কাবা ঘর পুনঃনির্মাণ
কাবা গৃহ প্রথম দিকে নিম্ন ভূমিতে অবস্থিত একটি ছাদবিশিষ্ট গৃহ ছিল। ফলে বর্ষার সময় বৃষ্টির পানি প্রবল বেগে কাবা গৃহে প্রবেশ করত। ফলে প্রায়ই কাবা ঘর ক্ষতিগ্রস্থ হত। এ ক্ষতি থেকে কাবা ঘরকে হিফাজতের নিমিত্ত্বে চতুর্দিকে একটি প্রাচীর করা হয়, কিন্তু প্রবল স্রোতের বেগে নির্মিত এ প্রাচীরও বিধ্বস্ত হয়ে যায়।
এ জন্য কাবা গৃহ পুনঃনির্মাণের কথা বেশ কিছু দিন থেকে কুরাইশ নেতৃবৃন্দ ভাবতে ছিল। একটি দুর্ঘটনা সংঘটিত হওয়ায় এ ভাবনা সংকল্পে পরিণত হয়। তা হচ্ছে- এ সময় কাবা গৃহের মাঝখানে একটি গর্ত ছিল, যাতে মানুষের আমানতের মাল ও কাবা ঘরে রক্ষিত দেবমূর্তি সমূহের উদ্দেশ্যে মানুষের প্রদত্ত ভেঁট সমূহ রাখা হত।
একদিন জনৈক ব্যক্তি কাবার দেয়াল টপকে ভিতরে প্রবেশ করে গর্তে রক্ষিত বহু সম্পদ এবং দেবমূর্তিসমূহের গায়ের বহু অলঙ্করাদি নিয়ে চমপট দেয়।
মোট কথা, সুরক্ষা ও উন্নয়ন এবং মধ্যস্থ গর্তে রক্ষিত দ্রব্যাদির সংরক্ষণ – এ দ্বিবিধ কারণে কুরাইশ নেতৃবৃন্দ কাবা ঘর পুননির্মানের তীব্র প্রয়োজন অনুভব করে এবং তা বাস্তবায়নের দৃঢ় সংকল্পও গ্রহণ করে।
কিন্তু এ সংকল্প বাস্তবায়নের পথে কুরাইশ নেতৃবৃন্দের সামনে দুটি বাধা-এক-নির্মাণ সামগ্রীর অভাব এবং দুই- কাবার মধ্যস্থিত গর্তে কোথা থেকে একটি বৃহৎ বিষধর সাপ এসে আশ্রয় নেয়া। এটি মানুষ দেখলে ফোঁস ফোঁস করত আর দিবাভাগে কাবার দেয়ালের উপর উঠে রোদ পোহাত।
কুরাইশদের এ দু সমস্যার সমাধান দু” ভাবে হয়ে যায়। এ সময় এক গ্রীক সামুদ্রিক জাহাজ ঝড়ে তাড়িত হয়ে জিদ্দা বন্দরের কাছে কূলে আছড়ে পড়ে ভেঙ্গে জাহাজের তক্তা সমূহ খরিদ করে নিয়ে আসে। এভাবে কাবা ঘর পুনঃনির্মাণে আসবাবপত্র সমস্যার সমাধান হয়।
আর কাবা গৃহের মধ্যস্থিত গর্তে বসবাসরত সাপটি একদিন দেয়ালের উপর উঠে রোদ পোহাতে থাকাকালে কোথা হতে একটি পাখি এসে ছোঁ মেরে সেটিকে নিয়ে যায়। এতে কুরাইশরা খুবই আনন্দিন হয়।
তাদের মতে কাবা গৃহ পুনঃনির্মাণের মত পূণ্য কর্মের সংকল্পের কারণেই আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সর্পভীতি হতে নাজাত দিয়েছেন। অবশেষে কুরাইশদের সম্মিলিত অংশগ্রহণে কাবা ঘরের পুনঃনির্মাণ কাজ শুরু হয়।
কাবা ঘর পুনঃনির্মাণ কাজে মিস্ত্রী কে ছিল- তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ঐতিহাসিক ইবনে সা’দের অভিমত হচ্ছে, ঝড়ে তাড়িত হয়ে ধ্বংস প্রাপ্ত গ্রীক জাহাজে রোমের অধিবাসী এক আরোহী ওলীদ বিন মুগীরা বিধ্বস্ত জাহাজের কাষ্ঠাদি খরিদ করে আনতে তাকে সাথে নিয়ে আসে। এবং সে’ই কাবা গৃহ পূনঃনির্মান করে।
পক্ষান্তরে সীরাতকার ইবনে হিসাম ইবনে ইসহাক হতে বর্ণনা করেন, এ সময় মক্কায় কিবতী বংশোদ্ভূত এক কাঠমিস্ত্রী মক্কায় বাস করত, সে-ই কাবাগৃহ পুন নির্মাণে মিস্ত্রি নিযুক্ত হয়েছিল।