কৃপণ-পিসী জব্দ–১ম পর্ব-হাসির গল্প

গল্পের শেষ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের একজন বিধবা পিসি ছিলেন। বুড়ির অগাধ টাকা পয়সা কিন্তু একেবারে হাড়-কেপ্পন। হাত থেকে জল গলে না। কাউকে একটা পয়সাও দেন না।

মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র একদিন গোপালকে একান্তে ডেকে বললেন, গোপাল, তুমি আমার পিসির কাছ থেকে যদি ৫০০ টাকা বাগিয়ে আনতে পার, তবে বুঝব তুমি প্রকৃতই চতুর ব্যক্তি। তোমাকে সকলেই যে চতুর বলে তার প্রমাণ এতে হবে।

মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের কথা শুনে গোপাল বললে, এ আর তেমন কঠিন কাজ কি? আমি অল্প দিনের মধ্যেই আপনার কৃপণ পিসিকে জব্দ করে ৫০০ টাকা বাগিয়ে আনতে নিশ্চয়ই পারব। না পারি তো কানমলা খাব মহারাজ।

মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র তখন গোপালকে বললেন, গোপাল তুমি যদি আমার ওই কৃপণ পিসিমার কাছ থেকে টাকা বাগিয়ে আনতে পার- তবে যে টাকা তুমি বাগিয়ে আনবে, আমি সেই টাকার তিনগুন তোমাকে দেব। আমি হলফ করে বলতে পারি, আমার পিসির কাছ থেকে তুমি একটি কানাকড়িও বের করতে পারবে না। এমন কি কানমলা খেয়ে শেষে নাকানি চোবানি খেয়ে না ফিরে আসতে হয়। সাবধান হয়ে পিসির কাছে যাবে।

গোপাল বললে দেখুন না মহারাজ যাদু দেখিয়ে টাকা বের করে আনতে পারি কি না। এইবলে চলে গেল হাসতে হাসতে। গোপাল পরদিনই রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের পিসির বাড়িতে গিয়ে হারি হল উস্কো খুস্কো পাগলের মতো হয়ে, দেখলে চেনা যায় না। দেখলে মনে হয় ভীষণ অসুস্থ। পিসি জিজ্ঞেস করলেন, হঠাৎ এদিকে কি মনে করে গোপাল? তোমার একি চেহারা হয়েছে। পাগালোর মতো তোমাকে দেখাচ্ছে কেন? তোমাকে দেখে আমার বড়ই দুঃখ হচ্ছে। তোমার কি ভীষণ অসুখ করেছিল?

গোপাল মুখ কাঁচুমাচু করে বললে, পিসিমা কিছুদিন আগে একজন নামকরা গণক ঠাকুর হাত দেখে বলেছেন, আমার আয়ু নাকি আর মাত্র তিন মাস। অনেকদিন থেকেই আমার মনের বাসনা আপনার পাতের প্রসাদ পাই। আপনি যদি আমার এই বাসনা পূর্ণ করেন, মরার আগে মনে একটু শান্তি পাব। সেইজন্যই এই অবস্থা।

পিসি যতই কৃপণ হোক, একজন মৃত্যু পথযাত্রী যদি পাতের প্রসাদ পেতে চায়, তাকে বারণ করেন কি করে? তাই তিনি গোপালকে বললেন, আহা! বালাই ষাট্ এই কি তোমার মরবার বয়েস! তা তুমি যখন আমার পেসাদ পাবার জন্য মনে মনে এতই বাসনা করছ, তখন আগামী কাল আমার এখানে পেসাদ পেও। তবে জানো তো বাবা আমি বিধবা এবং বৈষ্ণবী হয়েছি, শুদ্ধ নিরামিষ খাই। তোমার কি আমিষ খাওয়া মুখে নিরামিষ তরি-তরকারি রুচবে? যদি রুচে তবে ভালই।

গোপাল বললে, খুব রুচবে পিসিমা। আমিও নিরামিষ আহার সবচেয়ে ভালোবাসি। আজকাল যা বাজার রোজ মাছ-মাংস পাবোই বা কোথা থেকে? পিসি বললেন, বেশ বেশ তবে বাবা কালই এসো কেমন? তোমার কথা আমার মনে থাকবে। তোমার যা মনের ইচ্ছে তাই যেন পূরণ হয়। ভগবান তোমার মঙ্গল করুন …….।

গোপাল মাথা নেড়ে বললে, আচ্ছা আজ এখন তবে আমি আসি পিসিমা। কাল দুপুর বেলায় আমি আসব। পরদিন গোপাল ছেলেকে দিয়ে পুকুর থেকে কিছু কুচো চিংড়ি ধরে ভাল করে সিদ্ধ করে ট্যাকে গুজে নিয়ে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের পিসিমার মহলে হাজির হল দুপুর বেলায় পেসাদ পাবে বলে। গোপাল তার এটো পাতেই খেতে বসবে বলে বুড়ি পিসি পাতে বেশ কিছু ভাত, লাউ-ঘন্ট, শাক-ভাজা, বেগুন ভাজা, আলু ভাজা এবং অন্যান্য তরি-তরকারি, পায়েস রেখে দিয়েছিলেন। গোপাল পিসির এটো পাতেই খেতে বসল আয়েস করে।

পিসি বললেন গোপাল তোমার বাছা আর যা যা দরকার লাগে চেয়ে নিও। লজ্জা করে খেয়ো না যেন বুঝলে?

গোপাল মাথা নাড়া দিয়ে বলে আচ্ছা। আমার যা দরকার চেয়ে নেব! এর জন্য চিন্তা করবেন না আপনি বিশ্রাম করতে যান আমার জন্য ভাবতে হবে না। আর দরকার হলে চেয়ে নেব।

গল্পের শেষ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!