একজন মা–শেষ পর্ব

গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

একদিন অনুরোধ করলো যাতে তার ছেলেকে একটা চাকরি দেখে দেওয়া হয়। যেহেতু পরিবারটির নিজস্ব রিয়েল এস্টেট ব্যাবসা ছিলো তারা তাই আসাদকে একটি সাইটে দারোয়ান হিসেবে নিয়োগ দিয়ে দিলো। আর মনার মাকে বুদ্ধি দিলো গ্রামে নিজের টাকায় একটা ঘর করতে লাগলে তারা সহায়তাও করবে। দিন বেশ ভালোই কেটে যাচ্ছিলো। ঝামেলা বাধলো যখন আসাদ প্রজেক্ট থেকে জিনিস চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লো। কিছুটা ঝামেলা হলেও ব্যাপারটা চাপা দিয়ে দেওয়া হলো মনার মার কথা চিন্তা করে।

আসাদের ভিতর কি কাজ করছিলো জানা যায় নি। সে কিছুদিন পর চাকরীটা ছেড়ে দিলো। এর মাঝে সে তার স্ত্রীকে ঢাকায় নিয়ে এসেছে। হঠাৎ একদিন আসাদ এসে জানালো তার মা যেহেতু বৃদ্ধা হচ্ছে তাই সে তাকে নিয়ে যেতে চায়। শুনে সবাই খুশি হলেও আকাশরা দুই ভাই একদমই খুশি ছিলো না। মনার মা চলে যাবে তাদের সাথে আর থাকবে এই ব্যাপারটাই তারা দুই ভাই মেনে নিতে পারছিলো না। তারপরেও মনার মার কষ্ট করতে হবে না এই চিন্তা করে দুই ভাই ব্যাপারটা মেনে নিলো। চলে গেলো মনার মা। পিছনে রেখে গেলো অনেক গুলো বছরের স্মৃতি।

যেই আকাশকে মনার মা পেয়েছিলো বাচ্চা বয়েসে তাকে সে তারুন্যের দ্বার প্রান্তে রেখে যায়। আকাশ পড়া লেখা করার জন্যে দেশের বাইরে গেলেও মনার মার কথা কখনোই ভোলেনি।

চেষ্টা করতো খোজ খবর রাখতে। কিন্তু জীবনের ব্যস্ততায় একটা সময় আর খবর রাখা হয়ে উঠেনি। আকাশ যখন দেশে এলো সে বহু কষ্টে আসাদের ঢাকার ঠিকানা বের করে গেলো দেখা করতে মনার মার সাথে। গিয়ে সে জানতে পারলো, মনার মা মেসে কাজ করতে গিয়েছে।

সে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, কেনো আসাদ না তার মাকে এনেছে আর কাজ করতে দেবে না? তখন উন্মোচিত হলো আরেক ঘটনা। আসাদের ইচ্ছা কখনোই এমন ছিলো না। মেসে কাজ করলে পয়সা বেশি এই তথ্য জানার পরে সে তার মাকে আকাশদের বাসা থেকে এনে মেসের কাজে লাগিয়ে দেয় পয়সা বেশি পাবার আশায়।

এই শুনে আকাশ রাগে, ক্ষোভে দুঃখে অনেকক্ষন চুপ থেকে মেসের ঠিকানা জেনে চলে যায় সেখানে। মেসে গিয়ে আকাশ দূর দেখে মনার মা চেহারাটা আরো জীর্ন শির্ন হয়ে গেছে। বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠে আকাশের। গলার কাছে কি যেনো দলা পাকিয়ে আসে মনার মাকে এই অবস্থায় দেখে। কিছুটা অভিমানও ভর করে বুড়ী কেনো চলে এসেছিলো তাদের বাসা থেকে ভেবে।

পিছন থেকে আকাশ মনার মার কাছে গিয়ে ডাক দেয়, “বুড়ী”। মনার মা ভুত দেখার মত চমকে পিছনে ফিরে তাকিয়ে আকাশকে দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পরে।

আকাশ সেখানে বসে অনেক বার বোঝানোর চেষ্টা করে কিন্তু মনার মাকে তার সাথে ফিরতে রাজী করতে পারলো না। ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল করেও লাভ হলো না। মনার মা আকাশকে বললো, আব্বা আপনে চলে যান।

আমার দোহাই লাগে। এই কথা শুনে আকাশ সেখান থেকে চলে এলো। পিছনে ফিরলে সে দেখতে পেত একজন মমতাময়ী মা অশ্রুসজল চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। যে নিজের জীবনে সব সহ্য করে বৃদ্ধাবস্থায় সন্তানের উন্নতির জন্যে মেস বাড়িতে কাজ করছে।

গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!