একটি বাগানের বিনিময়ে জান্নাত
হযরত শায়েখ জামালুদ্দীন আদীনাহ (রহঃ) সৈয়দ আহমদের অন্যতম মুরীদ ছিলেন। একবার তিনি বিশেষ কোন প্রয়োজনে আদীনার একটি বাগান কিনতে মনস্থ করলেন। একদিন তিনি হযরত শায়েখ সৈয়দ আহমদকে বললেন, আমি আদীনায় অবস্থিত ঐ বাগানটি কিনতে মনস্থ করলাম। আপনি বাগানের মালিকের নিকট লোক পাঠিয়ে এ বিষয়ে প্রস্তাব করুন। শায়েখ বললেন, আমি নিজেই এ প্রস্তাব নিয়ে মালিকের নিকট যাব। তারপর তিনি পায়ে হেটে আদীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন।
বাগানের মালিক ছিলেন বিখ্যাত বুজুর্গ হযরত ইসমাইল ইবনে আবদুল মুনইম। শায়েখ তাঁর নিকট গিয়ে বাগান বিক্রয়ের প্রস্তাব দিলেন। তিনি বললেন, হে শায়েখ! আমি স্বাভাবিক মূল্যে বাগানটি বিক্রি করব না। বরং বাগানের বিনিময়ে আমি যা দাবী করব যদি আপনি তা দিতে সম্মত হন তাহলে আমি বাগান বিক্রি করব।
তিনি বললেন- তুমি বাগানের মূল্য কত নির্ধারণ করেছ বল? মালিক বললেন, হে শায়েখ! আমি কিছুতেই পার্থিব কোন বিনিময়ে আপনার নিকট এ বাগান বিক্রি করব না। আপনি যদি উহার বিনিময়ে আমাকে জান্নাতের মহল দিতে রাজী হন তবেই সে বাগান আপনার নিকট বিক্রি করব। জবাবে হযরত সৈয়দ আহমদ বললেন, বেটা! আমি কি জান্নাতের মালিক যে, তুমি আমার নিকট জান্নাতের মহল দাবী করছ? তুমি আমার নিকট দুনিয়ার কোন বস্তু দাবী কর আমি তোমাকে সাধ্যমত উহা দিতে চেষ্টা করব। কিন্তু শায়েখ ইসমাইল তাঁর দাবীতে অটল। তিনি বললেন, ঐ বাগান আমি কোন পার্থিব বস্তুর বিনিময়ে বিক্রয় করব না। কিনতে হলে জান্নাতের মহলই আমাকে দিতে হবে। এবার হযরত শায়েখ সৈয়দ আহমদ মাথা নীচের দিকে রেখে চুপ করে রইলেন। ধীরে ধীরে তাঁর চেহারা বিবর্ণ হতে লাগল। কিছুক্ষণ পর মাথা তুলে তিনি বললেন- হে ইসমাইল! তুমি যা চেয়েছ আমি তাঁর বিনিময়েই তোমার নিকট হতে ঐ বাগান কিনে নিলাম। শায়েখ ইসমাইল খুশী হয়ে বললেন, আপনি আমাকে একটি কাগজে কেনা বেচার দলীল লিখে দেন। তিনি লিখলেন-
বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম
এটি ইসমাইল ইবনে আবদুল মুনইমের বাগান বিক্রির দলীল। আমি অধম সৈয়দ আহমদ ইবনে রেফায়ী ঐ বাগান ক্রয় করেছি। আমি অধম আল্লাহ পাকের ফজল ও করীমের উপর ভরসা করে এই বিষয়ের জামীন হচ্ছি যে, ঐ বাগানের বিনিময়ে তাকে জান্নাতে একটি মহল দেয়া হবে। এ মহলটির নকশা এরূপ – একদিকে জান্নাতে আদন এবং অপরদিকে জান্নাতুল মাওয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। অপর দুই দিকের এক দিকে জান্নাতুল খুলদ এবং অপর দিকে জান্নাতুল ফেরদাউস পর্যন্ত। বর্ণিত সীমানার ভেতর যত হুর-গেলমান, তখত, ফরশ ও বৃক্ষ-লতা থাকবে ঐ সমুদয় নেয়ামতই ঐ বাগানের মালিক প্রাপ্ত হবে। এ বেচা-কেনার সাক্ষী স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা এবং এটার জামিন একমাত্র তিনিই।
দলীল লেখা শেষে এটা বাগানের মালিকের নিকট হস্তান্তর করা হয়। বাগানের মালিক শায়েখ ইসমাইল দলীলটি নিয়ে তাঁর সন্তানদের নিকট গেলেন। তারা তখন ঐ বাগানের ভেতর পানি দেয়ার কাজে ব্যস্ত ছিল। তিনি সন্তানদেরকে ডেকে বললেন- তোমরা বাগান থেকে বের হয়ে আস। আমি এ বাগান বিক্রি করে ফেলেছি। ছেলেরা বলল- বাবা এ বাগান তো আমাদের নিজেদেরই কত প্রয়োজন। আপনি কেন বিক্রি করতে গেলেন? জবাবে তিনি ছেলেদেরকে বিস্তারিত ঘটনা খুলে বললেন এবং হাতের দলীলটি দেখালেন।
ছেলেরা বলল- যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদেরকে ঐ মহলের অংশীদার বানানো হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এ বাগান বিক্রিতে সম্মত হব না। শায়েখ ইসমাইল বললেন- আমরা সকলেই তো ঐ মহলের মালিক হব, আল্লাহ তায়ালা নিজেই এর জামিন হয়েছেন। অতঃপর শায়েখ জামালুদ্দীন এ বাগান দখল করে নিলেন।
এই ঘটনার কিছুদিন পরই ইসমাইল ইন্তেকাল করলেন। তাঁর অসীয়ত অনুযায়ী সন্তানেরা কাফনের সঙ্গে বাগান বিক্রির দলীলটি দিয়ে এল। দাফনের পরদিন সকলেই দেখতে পেল কবরের উপর লেখা আছে- قَدْ وَجَدْنَا مَا وَعَدَنَا رَبُّنَا حَقًّ
অনুবাদঃ আমাদের সাথে আমাদের প্রভু যে ওয়াদা করেছিলেন আমরা তো তা যথাযথভাবে পেয়েছি।