কৃপণ-পিসী জব্দ–শেষ পর্ব-হাসির গল্প

গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

গোপাল খেতে খেতে এক ফাকে লাউঘনেটর সঙ্গে কুচো চিংড়ি সিদ্ধ মিশিয়ে দিলে। লাউয়ের সঙ্গে সিদ্ধ চিংড়ি দিয়ে ধরাই যাবে না। কুচো চিংড়ি মেশানো লাউঘন্ট রেখে দিল। গোপাল সবই খেল, কিন্তু পাতে কুচো চিংড়ি মেশানো কিছু লাউঘন্ট রেখে দিল।

পিসি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার আর কি দরকার বল? পেট ভরেছে তো গোপাল? গোপাল মুচকি হেসে বললে, হ্যা খু-উ-ব ভরেছে পিসিমা। লাউ কুচো-চিংড়ির ঘন্টটা খুব খাসা হয়েছে। আহা, কি চমৎকার খেতে! যাকে বলে অমৃত। এরূপ কুচো চিংড়ির ঘন্ট আমি কোনও দিন খাইনি খাসা হয়েছে কিন্তু যদি আর একটু দেন তবে মন ভরে শেষ খাওয়া খেয়েনি। এছাড়া আমার আর কিছুই লাগবে না।

পিসি অবাক হয়ে বললেন, কি বললে। লাউ কুচো চিংড়ি? দূর পাগল ওটা যে নিরামিষ লাউঘন্ট। ওর মধ্যে আবার কুচো চিংড়ি তুমি পেলে কোথায়? তোমার নিশ্চয়ই মাথা খারাপ হয়েছে।

গোপাল মুচকি হেসে বললে, বিশ্বাস না হয়, আপনার ঝিকে ডেকেই দেখান না কেন। আমার পাতে এখনও একটুখানি লাউঘন্ট পড়ে রয়েছে। কারণ এত ভাল হয়েছে যে, পরে খাব বলে কিছু রেখে দিয়েছি। এটা আমার বরাবরের অভ্যাস।

পিসি তখন মুখ কাচুমাচু করে বললেন, ঝিকে ডাকার দরকার নেই কৈ দেখি। চিংড়ি দেখেই বুড়ির চক্ষুস্থির। যাক্ বাবা বুড়ো মানুষ কোথায় কি ভুল করে ফেলেছি। একথা যেন আর পাচ কান কোর না। হয়ত জলের সঙ্গে সিদ্ধ হয়ে গেছে। কারুকে কিছু বলো না বাবা। জলটা ছেকে রান্না করলে ভাল হত।

গোপাল বললে আমি কি চুপ করে থাকতে পারি পিসিমা? মহারাজ জিজ্ঞাসা করলে কি বলব? ভাড়ের কাজ করি কথা বেচেই তো খেতে হয় আমায়। তাছাড়া আর কটা দিনই বা বাচব? মরার আগে মিথ্যে কথা বলে পাপ বাড়িয়ে লাভ কি? ছেলে পুলেদের জন্যে যদি কিছু না রেখে যেতে পারি তবে তাদের পথে পথে ভিক্ষে করে বেড়াতে হবে। মহারাজকেও আমি মিথ্যা কথা বলতেই পারব না। খাওয়ার কথা মহারাজ জিজ্ঞাসা করলে সত্যি কথাই তাকে বলতে হবে। পরে যদি শুনেন রাগ করবেন।

কৃপণ পিসি তখন গোপালকে ঠান্ডা রাখার জন্য বললেন, আমি না হয় তোমাকে দুটো টাকা দিচ্ছি একথা আর কাউকে বলো না, তাহলে আমার মান সম্মান সব যাবে। গোপাল মুচকি হেসে বললে, মাত্র দুটো টাকা দিয়ে কি আর ভাড়ের মুখ বন্ধ করা যায় পিসিমা? তাছাড়া টাকা ঘুষ নেওয়াও যে পাপ। না পিসিমা ও আমি পারব না। মরার আগে মিথ্যে কথা বলতে কোনও মতেই পারব না। তবে যদি…..

পিসি বললেন থামলে কেন বাবা? তোমার মনের কথা বল না। যা বলার খুলে বল থেমে থেক না।

গোপাল একটু থেমে বললে, আপনার মুখ চেয়ে পাপকাজও করতে পারি পিসিমা; তবে বাপু হাজার খানেক টাকা লাগবে, তার কম হবে না। যখন মিথ্যে বলতেই হবে তবে বৌ ছেলে মেয়েদের জন্য কিছু বেশি করেই রেখে যাই। গোপালের কথা শুনে কৃপণ পিসি আঁৎকে উঠলেন বলো কি গোপাল! অত টাকা যদি দিতে হয়…. তবে যে আমিই তোমার আগে মারা পড়ব। আমি তোমাকে না হয় বিশ পচিশ টাকাই দেব। এর বেশি আমার সাধ্যে কুলোবে না।

শেষ পর্যন্ত অনেক দর কষাকষির পর গোপালের হাতে পাঁচশতটাকা গুজে দিয়ে তবেই পিসি রেহাই পেলেন। মহারাজের লোক আড়াল থেকে সবকিছু দেখেছে এবং শুনেছে। সে মহারাজাকে সব কথা খুলে বলল। সব কথা শুনে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র গোপালের বৃদ্ধির তারিফ না করে পারলেন না। কথামত টাকার তিনগুণ অর্থাৎ দেড় হাজার টাকা দিলেন গোপালকে গোপালের  বুদ্ধি দেখে আশ্চর্য না হয়ে পারলেন না।

গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!