গল্পের ২য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
রাসিদাসি আঁচল খুলে বের করে নেয় মুড়ি মুড়কি আর কতগুলো ভাঙ্গা সন্দেশের টুকরো। কয়েকটি আস্ত বাতাসাও জুটেছে। তার মধ্যে কয়েকটি সাদা বাতাসা দেখে চোখ চকচক করে ওঠে রাধুর। –মা আমারে দেও আমারে দেও। রাসিদাসি খুব খুশী। সে একটি সাদা বাতাসা রাধুকে দিয়ে বলে—তুই একটা নে। দাদাদের একহানি দিই মা ।
পুজোর দিন ভাগ করি খাতি হয় যে। রমেশ আর সালাম টুক করে মুখে পুরে দেয় ভাঙ্গা বাতাসার টুকরো । মুখের ভেতর গলে যাচ্ছে বাতাসা। আর সালামের চোখে ধেয়ে আসছে জল।
রাসিদাসি আজ ওর চুলে তেল মাখিয়ে ভাঙ্গা চিরুণী দিয়ে আঁচড়ে দিয়েছে। রুক্ষ ক্ষয়াটে হাতে তেলজল ঘষে ঘষে ওর মুখটিকে পরিষ্কার করে তুলেছে। পাছার কাছে ছেঁড়া প্যান্টে হাত ঢুকিয়ে সে আরো তিনটি সাদা বাতাসা বের করে আনে।
টি আস্তো বাতাসা দিতেই রাধুর মুখ এত উজ্জ্বল হয়ে ওঠে যে পুজো প্যান্ডেলের আলোও ম্লান হয়ে যায়। সে ছেঁড়া গামছায় তাড়াতাড়ি লুকিয়ে ফেলে বাতাসা। এখন খাবে না। আজ রাত্তিরে তো ভাত হবে না ।
আজ সে লুচি খাবে। তারপর রাতে বারান্দায় পা ছড়িয়ে বসে চুষে চুষে বাতাসাগুলো খাবে। দুমুঠো মুড়কিও সে জমিয়ে রেখেছে সকালের জন্যে। বাবা আজ কেশব কুড়ির বাড়ি পুজোর যোগাল দিতে গেছে।
তারা নাকি এই বড় কড়াইতে পুকুরের জলের মত তেল ঢেলে রুটি ছেড়ে দেয়। আর ওমনি বালিশের মত ফুলে ফুলে ওঠে সেই রুটি । এই হল লুচি। একটি সম্পূর্ণ আস্তো লুচি কেমন সে জানে না। সে তো কখনো আস্তো লুচি খায়ই নি।
চোখেই দেখেনি কখনো। কেবল পূজো এলেই লুচির গল্প ভাসে বাতাসে। বাবা অবশ্য বলেছে দেখি আনতি পারি কিন
রাধু ভাব ভাব মুখ করে সালামকে বলে, মেজদা জানিস বাবা আজকে নুচি আনবেনে। আমি নুচি খাবানি তাই না মা? রমেশ বোনের মাথায় ছোট্ট টোকা দিয়ে বলে , ভাট বকিস না রাধু।
শালা হাড় কেপ্পন কেশব কুড়ি দুডের বেশি নুচি দেবার লোকই নয়। বাবা খাবেনে না আমাগের জন্যি নিয়ে আসপেনে! রামুর কথা শুনে রাধুর মুখ মুহূর্তে দপ করে নিভে যায়।
সালাম বাকি দুটো বাতাসা রাসিদাসির হাতে দিয়ে বলে, তুমি খাও খালা। কিছুই তো খালে না তুমি। তারপর রমেশকে বলে, রামু চল। রমেশের এখন কোথাও যাওয়ার ইচ্ছা নাই।
হা করে প্যান্ডেলের দিকে তাকিয়ে আছে। হাজার লক্ষ আলোর রোশনাইয়ে ও কেবল মা দুর্গার মুখখানি দেখতে পেয়েছে। এখনো লক্ষ্মী সরস্বতী, কার্তিক-গনশার মুখ দেখেনি।
এত ভিড় যে ঢুকতেই পারছে না। পুজো কমিটির জেঠু কাকা দাদারা দেখলেই চাটি মারছে। একটি সন্দেশ মাটিতে পড়ে গেছিল কোনভাবে কোন মাসি জেঠিমার থালা থেকে তাই তুলে নিতে গেছিল সে।
এমন চটার বাড়ি মেরেছে যে হাত এখনো ফুলে আছে। রামু মা দুর্গাকে খুব অভিমান নিয়ে মনে মনে বলেছিল, হে মা দুগগা মাটিতে পড়া সন্দেশেও কি আমাদের হক নাই? তাও তোমার পুজোয় লেগে কামে লাগে ? আমরা যে মাটির মানুষ গরীব ছোট জেত।
গল্পের ২য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।