ইউসুফ (আঃ) -এর ছোট ভাইয়ের সাক্ষাৎ লাভ-২য় পর্ব

ইউসুফ (আঃ)-এর ছোট ভাইয়ের সাক্ষাৎ লাভ-১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

ইতোমধ্যে সারা পৃথিবীতে খাদ্য ঘাটতি ও দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এ সময় আমাদের সৎ ভাইয়েরা শস্যের জন্য এখানে আসে। আমি তাঁদেরকে দেখা মাত্র চিনে ফেলি। কিন্তু তারা অদ্য পর্যন্ত আমাকে চিনতে পারে নি। আমি আল্লাহ্‌ তা’য়ালার ইশারা ব্যতীত তাঁদের নিকট আমার পরিচয় দিতে পারি না। কারণ ইতোপূর্বে আমি আমার জীবিত থাকার খবর পিতাকে জানানোর উদ্দেশ্যে অনেক পত্র লিখেছি। কিন্তু সেগুলো প্রেরণের ক্ষেত্রে আমি হযরত জিব্রাইল (আঃ)- কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হয়েছি। তাই ভাইদের নিকট নিজ পরিচয় প্রদানের ক্ষেত্রে ভয় করছি।

বেনিয়ামিন ভাইদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস শুনে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। হযরত ইউসুফ (আঃ) বেনিয়ামিনের নিকট পিতার সংবাদ জানতে চাইলেন। বনিয়ামিন বললেন, পিতা তোমাকে হারিয়ে সেই থেকে যে অঝোর নয়নে কাঁদতে আরম্ভ করেছেন, অদ্য পর্যন্ত সে কান্না শেষ হয় নি।  তিনি শহরের বাইরে একটি শোকাগার তৈরি করে সেখানে সর্বদা এবাদাত-বন্দেগীতে মশগুল থাকেন এবং তোমার কথা স্মরণ করে কাঁদেন। অবশ্য অদ্য পর্যন্ত তাঁর বিশ্বাস হয় নি যে তোমাকে বাঘে খেয়েছে। তিনি এবার আমার আসার প্রাক্কালে বলেছেন, আমার ইউসুফ মিশরে আছে। সে বহাল তবিয়তে আছে। তোমার সাথে সাক্ষাৎ হলে আমার কথা বল এবং একবার আমাকে সাক্ষাৎ দান করতে অনুরোধ কর। এই বলে তিনি দীর্ঘ সময় কেঁদে আমাকে বিদায় দিয়েছেন। হযরত ইউসুফ (আঃ) পিতার সংবাদ শুনে আর অশ্রু সম্বরণ করতে পারলেন না হু হু করে কেঁদে উঠলেন।

অতপর তিনি সৎ ভাইদের আচরণ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলেন। বেনিয়ামিন বললেন, সৎ ভাইয়েরা তোমাকে নিরুদ্দেশ করার পরে পিতার নিকট তোমার স্থান দখল করার লালসায় দীর্ঘ দিন অধিকাংশ সময় তাঁর নিকটে থাকত এবং তাঁর যথেষ্ট খেদমত করত। কিন্তু পিতা যখন তাঁদেরকে সে স্থান আর দিলেন না। তখন তারা অনেকটা দূরে সরে গেল। নিজ ব্যস্ততায় সকলে দিন যাপন করত। মাঝে মাঝে এসে পিতার খবর নিত। তবে বড় ভাই ইয়াহুদ বেশি সময় পিতার সান্নিধ্যে কাটাত। সে আমাকেও যথেষ্ট ভালো বাসে। তাঁর ভালবাসায় আমি এতোটা আবিভূত হয়েছি যে, তোমার কথা ভুলে থাকতে সক্ষম হয়েছি। না হয় পাগল হয়ে জঙ্গলে চলে যেতাম।

হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর মনের আবেগ আর শেষ হয় না। তাই খুটিয়ে খুটিয়ে সমস্ত কথা জিজ্ঞেস করতে লাগলেন। এরপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “পিতা তোমাকে কি বলে দিয়েছেন ? ” বেনিয়ামিন বললেন তিনি কাঁদতে কাঁদতে সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে গেছেন। তিনি শেষ বারে আমাকে বলেছেন, তোমার সাথে যদি ইউসুফের সাক্ষাৎ হয় তবে আমাকে একবার সাক্ষাৎ দানের কথা তাঁকে বল। আমি তখন পিতাকে জিজ্ঞেস করলাম আপনি অন্ধ হয়ে গেছেন, রখন ভাই আসলে তাঁর চেহারা ছুরত কি করে দেখবেন? তখন তিনি বললেন, ইউসুফ আমার সম্মুখে এলে আমার অন্ধত্ব দূর হয়ে যাবে। আমি দিব্বি তাঁকে দেখতে পাব। এ বিষয় আমি নিশ্চিত।

হযরত ইউসুফ (আঃ) বললেন, আমি পিতাকে আমার নিকট নিয়ে আসব। তবে পরিবেশ সৃষ্টির জন্য কয়েকটি দিন অপেক্ষা করতে হবে। আর তোমাকে এখন থেকেই আমার কাছে রেখে দেব। বেনিয়ামিন  বললেন, সৎ ভাইয়েরা পিতার নিকট শপথ করে বলে এসেছে যে, তারা আমাকে ফেরত নিয়ে পিতার কাছে পৌঁছে দিবে। অতএব ভাইয়েরা আমাকে রেখে যেতে রাজি হবে না। হযরত ইউসুফ (আঃ) বললেন, যে কোন এক কৌশলের মাধ্যমে তোমাকে রেখে দেব। তোমাকে এমন বিদায় দিয়ে আমি থাকতে পারব না। তোমাকে বুকে জড়িয়ে বাকি দিনগুলো অতিবাহিত করতে চাই। এবং জীবনের সমস্ত দুঃখ কষ্টের কথা ভুলে যেতে চাই। অতপর তিনি ভাইকে লক্ষ করে বললেন, বেনিয়ামিন ! তুমি আপাতাত ভাইদের নিকট আমার পরিচয় প্রকাশ কর না। আল্লাহ্‌ তা’য়ালার পক্ষ থেকে ইশারা ইঙ্গিত না পেলে পরিচয় প্রকাশ করা ঠিক হবে না।

সূত্রঃ আল কোরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী

ইউসুফ (আঃ)-এর ছোট ভাইয়ের সাক্ষাৎ লাভ-৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।