কিবলা পরিবর্তনের কাহিনী-পর্ব ১
আবদুল্লাহ বিন জাহাশের সারিয়া রজব মাসে প্রেরিত হয়েছিল। সে মাসেই তাহবীলে কিবলা হয়েছিল। অর্থাৎ হিজরতের ষোল মাস পরের দ্বিতীয় হিজরীতে রজব মাসের পনের তারিখ সোমবারে জোহরের নামাজে মসজিদে বনী ছালেমাতে কিবলা পরিবর্তন হয়।
হিজরতের পূর্বে মক্কায় অবস্থানকালে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) খানায়ে কাবা ও বায়তুল মুকাদ্দাস উভয় কিবলাকে সামনের দিকে রেখে নামাজ পড়তেন। হিজরতের পর মদীনার ইহুদীগণের মন রক্ষার্থে বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে নামাজ পড়ার আদেশ হয়। কারণ ইহুদীগণের কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাস। উদ্দেশ্য ছিল তাতে ইহুদীগণ হয়ত ইসলাম ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হবেন।
কিন্তু ফলাফল তার বিপরীত হল। তারা তুচ্ছ করে বলতে লাগল দেখ, মুহাম্মাদ আমাদের কিবলা মানছে। অথচ আমাদের ধর্ম মানে না। তাদের কেউ কেউ বলল, যখন আমাদের কিবলা মেনেছে, অচিরেই আমাদের ধর্মও অবশ্যই মানতে হবে। ঐদিকে এ সংবাদ মক্কায় পৌঁছার পর কাফির ও মুশরিকগণ বলতে লাগল, দেখ কি বিস্ময়কর ব্যাপার! মুহাম্মাদ একদিকে মিল্লাতে ইব্রাহীমের দাবী করে, অপরদিকে ইব্রাহীমের কিবলার অর্থাৎ বায়তুল্লাহর বিরোধীতা করে।
তার কথায় এবং কাজে কোন মিল নেই। এ সমস্ত ঘৃণ্য ও অবাস্তব উক্তির কারণে রাসূল (সাঃ)-এর অন্তর সর্বদা খানায়ে কা’বার প্রতি লেগে থাকত। পিতৃ-পুরুষ হযরত ইব্রাহীমের কিবলা যেন তাঁর কিবলা হয় এ আকাঙ্ক্ষা সর্বদা তাঁর অন্তরে প্রবল থাকত। তিনি এ উদ্দেশ্যে মাঝে মাঝে আকাশের দিকেও তাকাতেন কিবলা পরিবর্তনের হুকুম নাযিল হয় কিনা? কিন্তু মুখে প্রকাশ করতেন না।
এ অবস্থায় প্রায় ষোল মাস অতিবাহিত হল। ষোল মাস পর রজবের পনের তারিখ সোমবার তিনি বনী ছালেমার মহল্লাতে উম্মে বিশর নামক জনৈকা সম্ভ্রান্ত মহিলার দাওয়াতে কতিপয় সাহাবীসহ গমন করেন। বনী ছালেমার মসজিদে জোহরের নামাজ জামাতের সাথে আরম্ভ করেন। বনী ছালেমার মসজিদটির প্রতিষ্ঠা রাসূল (সাঃ)-এর হাতে হয়। হিজরতের সময় প্রথম এ মহল্লাতে তিনি কয়েকদিন অবস্থানকালে এ মসজিদ নির্মাণ করেন। তাই সর্বপ্রথম মসজিদ, যা রাসূল (সাঃ) নির্মাণ করেছেন।
উক্ত নামাজের জামাতে পুরুষ, নাবালেগ ছেলে এবং মহিলাগণও শরীক ছিলেন। রাসূল (সাঃ) উত্তরমুখী হয়ে সকলের সামনে ইমাম ছিলেন। এরা পেছনে ছিল বয়স্ক পুরুষগণ। তাদের পেছনে ছিল অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেগণ এবং তাদের পেছনের কাতারে ছিল মহিলাগণ। এভাবে বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে দু’রাকাত পড়ে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াবার সঙ্গে সঙ্গে হযরত জিব্রাইল (আঃ) এসে বললেন, হে রাসূল! এখন হতে কা’বা গৃহের দিকে মুখ ফিরিয়ে নিন। আপনার কিবলা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। এ আদেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাসূল (সাঃ) সমস্ত মুক্তাদীগণকে বললেন, সকলে কা’বার দিকে ফিরে যাও।