এক বুজুর্গের দোয়ার বৃষ্টি

বাদশাহ হারুনার রশীদের খেলাফাতকালে একবার বাগদাদে দীর্ঘ অনাবৃষ্টির ফলে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। পরে একদিন শহরের অধিবাসীরা ওযু গোসল করে পাক পবিত্র হয়ে এক মাঠে একত্রিত হয়ে বৃষ্টির জন্য দোয়া করল। কিন্তু তাদের দোয়ায় বৃষ্টি বর্ষণ হল না। লোকেরা হাল না ছেড়ে প্রতিদিন এসে ঐ মাঠে একত্রিত হয়ে বৃষ্টির জন্য দোয়া করত। কিন্তু তথাপি ও আকাশে বৃষ্টির কোন আলামত দেখা দিল না।

একদিন এক কাফেরবেশী লোক সেই মাঠের এক পাশে এসে দাঁড়ালো। তার মাথার চুল ছিল এলোমেলো। তার সাথে তার তিনজন সুন্দরী কুমারী কন্যা ও ছিল। লোকটি সেই জমায়েতের এক পাশে দাঁড়িয়ে সকলকে সালাম করল। লোকেরা সালামের জবাব দেয়ার পর সে সকলকে লক্ষ্য করে প্রশ্ন করল ভাই সকল! তোমরা এখানে জমায়েত হয়েছ কেন? তারা জবাব দিল, হে শায়েখ! আমরা এখানে জড়ো হয়ে বৃষ্টির জন্য দোয়া করছি। কিন্তু বৃষ্টি হচ্ছে না, লোকটি আবার প্রশ্ন করল, আল্লাহ পাক কি শহর থেকে গায়েব হয়ে গেছেন, যে তোমরা খালি মাঠে এসে জমায়েত হয়েছ? আল্লাহ পাক তো সর্বত্রই হাজির নাজির। পাক কালামুল্লায় তিনি এরশাদ করেছেন, তোমরা যেখানেই থাক আল্লাহ পাক তোমাদের সাথে আছেন এবং তোমাদের আমল দেখছেন।

অবশেষে বাদশাহ হারুনার রশীদ এ ঘটনা জানতে পেরে ঐ শায়েখকে দরবারে ডেকে আনলেন। বাদশাহ অত্যন্ত তাজীমের সাথে শায়েখকে নিজের কাছে বসিয়ে আরজ করলেন- হে শায়েখ! আপনি আল্লাহ তায়ালার নিকট দোয়া করুন। আমার মনে হচ্ছে, আপনি আল্লাহর নেক বান্দা। হয়তো আপনার দোয়ার বরকতে আল্লাহ পাক আমাদের উপর রহমতের বৃষ্টি নাযিল করবেন।

বাদশাহের কথা শুনে একটু মৃদু হেসে বললেন, তুমি কি সত্যিই এটা কামনা কর যে, আমি তোমাদের জন্য দোয়া করি? বাদশাহ বললেন, হ্যাঁ, এবার শায়েখ বললেন, তবে শহরের সকল অধিবাসীকে বল, তারা যেন আমার সাথে আল্লাহ পাকের দরবারে তওবা করেন। বাদশাহর পক্ষ হতে শহরে তওবার এলান করা হলে সকলে এক স্থানে একত্রিত হয়ে শায়েখের সাথে তওবা করল।

অতঃপর শায়েখ সামনে এগিয়ে দুরাকাত নামাজ আদায় করলেন। নামাজ থেকে বাড়ী ফেরার পর তিনি স্বীয় কন্যাদেরকে ডানে বামে দাঁড় করিয়ে আকাশের দিকে হাত বাড়িয়ে মোনাজাত শুরু করলেন। শায়েখের দু-চোখ ভরে অজস্র ধারায় অশ্রু ঝরতে লাগল। শায়েখের মোনাজাত শেষ হবার পূর্বেই গোটা আকাশ ঘন কালো মেঘে আচ্ছন্ন হয়ে গর্জন করে প্রবল বর্ষণ শুরু করল।

বাদশাহ হারুনার রশীদ এ ঘটনায় সন্তুষ্ট হলেন। পরদিন প্রশাসনের সকল কর্মকর্তাদেরকে ডেকে এনে শাহী দরবারে ঐ শায়েখকে সংবর্ধনা দানের আয়োজন করলেন। কিন্তু যথা সময় শায়েখকে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না। পরে সন্ধান পাওয়া গেল যে, শায়েখ এখনও সেই মাঠে কাদামাটিতে সেজদায় পড়ে আছেন। বাদশাহর লোকেরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তার কন্যাদেরকে জিজ্ঞেস করল, শায়েখ সেজদা হতে মাথা তুলছেন না কেন? তারা উত্তর দিল, এটাই শায়েখ এর অভ্যাস। কখনো তিনি সেজদা করলে তিনদিন পর্যন্ত সেজদা হতে মাথা তুলেন না। বাদশাহ হারুনার রশীদ এ ঘটনা শুনে কাঁদতে লাগলেন। দীর্ঘ সময় কান্না করার পর তিনি আল্লাহ আপকের দরবারে আরজ করলেন, হে পরওয়ার দিগার আলম! তোমার নেক বান্দাদের উছিলায় আমাদের উপর বেশী বেশী রহমত নাযিল কর।

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।