কবিতা শিখনো জ্বিন
বর্ণনা করেছেন হযরত ইউশাঃ একবার আমি হাযরা মাউতের (বিখ্যাত আলিম) ক্বাইস বিন মাঅদী কারব এর কাছে যাবার জন্য বের হই। যেতে যেতে ইয়ামেনের মধ্যেই আমি রাস্তা হারিয়ে ফেলি। সেই সময় বৃষ্টিও শুরু হয়ে যায়। আমি তখন চতুর্দিকে চোখ ঘোরাই। তো আমার চোখ পড়ে পশমের তৈরি এক তাবুর উপর। সেদিকে এগিয়ে যাই। তাবুর দরজায় এক বুড়োর সঙ্গে আমার উটনীকে তাঁবুর এক কোণে নিয়ে যায়, যেখানে সে নিজে বসেছিল। সে আমাকে বলে, তোমার হাওদা খুলে দাও এবং একটু আরাম করে নাও।
সুতরাং আমি হাওদা খুললাম। সে আমার জন্য এক জিনিস আনল। তাতে আমি বসলাম। তখন সে বলল, তুমি কে? এবং কোথায় চলেছ? বললাম, আমি ইউশা। সে বলল, আল্লাহ তোমাকে দীর্ঘায়ু করুন। আমি বললাম, আমি যেতে চাই মাঅদী কারব-এর কাছে। সে বলে, আমার ধারণা, তুমি কবিতার মাধ্যমে তার প্রশংসা করেছ। বললাম, হ্যাঁ। সে বলল, তা আমাকেও শোনাও। সুতরাং আমি কবিতার আবৃতি শুরু করলাম- رحلت سمية غدوة احمالها غضبي عليك فما تقوبدالها
সে বলল, ব্যাস, ব্যাস। এই কসীদাহ কি তুমি রচনা করেছ। বললাম, জী হ্যাঁ। আমি তখন সবেমাত্র একটাই বয়েত শুনেছি, সে বলে উঠল, যার প্রতি তুমি কবিতাকে সম্পৃক্ত করেছ, সেই সুমাইয়া কে? আমি বললাম, তা আমি জানিনা। ওর মনটা আমার মনে জেগেছে এবং নামটা আমার ভালো লেগেছে। তাই আমি ওকে কবিতার সাথে সম্পৃক্ত করেছি। সে তখন ডাক দিয়ে বলল, ও সুমাইয়া! বাইরে এসো!
অমনি একটি বছর পাঁচেকের মেয়ে বাইরে এসে দাঁড়াল। এবং বলল, কী ব্যাপার, আব্বা? সেই বুড়ো বলল, তোমার এই চাচার সামনে আমার সেই কসীদাহ শোনাও, যাতে আমি ক্বাইস বিন মাঅদী কারবের গুণকীর্তন করেছি। এবং যার প্রথম বয়েত সম্পর্কিত করেছি তোমার নামে। অমনি সেই মেয়েটি তৈরি হল এবং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গোটা কসীদাহটি শুনিয়ে দিল। একটা অক্ষরও ভুল হল না। সম্পূর্ণ কাসীদাহ শোনার পর বুড়ো বলল, এবার ভিতরে চলে যাও। তো সে চলে গেল। বুড়ো তখন আমাকে বলল, ও ছাড়াও আরও কিছু কি তুমি বানিয়েছি?
আমি বললাম, হ্যাঁ। আমার ও আমার এক চাচাতো ভাইয়ের মধ্যে শত্রুতা ছিল, যার নাম ইয়াজিদ বিন মাসহার। এবং উপনাম আবূ সাবিত। (কবিতার মাধ্যমে) আমি তার দোষ বর্ণনা করেছি। এবং তাকে লা-জবাব করে ছেড়েছি।
বুড়ো বলল, তার বিষয়ে তুমি কি বানিয়েছ?
বললাম, একটা গোটা কসীদাহ। তার সূচনা হল-
ودع هريرة وداعا ان الركب مرتحل
وهل تطيق وداعا ايها الرجل
সবেমাত্র এই একটা বয়েত বলেছি। অমনি সে বলে উঠল, ব্যস, ব্যস! তারপর জানতে চাইল, তোমার এই বয়েতে যার নাম উল্লেখ করেছ, সেই হুরাইরা কে?
বললাম, তা আমি জানি না। এটাও ওভাবে উল্লেখ করেছি, যেভাবে সুমাইয়ার নাম উল্লেখ করেছিলাম।
সে তখন ডাক দিল, ও হুরাইরা! অমনি একটি ছেলে বের হয়ে এল। সে ছিল আগের মেয়েটির সমবয়সী (অর্থাৎ বছর পাঁচেকের)। বুড়ো তাকে বলল, তোমার এই চাচাকে আমার সেই কাসীদাহ শোনাও, যাতে আমি আবূ সাবিত ইয়াযিদ বিন মাসহারের নিন্দা গেয়েছি।
অমনি বাচ্চা ছেলেটি সেই কাসীদাহ আগাগোড়া নির্ভুলভাবে শুনিয়ে দিল। দেখে শুনে আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলাম। প্রচণ্ড ভয় ও পেলাম। আমার এই অবস্থা দেখে সেই বুড়ো বলল, ওহে আবূ বাসীর! ঘাবড়িও না। আমি হচ্ছি হাহাসীক মাসহাক বিন ইসাসাহ। (অর্থাৎ একজন জ্বিন) আমি তোমার মুখ দিয়ে কবিতার শব্দ বের করিয়েছি।
ওকথা শুনার পর আমি কিছুটা ধাতস্ত হলাম। বৃষ্টি তখন থেমে গিয়েছিল। তাকে বললাম, আমি রাস্তা ভুলে গিয়েছি। আমাকে রাস্তা বলে দাও। তো সে আমাকে রাস্তা বাতলে দিল। কোন দিক দিয়ে যাব তাও বলে দিল। এবং বলল, এদিক-সেদিক বাক নেবে না সোজা অমুক দিকে এগুবে। তাহলেই কাইসের এলাকায় পৌঁছে যাবে।