সকাল হলে দুজন লোক তাদের রাস ধরে টানাটানি শুরু করল। লোক দুজন তাদের নিয়ে একটা বড় বিল্ডিংয়ের সামনে এনে গাছের সাথে বেঁধে রাখল। অনেক লোকের সমাগম এখানে। লোকদের মধ্যে চিৎকার চেঁচামেচি চলছে।
চার |
কাস্টমস অফিসার অফিসের বারান্দায় বসেছেন। অনেক লোকের ভিড়। অফিসের ভেতর জায়গা হবে না বলে চেয়ার টেবিল নিয়ে বাইরে বসেছেন তারা। একজন কর্মচারীকে লক্ষ্য করে অফিসার বললেন
-কয়টা বিডি জমা পড়েছে?’ কমর্চারী বললেন
-স্যার ১৪ টা।
অফিসার বললেন, ১৪ টা বিডির জন্য কয়েকশ মানুষ আশ্চর্য তো। সবাইকে ডাকেন।’ সবাই আসলো। অফিসার বললেন, মহিষ চারটার দাম রাখা হয়েছে চারলাখ টাকা। এবার আপনারা কত দিয়ে ডাকবেন বলুন।
মহিষ চারটা কেনা বেচার জন্য কয়েকশ মানুষের মধ্যে তীব্র বাকবিতণ্ডা চলছে তখন। কে কিনবে এই নিয়েই তর্ক। তাদের কারও মধ্যে কেনার তেমন জোর নেই।
একমাত্র গরু ব্যবসায়ী লাভলু কিনতে চাচ্ছে বলে তার কাছেই সবাই। সবার এক কথা সবাইকে ম্যানেজ করতে হবে লাভলুকে। লাভলুও শর্ত দিয়ে বসেছে ম্যানেজ করা যাবে যদি কেউ অতিরিক্ত ডাক না দেয়। বেলা প্রায় পড়ে এসেছে। এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না কেউ। বারান্দায় বসা অফিসার গরমে ঘামে ভিজে গেছে। টাকায় মানানো যাচ্ছে না। তারা ৪ দলের জন্য অনেক রাজপথে মুখোমুখি শত্রু হলেও এখানে তাদের বেশ মিল।
অফিসারের সামনে বসে আছে কয়েকজন কসাই। বস্তা ভরা ছুরি আর মাংস কাটার বটি প্রস্তুত। লাভলুর সাথে মুটামুটি দরদাম হয়ে গেছে। আগামীকাল ছুটির দিন। ভালোই বিক্রি হবে মহিষের মাংস।
এই শহরের মানুষেরা অনেকদিন মহিষের মাংস খায়নি। সময় চলে যাচ্ছে বেশি রাত হলে মাইকিং করা যাবে না। মাইকিং না করলে মানুষ জানবে কী করে আগামীকাল দুইটা মহিষ জবাই হবে।
পাঁচ |
সবাই চলে গেছে। কেবল কযেকজন এসে মহিষগুলোর কাছে এসে দাঁড়াল। তাদের একজন বলল
-নারে ঠকিনি। দশমণ মাংস হবেই।
আরেকজন বলল
-বাকি দুইটা?
লাভলু চিটাগাং পাঠাবে। ওখান থেকে মাংস প্রসেস হয়ে সিংগাপুর যাবে।
মহিষ চারটি এবার নড়েচড়ে উঠল মনে হয়। একে অপরের দিকে তাকাল একবার। তাদের চোখ জলে টলমল। এবার বুঝি পৌঁছে যাবার সময় হলো তাদের।