একটি মেয়েকে অপহরণ করার ঘটনা
বর্ণনায় হযরত নযর বিন উমর হারিসীর সূত্রে ইমাম শাঅবী (রহঃ) –
জাহিলিয়্যাতের যুগে আমাদের এলাকায় একটি কুয়া ছিল। আমি আমার মেয়েকে একটি পেয়ালা দিয়ে ঐ কুয়া থেকে পানি আনতে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সে ফিরে আসতে দেরি করে। আমরা তাকে খুঁজতে বের হই। অবশেষে হতাশ হয়ে পড়ি এবং তাকে পাওয়ার আশা ছেড়ে দেই। আল্লাহর কসম! এক রাতে আমি ঘরের ছাদে বসে ছিলাম। এমন সময় একটি ছায়া মূর্তি আমার নজরে পড়ল। কাছে আসতে দেখলাম, সে ছিল আমার সেই মেয়ে। আমি তাকে উদ্দেশ্য করে বললাম, তুমি কি আমার মেয়ে? সে বলল, জী হ্যাঁ, আমি তোমার মেয়ে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এত দিন কোথায় ছিলে তুমি? সে বলল, তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে যে তুমি এক রাতে আমাকে কুয়ার পানি আনতে পাঠিয়েছিলে। সেই সময় একটা জ্বিন আমকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল। তাই আমি তার কাছেই ছিলাম। শেষ পর্যন্ত তার ও একদল জ্বিনের মধ্যে যুদ্ধ হয়। তখন সেই জ্বিন আমার কাছে প্রতিজ্ঞা করল যে, সে যদি ওদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জিতে যায়, তবে আমাকে ফিরিয়ে দিয়ে যাবে। সুতরাং সে জিতে গেছে, তাই আমাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে।
আমি দেখলাম, মেয়েটির ফর্সা রঙ কালচে হয়ে গিয়েছিল। চুল ঝরে গিয়েছিল এবং শরীর শুকিয়ে গিয়েছিল দড়ির মতো। পরে আমাদের কাছে থাকতে থাকতে সে সুস্থ হয়ে উঠে। এক সময় ওর চাচাত ভাই ওকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। ফলে আমি ওকে তার সাথে বিয়ে দিয়ে দেই।
সেই জ্বিনটা (মেয়ের সাথে দেখা করার জন্য) মেয়েকে একটা বিশেষ সাংকেতিক চিহ্ন জানিয়ে রেখেছিল। মেয়েটি যখন সেই চিহ্ন দেখত, তখন বুঝতে পারত যে, জ্বিন তাকে ইশারা করছে।
মেয়েটির স্বামী কিন্তু তাকে সবসময় নিন্দা করত। একদিন মেয়েকে তার স্বামী বলে – তুমি মানুষ নও, হয় জ্বিন না হয় শয়তান। এমন সময় গায়েব থেকে কেউ বলে উঠল – ও তোমার কি ক্ষতি করেছে, হে? ওর দিকে এগুলে তোমার চোখ ফুটো করে দেব। জাহিলিয়্যাতের যুগে আমি আমার মর্যাদা-মাহাত্মের কারণে ওকে রক্ষা করেছি। এবং মুসলমান হবার পর ইসলামের খাতিরে ওকে হিফাযত করব।
যুবকটি তখন বলল – তুমি আমাদের সামনে আসছ না কেন? তাহলে আমরাও তোমাকে দেখতাম। জ্বিন বলল – আমরা অমনটা করতে পারি না। কেননা, আমাদের দাদা, আমাদের জন্য তিনটি প্রার্থনা করেছিলেন – ১) আমরা নিজেরা সবাইকে দেখব কিন্তু কাউকে আমাদের দেখতে দেব না। ২) আমরা মাটির আর্দ্র স্তরে থাকব। এবং ৩) আমাদের প্রত্যেকে বৃদ্ধ হবার পর ফের যুবক হয়ে উঠবে।
যুবকটি বলল – আচ্ছা তুমি কি পালাজ্বরের ওষুধ জানো?
জ্বিন বলল – কেন জানব না! মাকড়সার মতো প্রানী পানিতে দেখেছ তো? তাই একটা ধরবে। এবং তার যে কোনও একটা পা নিয়ে তুলোর সুতায় জড়িয়ে বাম কাঁধে বাঁধবে।
যুবকটি ওমন করল। ফলে তার পালাজ্বর একেবারের মতো ছেড়ে গেল। যুবকটি সেই জ্বিনকে এই কথাও বলেছিল – হে জ্বিন, তুমি কি সেই মানুষের ওষুধের কথা বলবে না, যে মেয়েদের মতো ইচ্ছে করে?
জ্বিন জানতে চায় – তার ফলে কি পুরুষদের কষ্ট হয়?
যুবক বলল – হ্যাঁ।
জ্বিন বলে – অমটা যদি না হত, তবে আমি তোমকে ওর ওষুধটাও বাৎলে দিতাম।