উপহার–অস্কার ওয়াইল্ড-১ম পর্ব

গল্পের ২য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

“লাল গোলাপ এনে দিতে না পারলে সে আমার সাথে নাচবে না বলেছে”, বলতে বলতে কেঁদে ফেললো ছেলেটা, “অথচ আজ আমার বাগানে একটা গোলাপও নেই!”

ওক গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে নিজের বাসা থেকে কৌতূহলী চোখে তাকালো এক নাইটিঙ্গেল। ছেলেটার কথা শুনেছে সে।

“একটা গোলাপও না!”, আবারো জলে ভরে উঠলো ছেলেটার সুন্দর চোখ দুটো, “কত সামান্য সব জিনিসের ওপরই না আমাদের সুখ-দুঃখ নির্ভর করে। আমি এত সব জ্ঞানী লোকেদের বই পড়েছি, দর্শনের যত খুঁটিনাটি সব আমার নখদর্পণে, অথচ আজ একটা তুচ্ছ লাল গোলাপের জন্য আমার সব কিছু বৃথা হয়ে যাচ্ছে।”

“অবশেষে এক সত্যিকার প্রেমিকের দেখা মিললো”, নিজের মনে বলে উঠলো নাইটিঙ্গেল। “তাকে কোনদিন দেখি নি, অথচ রাতের পর রাত গান গেয়েছি তার জন্য। তাকে চিনি নি, কিন্তু তারাদের সাথে কত রাত তার গল্প করেছি। রাতের মত কালো তার চুল, ঠোঁট দুটো তার বহু আকাঙ্ক্ষিত গোলাপের মতই লাল; অথচ আবেগের আতিশয্যে কেমন ফ্যাকাসে হয়ে আছে মুখটা, কপালে ভাঁজ পড়েছে দুশ্চিন্তার।”

“কাল রাতে রাজকুমারের বলনাচের আসরে সেও থাকবে,” ফিসফিসিয়ে বললো ছেলেটা। “যদি তার জন্য গোলাপ নিয়ে যেতে পারি, তবেই কেবল সে আমার সাথে নাচবে, ভোরের আলো না ফোটা পর্যন্ত। যদি ফুলটা নিতে পারি, তবে কাল সে আমার বাহুবন্ধনে থাকবে। তার মাথা থাকবে আমার কাঁধে, হাত থাকবে আমার হাতে। আর – আর যদি ব্যর্থ হই, তবে আমার ভালবাসার মানুষটা আমার দিকে ফিরেও তাকাবে না। আমাকে একাই থাকতে হবে সারাটা সময়, দুঃখে আমার হৃদয় ভেঙে যাবে!”

“তবে আসলেই সত্যিকার প্রেমিকের দেখা পেয়েছি আজ আমি,” বললো নাইটিঙ্গেল। “আমি যেই ব্যথার গান গাই, তা তো তারই – আমার জন্য যা আনন্দের, তার জন্য সেটা দারুণ কষ্টের। ভালবাসা আসলেই চমৎকার। সবচেয়ে দামি পাথরের চাইতেও দামি, মণিমুক্তার চাইতেও বেশি কাম্য। একে বাজারদরে কেনা যায় না। কারো সাধ্য নেই এর বিকিকিনি করে, একে পরিমাপ করে।”

“বাদকেরা তাদের জায়গায় বসে বাদ্যযন্ত্র বাজাবে। তখন বীণা আর বেহালার সুরে সুর মিলিয়ে নাচবে সে, আমার প্রাণেশ্বরী। দেখে মনে হবে তার পা যেন মেঝে স্পর্শই করছে না। সবাই ভিড় করে দাঁড়িয়ে তাকে দেখবে তখন। কিন্তু গোলাপ দিতে পারি নি বলে আমার সাথে সে নাচবে না”, এই বলে ঘাসের ওপর বসে পড়ে দু’হাতে মুখ ঢেকে ডুকরে কেঁদে উঠলো ছেলেটা।

“কাঁদছে কেন ছেলেটা?”, বাতাসে লেজ উঁচিয়ে ছুটতে ছুটতে জানতে চাইলো ছোট্ট এক সবুজ টিকটিকি।

“তাই তো, কেন?” একটা সূর্যরশ্মি ছোঁয়ার চেষ্টা করতে করতে প্রশ্ন প্রজাপতির।

“তাই তো, কেন?” নরম, নিচু স্বরে ডেইজি ফুল তার পাশের জনকে জিজ্ঞেস করলো।

সবার কথার জবাব দিল নাইটিঙ্গেল, “একটা লাল গোলাপের জন্য।”

“লাল গোলাপের জন্য?!” সবাই আর্তনাদ করে উঠল; “কী হাস্যকর!” ব্যঙ্গভরে হেসে উঠলো টিকটিকি।

গল্পের ২য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!