ইয়াজুজ ও মাজুজের কাহিনী-১ম পর্ব

জুলকারনাইন সূর্য উদয়ের দেশে এসে সুউচ্চ পাহাড় দুইটি দেখে সেদিকে যাত্রা করলেন। পথি মদ্দে পাহাড়ের পাদদেশে অনেক বসতি দেখে সেখানে অবতরন করলেন এবং চতুর্দিকে ফিরে দেখতে লাগলেন। সেখানে অনেক মানুষের সাথে তাঁর দেখা হল। যারা অত্যন্ত জ্ঞানী, বুদ্ধিমান ও সাধক বলে তাঁর মনএ হল। তারা সেকান্দার জুলকারনাইনকে যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করল এবং তাঁকে খুব যত্ন করল। তাদের ভাষা তিনি বুজলেন না। তবে তারা আকার ইঙ্গিত এ অনেক কথা জুলকারনাইনের নিকট বলল।

 সেকান্দার জুলকারনাইন তাঁর সঙ্গীও কয়াকজন লোককে তড়িৎ ওদের ভাষা শিক্ষার জন্য নির্দেশ দিলেন। তারা প্রানপন চেষ্টা করে সাপ্তাহ কালের মধ্য ওদের ভাষা আয়ত্ত করে ফেলল। তখন জুলকারনাইন তাদের মধ্য দ্বীনের দাওয়াত পেশ করলেন। তারা অতি আগ্রহভাবে নবীদের দাওয়াত কবুল করল। প্রতিদিন এলাকার নতুন নতুন মানুষ এসে দ্বীনের তালীম গ্রহন করত। কিছুদিন এসে অবস্থান পরে এলাকাবাসী জুলকারনাইনের নিকট নিজেদের সমসসাবলীর কথা আলাপ করল।

 তারা বলল হুজুর! আমাদের সম্মুখের বড় পাহাড় দুটির মাঝখান দিয়ে একটি গিরিপথ রয়েছে। এ পথে একদল মানবরুপী দৈত্য এসে আমদের ওপর অত্যাচার করে আমাদের সর্বস্ব লুট করে নেয়। খাদ্য খাদক ও পশু খেয়ে নিঃশেষ করে যায়। এভাবে মাঝে মাঝে আমাদের এলাকায় এ প্রাণীর আবির্ভাব ঘটে তখন আমরা খুবই বিপদগ্রস্থ হয়ে পড়ি। এ প্রাণীর নাম ইয়াজু ও মাজুজ। এদের সম্পর্কে অনেক বর্ণনা পাওয়া যায়। এরা দেখতে হরেক রকম। কতক আছে লম্বা মানুষের ন্যায়, জিহবাটা বিরাট, তা সর্বদা ঝুলতে থাকে। আবার কতক আছে মানুষের ন্যায় শরীর আর পশুর ন্যায় চেহারা। তাদের লম্বা লম্বা দুটি কানও আছে।

কতক আছে বেটে। তাদের মাথায় শিং –এর চিহ্ন আছে জিহ্বা লম্বা। কেউ কেউ বলেছেন এরা সম্পূর্ণ মানুষের আকৃতি তবে চেহারা বিদঘুটে। মুখমন্ডল সমান ও চেপ্টা। এরা অসভ্য, উৎশৃঙ্খল ও জংলী মানুষ। শেষ কথায় ইয়াজুজ ও মাজুজ সভ্য মানুষের তুলনায় আকৃতি ও প্রকৃতির ক্ষেত্রে অবশ্যই কিছুটা ভিন্নতর হবে। তবে এরা হযরত নূহের বংশধর বলে হাদীসে উল্লেখ আছে। এদের সম্পর্কে মনিষীগণ আরো বললেন, হে বাদশা! আমরা ইয়াজুজ ও মাজুজের অত্যাচারে ভীষণ বিপন্ন। ওদের সংখ্যা এত অধিক যে ওদের সাথে যুদ্ধ করে আমরা বিজয়ী হতে পারব না। তাই নিরবে পালিয়ে আমরা আত্নরক্ষা করে থাকি। এ দুঃসময়ে আমাদের মাঝে আল্লাহ তায়ালা দয়া করে আপনার ন্যায় একজন শক্তিশালী বাদশা প্রেরণ করেছেন। আমরা আপনার নিকটি আরজ করব, আপনি দয়া করে সুউচ্চ পাহাড় দুটির মাঝখানে যে গিরিপথ আছে সেখানে একটি উঁচু প্রাচীর তৈরী করে দিন। ইয়াজুজ ও মাজুজেরা যেন আমাদের উপর অত্যাচার চালাতে না পারে।

জুল করনাইন মনিষীদের কথা শুনে বললেন, হ্যাঁ আল্লাহ তায়ালা আমাকে সে ক্ষমতা প্রদান করেছেন। আমি ইনশা আল্লাহ ইয়াজুজ ও মাজুজের অত্যাচার থেকে আপনাদেরকে রক্ষার উদ্দেশ্যে ওখানে দেয়াল গড়ে দেব। একথা বলে জুলকারনাইন তাঁর সেনাবাহিনীকে লোহা ও তামা সংগ্রহের আদেশ দিলেন। সেনা বাহিনীর লোকেরা মাটি খুঁড়ে লোহা ও তামা উত্তোলন করল। অতঃপর জুল কারনাইনের আদেশে লোহা গলিয়ে মোটা পাত তৈরী করা হল। সগুলোকে গিরিপথে স্থাপন করে তামা গলিয়ে জোড়া দেয়া হল। কথিত আছে, এ দেয়ালের দৈর্ঘ ছিল বাহাত্তর মেইল এবং উচ্চতা ছিল সত্তর গজ। দীর্ঘদিন যাবত পরিশ্রম করে জুলকারনাইনের সৈন্যরা এ দেয়াল তৈরীর কাজ সমাধা করে। যাতে ওখানের বাসিন্দারা নিশ্চিত হল এবং চিরদিনের জন্য বিপদমুক্ত জীবন-যাপনের ভাগ্য লাভ করল।

সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিণী

ইয়াজুজ ও মাজুজের কাহিনী-২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন  

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।