ইবলীসের বেহেশতে প্রবেশ

অতঃপর বলা হল হে আদম! তুমি ইবলীসের প্রতারণা থেকে সতর্ক থাকবে, কেননা সে হবে তোমার পরম শত্রু। এ সম্পর্কে কালামে পাকে ইরশাদ হচ্ছে-

অর্থঃ অতঃপর আমি বললাম,— হে আদম! এ (শয়তান) তোমার ও তোমার স্ত্রীর দুশমন, সুতরাং সে যেন তোমাদেরকে বেহেশত থেকে বের করে না দেয়।

আদম (আঃ) বেহেশতের সব দরজা উত্তমরূপে বন্ধ দেখতে পেয়ে তার দৃঢ় আস্থা হল ইবলীস পৃথিবীতে আর আমি বেহেশতে অবস্থান করছি, কাজেই তার সঙ্গে আমার কি সম্পর্ক যে, সে আমাকে নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণ করিয়ে পাপী করবে। আমি তার প্রতারণা হতে আশঙ্কামুক্ত। অতঃপর একদিন অভিশপ্ত ইবলীস বেহেশতে হযরত আদম (আঃ) এর কাছে যাওয়ার সংকল্প করল। আল্লাহ তা’আলার তিনটি ইসমে আযম তার জানা ছিল। তা পড়ে সে সাত তবক আসমান অতিক্রম করে বেহেশতের দরজায় পৌঁছল। দরজা বন্ধ দেখে বেহেশতের প্রবেশ করার উপায় উদ্ভাবনের চিন্তা-ভাবনা করতে লাগল।

ঘটনাচক্রে একটি ময়ুর বেহেশতের দেয়ালে বসা ছিল। শয়তান দেয়ালের বাইরে বসে ইসমে আযম পড়তে থাকে। ইসমে আযম পড়তে দেখে ময়ুর ইবলীসের পরিচয় জানতে চাইল। ইবলীস বলল, আমি আল্লাহর এক ফেরেশতা। ময়ূর বলল, তুমি এখানে বসে কি করছ? শয়তান উত্তর দিল, আমি বেহেশতে প্রবেশ করতে চাচ্ছি। ইবলীস ময়ূরকে অনুরোধ করল, তাকে বেহেশতে নিয়ে যেতে। ময়ূর বলল, আদম (আঃ) বেহেশতে যতক্ষণ আছেন ততক্ষণ কাউকে বেহেশতে নেয়ার কোন আদেশ আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার নেই। শয়তান বলল, তুমি আমাকে বেহেশতের নিয়ে যাও।

আমি তোমাকে এমন তিনটি দোয়া শিখাব- যে তিনটি দোয়া শিখে আমল করলে তুমি তিনটি বিষয় লাভ করতে পারবে। এক কথায় তুমি বৃদ্ধ হবে না। দুই মৃত্যু বরণ করবে না এবং তিন সর্বদা বেহেশতে অবস্থান করতে পারবে। ইবলীস কথিত দোয়া পড়ল এবং  ময়ূর বেহেশতের দেয়াল থেকে নেমে এসে ইবলীসকে নিয়ে উভয়ে জান্নাতের দরজায় গিয়ে দাড়াল। ময়ূর সাপের নিকট এ ঘটনা ফাস করে দিল। সাপ একথা শুনতেই বেহেশতের দরজা বন্ধ করে স্বীয় মাথা বের করে ইবলীসের পরিচয় ও তার আগমনের উদ্দেশ্যে জানতে চাইল। ইবলীস বলল, আমি আল্লাহর এক ফেরেশতা।

সাপ বলল, তুমি আমাকে তোমার পাঠকৃত দোয়া শিখাও। ইবলীস বলল—- এক শর্তে তোমাকে আমি এ দোয়া শিখাতে পারি, তাহলে, তুমি আমাকে বেহেশতে নিয়ে যাবে। সাপ  বলল- হযরত আদম (আঃ) বেহেশতে থাকতে আর কাউকে বেহেশতে প্রবেশ করানোর হুকুম আমার প্রতি আল্লাহর নেই। ইবলীস বলল, আমি বেহেশতে পা রাখব না; বরং তোমার মুখের ভিতরেই অবস্থান করব। বাইরে বের হব না। শয়তানের কথায় বিশ্বাস করে সাপ মুখ প্রসারিত করে দিল। ইবলীস তার মুখে ঢুকে পড়ে সাপ তাকে বেহেশতে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।

সাপের মুখাভ্যন্তরে লুকিয়ে বেহেশতে প্রবেশের পর ইবলীস বলল, তুমি আমাকে আল্লাহ তা’আলা হযরত আদম কে যে বৃক্ষের ফল খেতে নিষেধ করেছেন সে বৃক্ষের নিকট নিয়ে চল। সাপ ইবলীসকে নিষিদ্ধ বৃক্ষের নিকট নিয়ে গেল সে সাপের মুখগহ্বরে থেকেই প্রতারণামূলকভাবে কান্নাকাটি শুরু করে দিল। এ জগতে সে সর্বপ্রথম মুনাফেকীর কাঁন্না কেঁদেছিল। সে হচ্ছে অভিশপ্ত ইবলীস।

তার কান্না শুনে বেহেশতের গেলমান সকলে সমবেত হয়ে বলাবলি করতে লাগল- আমরা তো কখনো সাপের মুখ থেকে এমন শব্দ শুনতে পাইনি। হযরত হাওয়া (আঃ) সাপকে কাঁন্নার কারণ  জিজ্ঞেস করলে ইবলীস সাপের মুখগহ্বরে থেকে বলল, আমি এজন্য কাঁদছি যে, তোমাকে যে বৃক্ষের ফল খেতে নিষেধ করেছেন, সে বৃক্ষের ফল ভক্ষণকারী কখনো জান্নাত থেকে বের হবে না। আল্লাহ তা’আলা এ ঘটনা সম্পর্কে বলেন,

অর্থঃ ইবলীস বলল, হে আদম! তোমাকে আমি এমন বৃক্ষের সন্ধান দেব, যা থেকে তোমার চিরন্তন জীবন লাভ হবে এবং তোমার রাজত্ব পুরানো হবে না।

অর্থঃ তারা যখন নিষিদ্ধ গাছের ফল ভক্ষণ করলেন, তখন উভয়ের গুপ্তাঙ্গ প্রকাশিত হয়ে পড়ল এবং তারা নিজদের  শরীর পাতা দিয়ে আবৃত করতে লাগলেন।

এ অবস্থায় তারা বেহেশতের যে বৃক্ষের কাছে পাতার জন্য যেতেন, সেই গাছই পাতা দিয়ে অস্বীকার করত। অবশেষে তারা আঞ্জির আছের নিকট পৌঁছলে সেটি নিজেকে ঝুকিয়ে নিয়ে বলল, আপনারা নিকট থেকে পাতা নিন এবং গুপ্তাঙ্গ আবৃত করুন। অবশেষে আঞ্জির বৃক্ষের পাতা নিয়ে তারা দেহ ঢাকেন। চন্দন গাছ থেকেও তারা দেহ ঢাকতে পাতা সংগ্রহ করেন। আল্লাহর দরবার থেকে আওয়াজ এল, ওহে আঞ্জির গাছ! তুমি আদম ও হাওয়ার প্রতি সদাচরণ করেছ। সে সদচরণের কল্যানে আমি তোমার নিকট হতে সর্বপ্রকার অনিষ্ট ও বিস্বাদ দূরীভূত করে এমন স্বাদ তোমাকে দান করছি যে, বহুবার কেউ তোমার স্বাদ গ্রহণ করলেও বিতৃষ্ণ হবে না। চন্দন বৃক্ষের উদ্দেশ্যে বলা হল- আমি তোমাকে সকলের নিকট প্রিয় করেছি। তোমা থেকে সকলেই দুগন্ধ আহরণ করবে। 

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।