এবং একদিন | তাজনীন মুন

‘-মা, এমা,  দেইখা যাও আব্বায় আইজ কত্তো বাজার পাঠাইছে। সুগন্ধি চাইল রান্তে কইছে আইজ। রমিলা কিছু জমানো টাকায় কয়েকটা নারিকেল কিনেছিলো -ছেলে নাড়ু খেতে খুব পছন্দ করে ।নারিকেল কোড়ানোর মধ্যেই ছেলের ডাক শুনে ছুট্টে এলো আর এতো বাজার দেখে নিজের উত্তেজনা চেপে মুখে বিরক্তি ভাব এনে বললো-” তোর বাপ কি জমিদারের প্যাটের থিকা আইছিলো, নাকি জমিদার বইনা গেছে? এডি পাঠাইছে ক্যান কইছে কিছু? ” – না তো। আমারে খালি বাজার হাতে দিয়া কইলো তর মারে কবি আইজকা মাংস পুলাও রান্তে।
– রান্তে কইলেই হইলো? সাথে আরো মশল্লাপত্তর দেয়া লাগবো এডি কে দিবো? যা যা তোর বাপরে যায়া ক আমি ডাকি। সবুজ এক গাল হেসে ছুট্টে দৌড় দিলো ওদের দোকানের দিকে। ওদের ছোট্ট দোকান। যে দোকানে বিক্রি হয় মৃত্যুর পরে লাশকে কবরস্থ করার যাবতীয় সামগ্রী। কাফনের কাপড়, খাটিয়া,গোলাপ জল,আগরবাতি, সুগন্ধি। ক্রেতার সমাগম খুব একটা হয় না এই দোকানে। সবুজ দিনের বেশির সময় ওর বাবার সাথে থাকে সেখানেই নতুন স্কুলের পড়া সারে সবুজ। বাবাকেও শেখায়। দোকানের আশপাশ দিয়ে কেউ হেটে গেলে সবুজের বাবা গর্ব করে তার ছেলের বিদ্যে জাহির করেন। “আব্বা, মায় তোমারে ডাকতাছে। আমি বইলাম এয়ানে,তুমি যাও। মায়ে আইজ নাড়ুও বানায় জানো!  আমি আইজ ম্যালা খামু।0
” – হাপাতে হাপাতে একটানা বাবাকে বলেই সবুজ বসে পরে দোকানে। রমিলা বেগম ওইদিকে উদ্বেগ,  হয়তো ঘরে মেহমান কেউ আসবে। কতটুকু রাঁধবে, কতটুকু মশলা বাজার থেকে কিনে আনবে। এরই মধ্যে নিজের স্বামীকে দেখে ছুট্টে গিয়ে বললো-” বাসায় কি কেউ আইবো? আইজ এতো কিছু ক্যান?” – আরে কেউ আইবো না। আমরাই পেট ভইরা খামু। দোকানের সামনের বাড়িত এক বাসার সবডি মানুষ মরছে। আমার দোকান থিকাই সব গেছে বুঝলা! আইজ ম্যালা কামাইছি! দামও হাকাইছি ভালোই। – সবডি! কন কি? ক্যামনে মরলো? -এত জাইনা কি করবি? তোরে রান্তে কইছি রান্ধ। শুনছি কাইল নাকি হরতাল ডাকছে। কাইলো ইনকাম খারাপ হইবো না মনে অয়। -আইচ্ছা আপনে যাইয়া সবুজরে পাঠান।বাজারে যাওন লাগবো।
কথা শুনেই রওনা দিলো হেলাল। মনে মনে ভাবছে রোজ রোজ এমন  বেচাকেনা হলে এক ওয়াক্ত নামাজও বাদ দিতো না সে। একজনের জিনিসপত্র বিক্রি করতে পারলেই চলে যাবে প্রতিদিন। কিন্তু প্রতিদিন একজন পাওয়াই যায় না।টানা হরতালে যদি তার ইনকাম কিছু বাড়ে তাহলে দোকানটাকে একটু সাজাবে। বড় করে নেমপ্লেট লাগাবে ‘শেষ বিদায়’। ভাবতে ভাবতেই দোকান এসে গেলো হেলালের। ছেলেকে ডেকে বললেন -” তর মায় ডাকে তরে যা। একদিন না পড়লে কিচ্চু হইবো না। যা বাপ!” সবুজ আবারো একগাল হেসে দৌড়ে চলে যাচ্ছে।
হেলাল ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে আর মনে মনে  প্রার্থনা করছে দোকানে ক্রেতা যাতে বাড়ে একটু, ছেলেটাকে ভালো স্কুলে ভর্তি করতে হবে। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়েই আছে । এরই মধ্যে শুধু দেখলো একটা মাইক্রোবাস চলে গেলো সবুজের উপর দিয়ে।  একটা চিৎকার! আর এক খন্ড ভিড় এখন হেলালের চোখে! আরেকটি মৃত্যু ,যেই মৃত্যু হেলাল চায়নি!

আরো পড়তে পারেন...

অধ্যাপক-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-প্রথম পরিচ্ছেদ

কলেজে আমার সহপাঠীসম্প্রদায়ের মধ্যে আমার একটু বিশেষ প্রতিপত্তি ছিল। সকলেই আমাকে সকল বিষয়েই সমজদার বলিয়া…

মহান পূজারী— সীমা ব্যানার্জী

“হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন” –জয়। -কি গিফট এনেছো মা আমার জন্য। -বাইরে ভীষণ স্নো পড়ছে সোনা। চারিদিকে…

ছোট্ট তানিশা

ছোট্ট তানিশা, আজ খুব খুশি । আজ সে তার বাবা মায়ের সঙ্গে শপিং করতে যাবে,…