এক রূপকথার রাজকন্যার গল্প!

এক দেশে ছিল এক ছোট্ট রাজকন্যা। কিন্তু রাজকন্যার মনে বড় দুঃখ ….. তাঁর কোন বন্ধু নেই! বিশাল রাজপ্রাসাদের চৌহ্দ্দীর ভিতরেই সারাটা দিন কাটে রাজকন্যার। কত দাস-দাসী… কত পাইক-পেয়াদা!…কিন্তু রাজকন্যার কোন সাথী নেই, কোন বন্ধু নেই …… মনের সুখ-দুঃখের দু’টো কথা বলে সময় কাটানোর কেউ নেই! তাইতো রাজকন্যার মনটা খুব ভার!

রাজপ্রাসাদের ভিতরে ছিল খুব সুন্দর একটা বাগান। সেই বাগানে কত নাম না জানা গাছ…কত ফুল! কিন্তু ফুলের বাগানেও রাজকন্যার ভাল লাগতোনা…. তাঁর কোন বন্ধু নেই যে! একদিন রাজকন্যা দেখতে পেল….সেই বাগানের এক কোনায় ফুটে রয়েছে একটা চমৎকার ছোট্ট ঘাসফুল। ছোট্ট ঘাসফুলটিকে রাজকন্যার মনে ধরলো!

রাজকন্যা ঘাসফুল-কে বললো-
– তুমি আমার বন্ধু হবে?
– না, তা কি করে হয়?! তুমি রাজকন্যা… আমি সামান্য এক ঘাসফুল!
– তাতে কি হয়েছে? তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
– তা হয়না রাজকন্যা। আমি বাগানের কোনায় অনাদরে ফোটা এক ঘাসফুল! রাজপ্রাসাদে আমার স্থান হবে কিভাবে?! তা’ছাড়া আজ রাতেই আমি ঝরে পড়ে যাব। তুমি চাইলেও আমি তোমার বন্ধু হতে পারিনা!

রাজকন্যার মনটা আরও খারাপ হয়ে গেল।

পরদিন বাগানে রাজকন্যা দেখা পেল ছোট্ট একটা প্রজাপতির। ছোট্ট রঙিন প্রজাপতি….. এ’ফুল থেকে ও’ফুলে উড়ে বেড়াচ্ছে। বাহ্ …খুব সুন্দর প্রজাপতি-তো! কি চমৎকার ইচ্ছে মত ঘুরে বেড়ায় যে’দিকে মন চায়! রাজকন্যার মনে ধরলো…..

রাজকন্যা প্রজাপতিকে তাঁর বন্ধু হতে অনুরোধ করলো-
– ছোট প্রজাপতি, তুমি কি আমার বন্ধু হবে?
– না ভাই, রাজকন্যার বন্ধু হয়ে কাজ নাই!
– কেন?!…. অবাক হলো রাজকন্যা।
– আকাশের সাথে আমার মিতালী… বাতাসে ভর করে আমি ভেসে বেড়াই আপনমনে! রাজপ্রাসাদে আমার মন টিকবে কেন?!
– তুমি যা চাইবে… তোমাকে তাই দেব। আমার বন্ধু হও প্লিজ।
– তুমি কি আমাকে খোলা আকাশ দিতে পারো!? … অবুঝ সবুজ প্রকৃতি?!….. মুক্ত বাতাস?!….ফুলের মাতাল সুবাস?!……না ভাই, তুমি বরং অন্য কাউকে দেখ!

রাজকন্যা খু-উ-ব কষ্ট পেল…তাঁর মন খারাপ হলো! কেউ তার বন্ধু হতে চায় না! সে মন খারাপ করে প্রাসাদের জানালার ধারে বসে রইল। খোলা জানালা …… রাজপ্রাসাদের বাইরে তাকিয়ে রইল সে। বাইরে কি সুন্দর খোলা প্রান্তর….. বয়ে চলা নদী…আর নদীর ধারে লাল ফুল ফুটে থাকা বিশাল একটা গাছ… থোকা থোকা লাল ফুল! …..”ইস! ওই লাল ফুলগুলো যদি আমার বন্ধু হতো!”

এমন সময় একটা চড়ুই পাখি রাজকন্যার জানালার পাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল…..
– চড়ুই পাখি.. ও চড়ুই পাখি, আমি ওই বড় গাছটায় ফুটে থাকা লাল ফুলগুলোর বন্ধু হতে চাই! তুমি কি আমায় বলবে… কিভাবে ওই ফুলগুলোর বন্ধু হওয়া যায়?
– ওই বড় গাছটায়….লাল ফুলগুলো? …ওগুলো-তো পলাশ ফুল!… ওই যে থোকা থোকা ফুটে রয়েছে লাল পলাশ!
– হ্যাঁ…আমি ওই পলাশ ফুলের বন্ধু হতে চাই!
– বেশ-তো! তুমিও বন্ধু হবে! আমিও পলাশ ফুলের বন্ধু! অনেকেই পলাশ ফুলের বন্ধু! তবে জানোতো….. যে কেউ কিন্তু পলাশ ফুলের বন্ধু হতে পারেনা।
– তাই নাকি?
– যারা মানুষকে ভালবাসেনা….দেশেকে ভালবাসেনা….. দেশের স্বাধীনতাকে সম্মান জানায়না….তাঁরা কিন্তু পলাশ ফুলের বন্ধু হতে পারেনা!
-কেন?
– ও-মা!…তুমি জানোনা বুঝি?!….. পলাশ ফুল কোন যেন-তেন ফুল নয়!…..ভাষার জন্য যারা দিয়ে গেছে প্রাণ, সেইসব মহান শহীদের রক্তে পলাশের রঙ লাল! শহীদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানাতেই পলাশের রঙ লাল! শহীদের চেতনাকে বুকে ধারণ করেই পলাশের রঙ লাল! তাইতো… ফেব্রুয়ারী এলেই ফোটে এই ফুল!
চড়ুই-এর কথাগুলো অবাক হয়ে শোনে রাজকন্যা। ভাললাগে চড়ুই-এর কথাগুলো। সে পলাশ ফুলের বন্ধু হবেই হবে… মানুষকে ভালবাসবে সে…দেশকে ভালবাসতে শিখবে সে!…. জানালায় দাঁড়িয়ে দূরে পলাশ ফুলের দিকে বিশ্ময় আর শ্রদ্ধাভরে তাকিয়ে থাকে রাজকন্যা!….বাতাসে দোল খায় পলাশের শাখা…থোকা থোকা লাল পলাশ আন্দোলিত হয়…. আশীর্বাদ জানায় নতুন প্রজন্মকে!

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!