এস.এম.এস

হঠাত রজতের কাছ থেকে এমন একটা SMS পাওয়ার পর থেকে ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেছে সুমিতা। বাড়ি থেকে বেরনোর সময় কিছু বলল না, আর এর মধ্যে এতো টাকার দরকার পড়ে গেল স্কুলের লাইব্রেরীর জন্য বই কিনবে বলে? স্কুলের বইয়ের জন্য তো কমিটির টাকা দেওয়ার কথা, ওর মতো শিক্ষক কেন পকেটের টাকা খরচা করবে? তবে অবশ্য লিখেছে যে ‘লাইব্রেরীর বই কেনার জন্য আজই আট হাজার টাকা প্রয়োজন। আমার ছাত্র অনীশকে পাঠাচ্ছি, তুমি ওই টাকাটা ওর হাতে দিয়ে দিও। মিটিঙে ব্যাস্ত আছি, তাই ফোনটা বন্ধ রাখছি।‘

নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করে যে SMS টা যখন রজতের মোবাইল থেকে এসেছে, তখন আর এতো চিন্তার কি আছে। নেহাত দু’দিন আগে রজতের মাইনে হয়েছে – মাসের শেষে হলে কি হতো? মোবাইলে ডিং ডং আওয়াজ পেয়ে দৌড়ে যায় সুমিতা ‘আবার কি SMS এল? ওমা! এতো দারুন ব্যাপার, লিখেছে ‘বিকেল চারটেয় কফি হাউসের সামনে এসো। কলেজ স্ট্রীটে বই কেনার পর, আজ আমরা কফি হাউসে খাওয়া দাওয়া করবো।’ কেমন ভাবুক হয়ে যায় সুমিতা – বিয়ের পর সেই একবারই তো ওরা কফি হাউসে গিয়ে মনের সুখে সিঙ্গারা, চপ, কাটলেট, কবিরাজি – কি নাই খেয়েছিল, আর কি আনন্দটাই না হয়েছিল। তাই, হঠাত রজতের কাছ থেকে এমন একটা প্রস্তাব পেয়ে ভীষণ ভাল লাগছে সুমিতার। চারটেয় পৌঁছতে গেলে আর তিন ঘন্টার মধ্যেই তো বেরিয়ে পড়তে হবে সুমিতাকে।
বেরনোর আগে চটজলদি কাজগুলো সেরে ফেলতে হবে, কিন্তু লক্ষীর মা তো এখনও কাজেই এল না। হঠাত ফোনটা বেজে উঠতে দৌড়ে যায় সুমিতা রজতের ফোন ভেবে, কিন্ত ওপাশ থেকে ভেসে আসে ‘আমি অনীশ বলছি।
স্যার আমাকে বলেছেন আপনার কাছ থেকে আট হাজার টাকা নিয়ে আসার জন্য। আপনার ঠিকানাটা একটু বলবেন?’ সুমিতা ঠিকানাটা দিয়ে বলে ‘তাড়াতাড়ি চলে এস, আমি বেরবো কিন্তু।‘ মিনিট পনেরোর মধ্যেই বাড়ি এসে হাজির অনীশ। সুমিতা ওকে টাকাটা দিয়ে বলে ‘আচ্ছা, তোমার স্যার ফোন ধরছেন না কেন?’ অনীশ একই কথা জানায় যে স্যার আজ সারাদিন মিটিঙে ব্যাস্ত, তাই ওনাকে ফোনে পাওয়া সম্ভব নয়। বাড়ির সমস্ত কাজ সেরে সুমিতা চারটের একটু আগেই কফি হাউসের সামনে পৌঁছে অপেক্ষা করে রজতের।

চারটে বাজতেই সুমিতার মনটা আনন্দে ভরে ওঠে – এই বুঝি রজত বইয়ের ঝোলা নিয়ে এল বলে। ঘন ঘন এদিক ওদিক তাকাতে থাকে সুমিতা, কিন্তু দেখা নেই রজতের। ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে চলেছে – সাড়ে চারটে, পাঁচটা, সাড়ে পাঁচটা। সুমিতার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম, তবুও ভাবে হয়তো এতো বই দেখেশুনে কিনতে একটু সময় নিচ্ছে – এখুনি নিশ্চয় এসে পড়বে রজত। ফোনের পর ফোন করে করে চলেছে সুমিতা, কিন্তু সেই একই উত্তর যে ফোন বন্ধ আছে – তাহলে কি মিটিঙের পর ফোনটা চালাতে ভুলে গেল? ছটা বাজে, আর পারছে না সুমিতা দাঁড়িয়ে থাকতে। কোমর থেকে পা পর্যন্ত অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে, সাথে ঘেমে গলদঘর্ম। তাছাড়া, রজতের ওপর ভীষণ রাগ হচ্ছে – একটা খবর তো দিলই না, উপরন্তু নিজের ফোনটা বন্ধ করে রেখেছে। সামনে একটা ট্যাক্সি দেখে সোজা রওনা দেয় সুমিতা বাড়ির দিকে। বাড়ি ফিরে রজতকে দেখে নিজেকে সামলাতে না পেরে চিৎকার করে বলে ওঠে ‘এভাবে আমাকে অপদস্থ না করলে কি চলছিল না? কি ক্ষতি করেছি আমি তোমার, যে খাবারের লোভ দেখিয়ে টানা দু’ঘন্টা রোদের মধ্যে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখলে আমাকে? চপ, কাটলেট খেতে ভালবাসি বলে, নিজের বউকে এভাবে কষ্ট দিলে? আর কোনদিন যদি তোমার সাথে আমি কোথাও খেতে গিয়েছি।‘ সুমিতাকে এতটা রেগে যেতে দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ফ্যালফ্যাল করে ওর দিকে চেয়ে বলে ‘আমি তোমাকে কখন রাস্তায় দাঁড়াতে বললাম আর খাবার ব্যাপারটাই বা কি – কিছুই তো বুঝতে পারছি না?’ সুমিতা আবার চেঁচিয়ে ওঠে ‘বুঝতে পারবে কি করে, স্রেফ ভুলে মেরে দিয়েছে নিশ্চয়।
শুধু শুধু SMS টা করার কি দরকার ছিল? তুমি কি ভেবেছিলে যে একদিন কফি হাউসে খাইয়ে আমার মাথা কিনে নেবে, তাও যদি সত্যি খাওয়াতে।’রজত আরও ধন্ধে পরে যায় সুমিতার কথা শুনে, বলে ওঠে ‘তোমার হেঁয়ালি ছেড়ে ব্যাপারটা এবার পরিষ্কার বলবে কি?’ রজতের কথা শুনে সুমিতা রাগ আর ক্ষোভে ফেটে পরে ‘অবাক হয়ে যাচ্ছি তোমার কথা শুনে, নিজে SMS গুলো টাইপ করে পাঠালে আমাকে, আর এখন আমাকে বলছ খুলে বলার জন্য? আমাকে নাহয় রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখার কথা ভুলে গেছ, তবে এটা যেন বোল না যে তুমি বই কেনার জন্য তোমার ছাত্র অনীশকে আট হাজার টাকা দিতে বল নি।’ এবার সতিই সব কিছু গণ্ডগোল হয়ে যাচ্ছে রজতের, মনে হচ্ছে সব যেন ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে ‘প্লীজ সুমিতা, বিশ্বাস কর আমি কিচ্ছু জানি না এসব ব্যাপারে। তুমি পুরো ঘটনাটা খুলে বল আমাকে।’ সুমিতার মোবাইলে নিজের নাম্বার থেকে পাঠানো SMS গুলো দেখে অবাক হয়ে যায় রজত। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দেখে ‘একি, এটার সুইচ বন্ধ হল কি করে?

কি মুশকিল, সুইচ অন করতে দেখাচ্ছে যে সিম কার্ডটাই নাকি নেই।’ ঘোরতর চিন্তায় পড়ে যায় রজত ‘অনীশ নামে আমার কোনও ছাত্রই নেই – তবে কে নিয়ে গেল টাকাটা? আচ্ছা, কেমন দেখতে ছেলেটাকে – রোগা, লম্বা, ছাগল দাড়ি আছে কি?’ রজত বুঝতে পারে এর পেছনে অবশ্যই কোনও চক্রান্ত আছে, এবং তার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র টাকা আদায় নয়, সাথে ওদেরকে হেনস্থা করা। এর একটা বিহিত করতেই হবে, আর যে এই কাজ করেছে তাকে শাস্তি পেতেই হবে। সারাটা রাত জেগে ভেবে চলে কে হতে পারে এই চক্রান্তের মাথা যে এমন শত্রুতা করবে ওর সাথে।

মনে হয় একবার অঙ্কের শিক্ষক হিমাদ্রি বাবুর সাথে বেশ কথা কাটাকাটি হয়েছিল ছেলেদের হোম ওয়ার্ক কম দেওয়ার জন্য, আবার সেদিন তো স্কুলের কেয়ারটেকার রামপ্রসাদকে খুব বকেছিল ছুটির আগে গেট খুলে দেওয়ার জন্য। এছাড়া বেয়াদপ ছাত্রদের তো বকাবকি লেগেই থাকে। পরদিন স্কুলে গিয়ে থেকে রজতের শুরু হয়ে যায় রহস্যানুসন্ধান। সারাটাদিন স্কুলের প্রতিটি স্টাফ, শিক্ষক এবং ক্লাসের ছাত্রদের প্রতি নজরদারি চালিয়ে রজত শেষপর্যন্ত একটা অনুমানে আসতে পেরেছে, আর তাই আজই এই রহস্যের সমাধান হওয়া প্রয়োজন।
রজতের ফোন পেয়ে সুমিতা অবাক হয়ে বলে ‘গতকাল তোমার ছাত্র অনীশের জন্য অমন হয়রানি হল আমার, আজ তুমি বলছ আবার সেই বিকেল চারটের সময় তোমাদের স্কুলে যেতে?’ রজত বলে ‘দোষী খুঁজে বের করার জন্যই তো তোমাকে ডাকছি, আর কেনই বা বিশ্বাস করছ না যে অনীশ আমার ছাত্র নয়?‘ সুমিতা স্কুলে আসা মাত্র রজত ওকে বলে ‘এই ঘরে একটু অপেক্ষা কর, কুনালের বাবা এখনই এসে পড়বেন’। ‘সুমিতা আবার অবাক হয়ে বলে ‘কি ব্যাপার বল তো? কে এই কুনাল, আর তার বাবা কেনই বা আসছেন?’ রজত একটু হেসে বলে একটু অপেক্ষা করলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে কুনালের বাবা এসে হাজির। রজতই পরিচয় করিয়ে দেয় ‘ইনি আমার ছাত্র কুনালের বাবা আর এই হচ্ছে আমার স্ত্রী সুমিতা। হঠাত এভাবে আপনাকে ডেকে আনার জন্য আমি খুবই দুঃখিত, তবে সুমিতাকেও তড়িঘড়ি তৈরী হয়ে আসতে হয়েছে।’ কুনালের বাবা বলেন ‘দুঃখিত হবার কোনও কারন নেই, আমার ছেলের শিক্ষক হিসেবে আপনি যখন প্রয়োজন আমাকে ডাকতে পারেন।

তবে, হঠাত এমন জরুরী তলব কেন যদি বলেন – ওকি আজকাল পড়াশোনা ঠিকমত করছে না? কিন্তু, কুনাল তো সব পরীক্ষাতেই ক্লাসে ভাল ফল করে এসেছে।’ রজত হেসে বলে ‘পড়াশোনা তো ঠিকই করে কুনাল, এবং ও আমার প্রিয় ছাত্রদের মধ্যে একজন। কিন্তু আপনার কাছে আমি প্রথমে জানতে চাই যে ওকে ওই দামি মোবাইলটা কিনে দেবার কি প্রয়োজন ছিল? আপনি তো স্কুল জীবনে পকেটে ফোন নিয়ে ঘুরতেন না কারন তখন যন্ত্রটার আবিষ্কারই হয় নি, এতে কি খুব অসুবিধে হয়েছিল আপনার?’ কুনালের বাবা বলেন ‘আমি আপনার সাথে সম্পূর্ণ একমত যে একজন ছাত্রের কাছে মোবাইল ফোন থাকা কখনই জরুরী নয়। তবে কি করি বলুন, সব বন্ধুদের কাছে ফোন দেখে দিনের পর দিন মায়ের কাছে এমন আবদার চালিয়ে গেছে যে শেষপর্যন্ত ওর মা আমাকে বাধ্য করায় ওই ফোনটা কিনে দিতে। কিন্তু, কি ব্যাপার বলুন তো – হঠাত ফোন নিয়ে এমন জরুরী তলব?’ রজত বলে ‘কারন একটা নয়, অনেক। গত একমাস যাবত আমি লক্ষ্য করছি কুনালের পড়াশোনায় কোনও মন :সংযোগ নেই, সারাটাক্ষন ওটাকে নিয়ে খেলাই ওর এক অদ্ভুত নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে ছেলে ক্লাসের সমস্ত কাজ চটজলদি করে ফেলত, প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর তৎক্ষণাৎ দিয়ে দিত, এমনকি নিজে হাজারো প্রশ্ন করতো, এখন আর তাকে প্রশ্ন করে উত্তর পাওয়াই যায় না। ওর মত এক মেধাবী ছাত্রের এমন অধঃপতন শিক্ষক হিসাবে কি মেনে নেওয়া যায়? তাই, দু’দিন আগে কুনালকে মোবাইলটা নিয়ে খেলতে দেখে নিজেকে সামলাতে পারি নি নিজেকে। একহাতে ওর চুলের মুঠি ধরে অন্য হাতে সজোরে এক চড় বসিয়ে দিই ওর গালে। সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করেছিল মোবাইলটাকে আগলে রাখার, কিন্তু আমিও মনঃস্থির করে ফেলি যে ওটাকে কুনালের কাছ থেকে সরাতেই হবে, নয় তো ভবিষ্যৎ অন্ধকার। মোবাইলটা ধরে সজোরে একটান দিতেই কান্নায় ভেঙ্গে পরে কুনাল, আমার পা’দুটো জড়িয়ে ধরে কাকুতি মিনতি করতে ওটা ফিরিয়ে দেবার জন্য। ওর কথায় কান না দিয়ে মোবাইলটা ছুঁড়ে দিই, আর ওটা দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে টুকরো টুকরো হয়ে লুটিয়ে পড়ে মেঝেতে। কাঁদতে কাঁদতে ছুটে যায় ওদিকে, পাগলের মত চেষ্টা করতে থাকে টুকরো গুলোকে একত্র করে জোড়া দেবার, কিন্তু শীঘ্রই বুঝে যায় যে ওটাকে আর সচল করা সম্ভব নয়। কান্না থামিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ে, দুচোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসে আমার প্রতি ক্রোধ। হয়তো প্রতিহিংসার সিদ্ধান্ত তখনই নিয়ে ফেলেছিল।’ সুমিতা কিছুতেই বুঝতে পারে না কে এই কুনাল আর কেনই এই জন্য সুমিতাকে ডেকে আনল রজত। কুনালের বাবা বলে ওঠেন ‘স্যার, আমার সব গণ্ডগোল হয়ে যাচ্ছে। প্রতিহিংসার কথা কি যেন বলছিলেন? আপনার কথামতো মোবাইলটা ইতিমধ্যে ভেঙ্গে গিয়েছে, কিন্তু আমি তো কুণালকে কাল রাত্রেও মোবাইল থেকে ফোন করতে…।’ কুনালের বাবাকে থামিয়ে রজত বলে ওঠে ‘সমস্ত গণ্ডগোলটা তো ওইখানেই। সুমিতার টানা দুঘণ্টা তেতে পুড়ে রোদে দাঁড়িয়ে থাকা, আমার কষ্টার্জিত আট হাজার টাকা লোপাট আর আপনার কাজকর্ম ফেলে এখানে দৌড়ে আসা – সবই ওই মোবাইল ম্যানিয়ার ফল’। বিস্ময়ে কিছুক্ষন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকার পর কুনালের বাবা বলেন যে তাঁর মগজে কিছুই ঢুকছে না। রজত হেসে বলে ‘একটু অপেক্ষা করুন, সমস্ত পরিষ্কার হয়ে যাবে।’ হাঁক পড়ে রামপ্রসাদের ‘ক্লাস টেনের কুণালকে ডেকে আনো এই ঘরে।’ কুনাল ঘরে ঢুকতেই রজত বলে ওঠে ‘এই যে অনীশ, তোমার জন্যই এনারা অপেক্ষা করছেন।’ মুহূর্তের মধ্যে পরিবেশটা বদলে যায় ঘরের। সুমিতা উত্তেজিত হয়ে বলার চেষ্টা করে এই ছেলেটিই তো এসেছিল…।

‘সুমিতা কথা শেষ করার আগেই কুনালের বাবা কিছুটা বিরক্তির স্বরে বলে ওঠেন ‘এটা কেমন ব্যাপার স্যার যে আপনি আমার ছেলেকে অন্য নামে ডাকছেন?’ লজ্জা এবং ভয়ে কুনালের মাথা ইতিমধ্যেই অবনত। রজত এবার পুরো ঘটনাটা তুলে ধরে সকলের কাছে – কি ভাবে তার অলক্ষ্যে ওর মোবাইলের সিম কার্ডটা হাতিয়ে সেই নাম্বার থেকে সুমিতার কাছে এসএমএস যায়, সুমিতার কাছে থেকে আট হাজার টাকা বাগিয়ে একই মডেলের মোবাইল কেনা ইত্যাদি।‘ কুনালের বাবা এতক্ষন লজ্জায় মাথা হেঁট করে বসেছিলেন। রজতের কথা শেষ হওয়া মাত্র রাগে ফেটে পড়েন। সমস্ত শরীরটা থরথর করে কাঁপছে, চিৎকার করে ছেলের দিকে এগিয়ে যান ‘আমার ছেলে হয়ে তুই কিনা চুরির টাকায় মোবাইল কিনেছিস, আমি তোকে বাড়ি ঢুকতে দেব না – পুলিসে দেব………………’ রজত পরিস্থিতি সামলে বলে ‘আমার মনে হয় কেবল একা কুণালকে অপরাধীর আসনে না বসিয়ে আমাদেরও ভেবে দেখা প্রয়োজন যে আমরা কি নিজেদের দায়িত্ত্ব ঠিকমতো পালন করেছি? একটা ছোট ছেলে, যার সামনে বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা, আবদার করা মাত্রই আপনারা অতো দামি একটা ফোন তাকে কিনে দিলেন? ছেলেটা ক্রমশ পড়াশোনার লক্ষ্য থেকে সরে এসে ওই ফোনটার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে সেটা কিভাবে আপনাদের চোখ এড়িয়ে গেল? সত্যি কথা বলতে কি আমিও কি পারবো মুহূর্তের ক্রোধে ওর প্রিয় ফোনটা ভেঙ্গে দেওয়ার পক্ষে কোন যুক্তি খাড়া করতে? আসলে অপছন্দের কাজ করতে দেখে অহংটা এতটাই বড় হয়ে উঠেছিল,
যে ফোনটা ভেঙ্গে দেওয়াই যে সমস্যার সমাধান নয় সেটা বোঝার মানসিক পরিস্থিতি আমার ছিল না।সুমিতারও হয়তো অচেনা ওই ছোট ছেলেটার হাতে অতগুলো টাকা দেওয়ার আগে একটু ভাবা উচিত ছিল। আপনিও তো একবারও ভেবে দেখলেন না যে কেন ওই একই মডেলের ফোনটা কেনার জন্য টাকা চুরি করতে হল – হয়তো আপানারা ওকে সত্যকে প্রকাশ করার স্বাচ্ছন্দ্য দিতে পারেননি। এতক্ষন কুনাল মাথা হেঁট করে দাঁড়িয়েছিল, চোখের জলের ফোঁটাগুলো তার সমস্ত গ্লানি ধুয়ে মুছে আছড়ে পড়ছিল মাটিতে। ধীরে ধীরে পকেট থেকে ছোট্ট সিম কার্ডটা বের করে রজত স্যারের হাতে দিয়ে বলে ‘এতবড় অপরাধ করলাম, তাও আপনি কেন বকলেন না, মারলেন না?’

এটি একটি সত্য ঘটনা

গরমে ত্বকের যত্ন: রোদ, ঘাম ও ধুলো থেকে ত্বককে সুরক্ষিত রাখার সম্পূর্ণ গাইড

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *