
এক লোকের একটা প্রভু ভক্ত কুকুর ছিল। লোকটা যখন বাইরে থেকে বাড়িতে আসতো, কুকুরটি তখন লোকটার পায়ের কাছে এসে লেজ নেড়ে, নেড়ে মালিকের কাপড় টানাটানি করতে থাকতো। লোকটি যখন খেতে বসতো, কুকুরটি তখন সামনে এসে বসে থাকতো। মালিক কিছু দিলে তাই খেতো। একদিন দুপুর বেলা, লোকটি যখন খেতে বসলো, কুকুরটি তখন বরাবরের মতো লোকটির সামনে এসে বসে ছিল আর লেজ নেড়ে, নেড়ে মালিকের খাবার খাওয়া দেখছিল। লোকটি অনেকক্ষণ যাবত কুকুরটিকে কিছু খেতে দিচ্ছিলো না। এক পর্যায়ে কুকুরটি তার অবস্থান ছেড়ে মালিকের কাছাকাছি চলে গেলো, মালিক যদি কিছু খেতে দেয় সেই আশায়। কিন্তু তখন লোকটির মাথায় বিভিন্ন টেনশন ছিল, আর ভেতরে ভেতরে অনেক রাগ কাজ করছিল। কুকুরটি যখন খাওয়ার জন্য লোকটির কাছে গিয়ে মুখ বাড়িয়ে দিল, তখন লোকটি উত্তেজিত হয়ে তার ভেতরের সব রাগ সেই কুকুরটির উপরে ঝাড়লো। কুকুরটাকে লোকটি ইচ্ছেমত মারলো। অবলা কুকুর আর কি বলবে? মাথা নিচু করে মালিকের মার খেলো এবং ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে উঠানের এক কোনে মাথা নিচু করে বসে রইলো।
এরপর লোকটি বাইরে থেকে রাত্রে যখন বাড়িতে এলো, তখন লোকটি তার সেই প্রভু ভক্ত কুকুরটিকে আর দেখতে পেলো না। লোকটি সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজলো, কিন্তু কুকুটিকে আর পেলো না। তখন লোকটি আফসোস করতে লাগলো, “হায়, কুকুরটিকে এভাবে বোধ হয় আমার মারা ঠিক হয়নি।” লোকটি পরের কিছুদিন সারা এলাকা ঘুরে ঘুরে অনেক খুঁজলো, তবুও কুকুরটিকে আর পাওয়া গেলো না। এরপর, মাস তিনেক বাদে, লোকটি দুই এক গ্রাম পরে একটা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো, তখন লোকটি দেখতে পেলো একটা দোকানের পাশে তার সেই কুকুরটি মাথা মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে কেমন মনমরা হয়ে শুয়ে আছে। তখন লোকটি দৌড়িয়ে গেলো সেই কুকুরটার কাছে। লোকটিকে দেখে কুকুরটা লেজ নেড়ে, নেড়ে তার পায়ের কাছে এসে সামনের দুই পা ভাঁজ করে মাথা নিচু করে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে শুয়ে পড়লো।
পাশের দোকানদার লোকটিকে বলতে লাগলো, “ভাই, কুকুরটা কি আপনার?” লোকটি বলল, “হ্যাঁ, আমার…” দোকানদার লোকটিকে বলল, “ভাই, অনেক কুকুর দেখেছি যারা খেতে না দিলেও চুরি করে খায়। আর এই কুকুরটা গত তিন মাস যাবত আমার দোকানের সামনে পড়ে আছে, কুকুরটির সামনে রুটি, বিস্কুট আরও অনেক কিছু, এমনকি গোশত দিয়েও চেষ্টা করেছি, কিছুতেই খায় না। কিছু খাওয়াতে পারলাম না। ভাই, কুকুরটা কি কিছুই খায় না?”
লোকটির আর বুঝতে বাকি রইলো না। লোকটির দুই চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে থাকলো, লোকটি কুকুরটাকে দুই হাতে কোলে তুলে নিয়ে চিৎকার দিয়ে কান্না করতে লাগলো আর বলতে লাগলো, “হায়রে…তুই সামান্য কুকুর হয়ে তোর মালিকের কথার অবাধ্য হলিনা। আমি খাইতে দেইনি বলে গত তিন মাস তুই না খেয়ে রইলি! আর আমি মানুষ হয়ে আমার প্রভুরে চিনতে পারলাম না…যে মালিক আমারে খাওয়াইলো, আমারে সৃষ্টি করলো, তাকে কখনো ডাকলাম না। কতটা কপাল পোড়া আমি। তুই কুকুর হয়েও তোর প্রভুরে চিনলি আর আমি মানুষ হয়ে আমার প্রভুরে চিনলাম না…”
এরপর থেকে লোকটি এমন ভালো হয়ে গেলো যে লোকটি আর কখনো বেঁচে থাকা অবস্থায় “আল্লাহর” রাস্তা থেকে সরে যায়নি। আমরা কি করছি?