ক্লাস ফ্রেণ্ড — সত্যজিৎ রায়-চতুর্থ পর্ব

গল্পের শেষ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

কথায় বলে—শরীরের নাম মহাশয়, যা সওয়াবে তাই সয়—অথচ তাতে শেষ অবধি শরীরটা গিয়ে কী দাঁড়ায় তা তো আর বলে না। সেটা আমায় দেখে বুঝতে হবে।’

বিপিন চা এনে দিল। সঙ্গে প্লেটে সন্দেশ আর শিঙাড়া। গিন্নির খেয়াল আছে বলতে হবে। ক্লাস ফ্রেন্ডের এই ছিরি দেখলে কী ভাবতেন সেটা মোহিত আন্দাজ করতে পারলেন না।

‘তুমি খাবে না?’ আগন্তুক প্রশ্ন করলেন। মোহিত মাথা নাড়লেন।—’আমি এইমাত্র খেয়েছি।’

‘একটা সন্দেশ?’

‘নাঃ, আপ—তুমিই খাও।’

ভদ্রলোক শিঙাড়ায় কামড় দিয়ে চিবোতে চিবোতেই বললেন, ‘ছেলেটার পরীক্ষা সামনে। অথচ এমন দশা, জানো মোহিত ভাই, ফির টাকাটা যে কোত্থেকে আসবে, তা তো বুঝতে পারছি না।’

আর বলতে হবে না। মোহিত বুঝে নিয়েছেন। আগেই বোঝা উচিত ছিল এঁর আসার কারণটা। সাহায্য প্রার্থনা। আর্থিক সাহায্য। কত চাইবেন? বিশ-পঁচিশ হলে দিয়ে দেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ, কারণ না দিলেই যে উৎপাতের শেষ হবে এমন কোনো ভরসা নেই।

‘আমার ছেলেটা খুব ব্রাইট, জানো ভাই। পয়সার অভাবে তার পড়াশোনা মাঝপথে বন্ধ হয়ে যেতে পারে, এ কথাটা ভেবে আমার রাতে ঘুম হয় না।’

দ্বিতীয় শিঙাড়াটাও উঠে গেল প্লেট থেকে। মোহিত সুযোগ পেলেই জয়দেবের সেই ছেলে বয়সের চেহারাটার সঙ্গে আগন্তুকের চেহারা মিলিয়ে দেখছেন, আর ক্রমেই তাঁর বিশ্বাস বদ্ধমূল হচ্ছে যে সেই বালকের সঙ্গে এই প্রৌঢ়ের কোনো সাদৃশ্য নেই।

‘তাই বলছিলাম, ভাই’, চায়ে সশব্দ চুমুক দিয়ে বললেন আগন্তুক, ‘অন্তত শ’খানেক কি শ’ দেড়েক যদি এই পুরনো বন্ধুর হাত তুলে দিতে পারো, তাহলে—’

‘ভেরি স্যরি।’

‘অ্যাঁ?’

টাকার কথাটা উঠলেই সরাসরি না করে দেবেন এটা মোহিত মনে মনে স্থির করে ফেলেছিলেন। কিন্তু এখন মনে হলো ব্যাপারটা এতটা রূঢ়ভাবে না করলেও চলত। তাই নিজেকে খানিকটা শুধরে নিয়ে গলাটাকে আরেকটু নরম করে বললেন, ‘স্যরি ভাই। আমার কাছে জাস্ট নাউ ক্যাশের একটু অভাব।’

‘আমি কাল আসতে পারি। এনি টাইম। তুমি যখনই বলবে।’

‘কাল আমি একটু কলকাতার বাইরে যাব। ফিরব দিন তিনেক পরে। তুমি রোববার এসো।’

‘রবিবার…’

আগন্তুক যেন খানিকটা চুপসে গেলেন। মোহিত মনস্থির করে ফেলেছেন। ইনিই যে জয়, চেহারায় তার কোনো প্রমাণ নেই। কলকাতার মানুষ ধাপ্পা দিয়ে টাকা রোজগারের হাজার ফিকির জানে। ইনি যদি জালিয়াত হন? হয়তো আসল জয়দেবকে চেনেন। তার কাছ থেকে ত্রিশ বছর আগের বালিগঞ্জ স্কুলের কয়েকটা ঘটনা জেনে নেওয়া আর এমন কী কঠিন কাজ?

‘রবিবার কখন আসব?’ আগন্তুক প্রশ্ন করলেন।

‘সকালের দিকেই ভালো। এই নটা সাড়ে নটা।’

শুক্রবার ঈদের ছুটি।

মোহিতের আগে থেকেই ঠিক আছে বারুইপুরে এক বন্ধুর বাগানবাড়িতে সস্ত্রীক গিয়ে উইক-এন্ড কাটিয়ে আসবেন। দুদিন থেকে রবিবার রাতে ফেরা; সুতরাং ভদ্রলোক সকালে এলে তাঁকে পাবেন না। এই প্রতারণাটুকুরও প্রয়োজন হতো না যদি মোহিত সোজাসুজি মুখের ওপর না করে দিতেন।

কিন্তু কিছু লোক আছে যাদের দ্বারা এ জিনিসটা হয় না।

মোহিত এই দলেই পড়েন। রবিবার তাঁকে না পেয়ে যদি আবার আসেন ভদ্রলোক, তাহলে তাঁর সঙ্গে দেখা না করার কোনো অজুহাত বার করবেন মোহিত সরকার। তারপর হয়তো আর বিরক্ত হতে হবে না।

গল্পের শেষ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!