ইবনে ঈস (রাঃ) এর হিজরত

হজরত সাইদ ইবনে জুবাইর (রাঃ) বলেন, যখন এই আয়াত নাযিল হইল-

لَّا يَسْتَوِي الْقَاعِدُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ غَيْرُ أُولِي الضَّرَرِ

অর্থঃ গৃহে উপবিষ্ট মুসলমান যাহাদের কোন সঙ্গত ওযর নাই এবং ঐ মুসলমান যাহারা জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর পথে জেহাদ করে সমান নহে।

তখন মক্কার দরিদ্র ও সামর্থ্যহীন মুসলমানগণ এই আয়াতের দ্বারা বুঝিলেন যে, (জেহাদ যাওয়া উত্তম হইলেও) তাহাদের জন্য মক্কার অবস্থান করার অনুমতি রহিয়াছে।

তারপর এই আয়াত নাযিল হইল-

إِنَّ الَّذِينَ تَوَفَّاهُمُ الْمَلَائِكَةُ ظَالِمِي أَنفُسِهِمْ

অর্থঃ নিশ্চয় যখন ফেরেশতাগণ এইরুপ লোকদের রুহ কবয করেন যাহারা (ক্ষমতা থাকা সত্বেও হিজরত না করিয়া) নিজেদের উপর জুলুম করিয়া রাখিয়াছিল তখন ফেরেশতাগণ তাহাদিগকে বলিলেন, তোমরা (দ্বীনের কোন) কোন কর্মে ছিলে? তাহারা বলিবে, আমরা যমিনে অসহায় ও দুর্বল ছিলাম। ফেরেশতাগণ বলিবেন, আল্লাহর যমিন কি প্রশস্ত ছিল না যে, তোমরা দেশ ছাড়িয়া তথায় চলিয়া যাইতে? অতএব তাহাদের ঠিকানা হইবে জাহান্নাম। আর উহা অতি নিকৃষ্ট গন্তব্যস্থান।

এই আয়াত নাযিল হইবার পর সামর্থ্যহীন মুসলমানগণ বলিলেন, ইহা তো অন্তর কাঁপানো (অর্থাৎ এই আয়াতে হিজরত করা জুরুরী বুঝাইতেছে) অতঃপর এই আয়াত নাযিল হইল-

إِلَّا الْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ لَا يَسْتَطِيعُونَ حِيلَةً وَلَا يَهْتَدُونَ سَبِيلًا

অর্থঃ কিন্তু যে সকল পুরুষ নারী এবং শিশু (হিজরত করিতে) এমন অক্ষম যে, তাহারা কোন উপায়েই অবল্বন করিতে পারে না এবং পথ সম্পর্কেও জ্ঞাত নহে। (এই আয়াত দ্বারা বুঝা যাইতেছে যে, যে সকল মুসলমান অক্ষম তাহাদের উপর এই হিজরত ফরজ নয় এবং তাহাদের জন্য মক্কায় অবস্থানের অনুমতি রহিয়াছে ।)

অতএব এই আয়াত নাযিল হইবার পর বনু লাইস গোত্রের হজরত যামরা ইবনে ঈস (রাঃ) যিনি দৃষ্টিহীন এবং বিত্তশালী ছিলেন, তিনি বলিলেন, আমি দৃষ্টিদীন হইলেও আমার নিকট অর্থ ও গোলাম রহিয়াছেন। অতএব আমি চেষ্টা করিতে পারি। আমাকে সওয়ারীর উপর আরোহণ করাইয়া দাও। তাহাকে সওয়ারীর উপর বসাইয়া দেওয়া হইল।

তিনি অসুস্থ ছিলেন। ধীরে ধীরে চলিতে লাগিলেন এবং মসজিদে তানঈমের নিকট তাহাকে দাফন করা হইল। অতঃপর বিশেষভাবে তাহারাই সম্পর্কে নিম্নের আয়াত নাযিল হইল—

وَمَن يَخْرُجْ مِن بَيْتِهِ مُهَاجِرًا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ

অর্থঃ আর যে ব্যক্তি স্বীয় গৃহে হইতে এই উদ্দেশ্যে বহির্গত হয় যে, আল্লাহ ও তাহার রাসূলের দিকে হিজরত করিবে। অতঃপর তাহার মৃত্যু উপস্থিত হয় তথাপিও আল্লাহর নিকট তাহার সওয়াব সাব্যস্ত হইয়া গিয়াছে, আর আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল পরম করুণাময়।

হজরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, হজরত যামরা ইবনে জুন্দব (রাঃ) যখন নিজ ঘর হইতে হিজরতের উদ্দেশ্যে বাহির হইলেন, তখন তিনি আপন পরিবারবর্গকে বলিলেন, আমাকে সওয়ারীর উপর বসাইয়া দাও এবং মুশরিকদের যমিন হইতে বাহির করিয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে রওয়ানা করিয়া দাও। সুতরাং তিনি রওয়ানা হইয়া নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পৌছিবার পূর্বেই ইন্তেকাল করিলেন। তাহার সম্পর্কে ওহী নাযিল হইল–

وَمَن يَخْرُجْ مِن بَيْتِهِ مُهَاجِرًا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ يُدْرِكْهُ الْمَوْتُ فَقَدْ وَقَعَ أَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।