কাবিলের অনুতাপ

এ দৃশ্য দেখে কাবিল নিজেকে এ বলে ধিক্কার দিল যে, একটি ক্ষুদ্র কাকের যা বুদ্ধি রয়েছে আমার মাথায় সে বুদ্ধিটুকুও নেই। যা হোক অবশেষে কাকের নিকট শিক্ষা লাভ করে যমীনের বুকে একটি কবর খনন করে হাবিলের  লাশ দাফন করে নিশ্চিন্তে মনে গৃহে অভিমুখে যাত্রা করল। সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ তা’আলা যমীনকে নির্দেশ করলেন, হে যমীন! তুমি কাবিলের দেহ জানু পর্যন্ত গ্রাস  করে ফেল। তাঁকে নড়াচড়া করতে দিও না। সে ভ্রাতৃ হত্যার অপরাধে অপরাধি।

যমীন সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর আদেশ পালন করল। হতভাগ্য কাবিল তার পা আর  যমীন থেকে টেনে উঠাতে পারল না। কাবিল এটা যে তার পাপের শাস্তি তা বুঝতে পেরে আল্লাহর দরবারে অনুনয় বিনয় করে বলতে লাগল, হে মাবুদ! ইবলীস গুনাহ করে তোমার দরবার হতে বিতাড়িত হয়েছিল। কিন্তু এভাবে যমীন তার পা ধরে রাখে নি। আমার অপরাধ কি ইবলীসের অপেক্ষা বড় হল যে, যমীন আমার পা দুটি গিলে ফেলল? আল্লাহর পক্ষ থেকে জবাব এল ওহে দুরাচার! সে যত বড় গুনাহ-ই করুক না কেন। সে নিজের আপন ভাইকে খুন করেনি।

কাবিল আবার বলল, হে মাবুদ! আমার পিতাও তো বেহেশতে অবস্থানকালে তোমার হুকুম অমান্য করে বড় গুনাহ করেছিল। তাঁকে তুমি শাস্তি দিয়েছ বটে, কিন্তু তাঁকেও তো এভাবে যমীন গ্রাস করেনি।

আওয়াজ এল হে নিষ্ঠুর! তোর পিতা আমার আদেশ অমান্য করে অন্যায় করেছিল নিজের প্রতি। কিন্তু তুই এমন পাপ করেছিস যা বিনষ্ট হয়েছে অন্যের হক। তুই অন্যের প্রতি জুলুম করেছিস সুতরাং তোর অপরাধ সর্বাপেক্ষা গুরতর।

এরূপ আওয়াজ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাবিলের দেহ বক্ষ পর্যন্ত ভূমির অভ্যন্তর ডেবে গেল। তখন কাবিল ব্যাকুলভাবে আল্লাহর দরবারে এরূপ এ বলে মিনতি করতে থাকল হে রব! আমি না বুঝে ইবলীসের ধোঁকায় পড়ে ভ্রাতৃহত্যার মত মহা অপরাধ করে ফেলেছি, বাস্তবিকই এর সমতুল্য অপরাধ নেই। কিন্তু তুমি দয়াময় ক্ষমার আধার, মার্জনাকারী সবকিছু তুমি ক্ষমা করে দিতে পার। আমি আমার পিতার নিকট শুনেছি তুমি তার গুনাহটিকে তোমার প্রিয় হাবীব হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উসিলায় ক্ষমা করেছিলে, হে আমার প্রভু আমাকেও তুমি তোমার প্রিয় হাবীবের বরকত ও উসিলায় ক্ষমা করে দাও।

এইভাবে কাবিল যমীনের গ্রাস থেকে ছাড়া পেয়ে গৃহেভিমুখে যাত্রা করল। কিন্তু সে যখন গৃহের দিকে যাত্রা করল তখনই আল্লাহর হুকুমে এক ফেরেশতা বিকট আকার ধারণ পূর্বক তার পথ আগলে দাঁড়ায়ে তাকে মারাত্মক অস্ত্র দ্বারা প্রচণ্ড আঘাত করল। এতে তার প্রাণ বের হয়ে গেল। কিন্তু আল্লাহ তাকে পুনরায় জীবিত করে দিলেন। কিন্তু উক্ত ফেরেশতা আবার তাকে আঘাত করল এবং সে আঘাতে আবার তার মৃত্যু হল। কিন্তু আল্লাহ তাকে পুনরায় জীবিত করলেন, ফেরেশতার আঘাতে আবার তার মৃত্যু হল, এভাবে কিয়ামত পর্যন্ত তাকে একবার মেরে পুনরায় জীবিত করা হবে।

মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, কিয়ামত পর্যন্ত যত অন্যায় ভাবে হত্যা হতে থাকবে,  প্রত্যেক হত্যাকারীর সমপরিমাণ গুনাহ কাবিলের আমলনামায় লিখিত হবে। কেননা, হত্যার মত ভয়ঙ্কর পাপ এ দুনিয়াতে সর্বপ্রথম কাবিল দ্বারা সংঘটিত হয়েছে।

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।