এক আবদালের কৈশোরের ঘটনা
এক বুজুর্গ শায়েখ বলেন, একবার আমি আমার এক দোস্তের সাথে পালের নৌকায় চড়লাম। কিন্তু নৌকা ছাড়ার পরই বাতাস পড়ে গেল। ফলে মাঝি পুনরায় নৌকার নোঙ্গর করে রাখল। নৌকাতে আমার পাশেই এক সুদর্শন যুবক বসা ছিল। যুবক নৌকা হতে নেমে অদূরে একটি ঝোপের ভেতর অদৃশ্য হয়ে গেল। কিছু সময় পর আবার সে নৌকায় ফিরে এল। পরে সূর্য অস্ত যাওয়ার পর যুবক আমাকে এবং আমার সঙ্গীর কাছে বলল, ভাই! আর কিছু সময় পরই আমার ইন্তেকাল হবে। তোমাদেরকে আমার একটি অনুরোধ রক্ষা করতে হবে। আমার ইন্তেকালের পর আমার এই থলিতে রক্ষিত কাপড় দিয়ে আমার কাফন দেবে। অতঃপর আমার দাফন সম্পন্ন করে আমার দেহের পোশাক এবং এ বদনাটি তোমাদের সাথে নিয়ে যাবে। দূর শহরে পৌঁছার পর সর্ব প্রথম তোমাদের সাথে যে ব্যক্তি সাক্ষাৎ করে বলবে যে, আমার আমানতগুলো দিয়ে দাও। তাকে তোমরা এই বস্তুগুলো দিয়ে দিও।
বর্ণনাকারী বুজুর্গ বলেন, আমরা মাগরিবের নামাজ আদায়ের পর দেখলাম, ইতিমধ্যেই সে ইন্তেকাল করেছে। আমরা তাকে তীরে নামিয়ে গোসল দিলাম। অতঃপর তার থলি খুলে দেখলাম, এতে দুটি সবুজ কাপড় এবং একটি সাদা কাপড় রয়েছে। একটি ছোট পুটলীতে কর্পূর রয়েছে। আমরা তাকে কাফন পড়িয়ে সেই সমুদ্রের তীরেই তাকে দাফন করলাম।
যথাসময় সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আমাদের নৌকা ছুর শহরের ঘাটে এসে নোঙ্গর করল। আমরা শহরে প্রবেশ করা মাত্র এক সুদর্শন কিশোর এগিয়ে এসে আমাদেরকে সালাম করল। কিশোরের মাথায় একটি রেশমি রুমাল বাধা ছিল এবং তার দেহের কাপড়টি ছিল ঘামে ভেজা। সালাম-কালামের পরই সে বলল, আমার আমানত দাও। আমরা থলি হতে সে আমানত বের করে দিয়ে বললাম, তোমার বস্তু তুমি গ্রহণ করে আমাদেরকে দায়মুক্ত কর। তারপর আমরা বললাম, তুমি এই পার্শ্ববর্তী মসজিদে বসে আমাদের একটি জিজ্ঞাসার জবাব দিলে আমরা খুশী হব।
পরে সে এসে মসজিদে এলে আমরা তাকে জিজ্ঞেস করলাম, যে যুবক মৃত্যুবরণ করেছে তার পরিচয় কি, আর তার থলিতে কাফনের কাপড়ই বা এল কোথা থেকে এবং তোমার সাথে তার সম্পর্ক কি? আমাদের প্রশ্নের জবাবে সে বলল, সেই যুবক ছিলেন পৃথিবীর চল্লিশ জন আবদালের মধ্যে একজন। তার কাফনের ব্যবস্থা হযরত খিজির (আঃ) করেছেন। আর আমি হলাম যুবকের স্থলাভিষিক্ত। অতঃপর সে যুবকের দেয়া পোশাক পরিধান করে নিজের গায়ের পোশাকটি আমাদের হাতে দিয়ে বলল, আমার এই কাপড় যদি তোমাদের কোন কাজে না আসে তবে তা বিক্রি করে তার মূল্য দান করে দিও। একথা বলেই সে কোথায় চলে গেল।
আমরা তার পোশাকগুলো বিক্রির জন্য এক ফেরী ওয়ালার নিকট দিলাম। কিছুক্ষণ পর একদল মানুষসহ সেই ফেরিওয়ালা ফিরে এল এবং আমাদের কে এক বিরাট প্রাসাদে নিয়ে গেল। সেখানে পূর্ব হতেই অনেক মানুষ জড়ো হয়েছিল তাদের মধ্যে এক বৃদ্ধ কাঁদতে ছিলেন। বাড়ীর ও অভ্যন্তরে থেকেও এক মহিলার কান্নার আওয়াজ আসছিল।
লোকেরা আমাকে সেই বৃদ্ধের সামনে নিয়ে গেলে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এ পোশাক কোথায় পেয়েছ? জবাবে আমি বিস্তারিত ঘটনা বললে তিনি সিজদায় পড়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর সেজদা হতে মাথা তুলে বললেন, আল্লাহ পাকের অসংখ্য শুকর যে, তিনি আমাকে এমন নেক সন্তান দান করেছেন। অতঃপর তিনি অন্দর মহল হতে ক্রদনরতা সেই মহিলাকে ডেকে এনে আমাকে বললেন, তুমি ঐ ঘটনা আবার বর্ণনা কর। আমার বিবরণ শেষ হতেই তিনি বৃদ্ধকে বললেন, আল্লাহ পাকের কৃতজ্ঞতা আদায় কর যিনি তোমার গর্ভে ভাগ্যবান সন্তান দান করেছেন।
পোশাক পরিহিত এক বুজুর্গ কোরআন শরীফ তিলাওয়াত করছেন। আমাকে দেখতে পেয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কিয়ামত কায়েম হয়েছে কি? আমি বললাম না। তিনি বললেন, আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুন। ইটটি যথাস্থানে রেখে দাও। অতঃপর আমি খসে পড়া সেই ইটটি পূর্বস্থানে রেখে দিলাম।
অপর এক ঘটনার উল্লেখ করে এক বুজুর্গ বর্ণনা করেন, আমি বসরা নগরী হতে হলা নগরীতে যাবার উদ্দেশ্যে এক নৌকাযোগে যাত্রা করলাম। তিন ব্যক্তি আমাকে বিদায় সম্ভাষণ জানাতে নৌকা পর্যন্ত আমার সাথে আসল। মাঝি নৌকা ছাড়ার কিছুক্ষণ পরই হাল ছেড়ে আমাদের সাথে এসে বসে রইল। যাত্রীরা তাকে জিজ্ঞেস করল, তোমার কি হয়েছে?
জবাবে সে হাতের ইশারায় সকলকে চুপ থাকতে বলল। অতঃপর চোখের পলকে আমরা ইলা লগরীর বন্দরে এসে উপস্থিত হলাম। অথচ আমাদের সাথে যে জাহাজটি বসরা বন্দর ত্যাগ করেছিল তা দীর্ঘ বিলম্বের পর আছরের সময় এসে এখানে নোঙ্গর করল।
জাহাজের যাত্রীরা আমাদের নৌকার মাঝিকে তার দ্রুত আগমনের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সে বলল, হঠাৎ আমি দেখতে পেলাম, এক অশ্বারোহী এদিকে আসছে। এমন সুন্দর সওয়ারী ইতোপূর্বে আমি আর কখনো দেখিনি। সে একটি স্বর্ণের শিকল নৌকায় নিক্ষেপ করল। শিকলের প্রান্ত নৌকার মাস্তুলে আটকালো সে দ্রুত ঘোড়া ছুটাল আর তার পেছনে পেছনে নৌকা চলতে লাগল। এভাবেই আমরা ইলা বন্দরে এসে পৌঁছলাম।