ইউসুফ (আঃ)-এর ছোট ভাইয়ের সাক্ষাৎ লাভ-১ম পর্ব
ইতোমধ্যে একদিন হঠাৎ ইউসুফ (আঃ)-এর নিকট খবর আসল, ইয়েমেন থেকে এগারজন বণিক এসেছে খাদ্যশস্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে। হযরত ইউসুফ (আঃ)- এ সংবাদ শুনে তাঁদেরকে দরবারে নিয়ে আসার জন্য হুকুম দিলেন। তাঁর উত্তপ্ত প্রাণ শান্ত হল। তিনি সকলকে সম্মুখে ডেকে জিজ্ঞেস বরলেন, “ তোমাদের ছোট ভাইকে এনেছ? ” তারা উত্তর দিল “ হ্যাঁ এনেছি ” এই বলে পিছন থেকে অল্প বয়স্ক বনিয়ামিনকে সম্মুখে এনে উপস্থিত করল। তখন ইউসুফ (আঃ) নিজ গাম্ভির্যতা রক্ষা করে বললেন, তোমরা সকলে মেহমান খানায় গিয়ে বিশ্রাম কর। এবং তোমাদের ছোট ভাইকে আমার কাছে রেখে যাও। সকলে তখন রাজ কর্মচারীর সাথে মেহমান খানায় চলে গেল।
এ দিকে হযরত ইউসুফ (আঃ) বনিয়ামিনের দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে রইলেন। যখন তাঁর ভাইয়েরা চলে গেল তখন তিনি বনিয়ামিনকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার আপন কোন ভাই নাই? তখন বনিয়ামিন কেঁদে ফেললেন। হযরত ইউসুফ (আঃ) বনিয়ামিনের কান্না দেখে আর সইতে পারলেন না। তিনিও ফুফিয়ে কেঁদে উঠলেন। একটু পরে বেনিয়ামিন নিজকে সামলে নিয়ে বললেন, আমার এক ভাই ছিল তাঁর নাম ছিল ইউসুফ। আমার সৎ ভাইয়েরা একদা তাঁকে মাঠে নিয়ে যায়। তখন নাকি তাঁকে বাঘে খেয়ে ফেলেছে।
তখন থেকে আমি একা হয়ে গেছি। যদি আমার ভাই আজকে জীবিত থাকত তাহলে আপনি আমার সাথে তাঁকেও দেখতেন। হযরত ইউসুফ (আঃ) নিজেকে আর সম্বরণ করে রাখতে পারলেন না। বেনিয়ামিনকে টেনে নিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললেন, বেনিয়ামিন ! আমি তোমার সেই হারান ভাই ইউসুফ। তখন দুই ভাই বুকে বুক লাগিয়ে অঝোর নয়নে দীর্ঘ সময় শুধু কাদলেন। কারো মুখ থেকে আর কোন কথা বের হল না। অনেক সময় পরে দুই ভাই মুখোমুখি বসে এঁকে অপরের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
বনিয়ামিন অনেকক্ষণ ধরে কান্নার পরে নিজকে সম্বরণ করে জিজ্ঞেস করল, ভাইয়া ! তুমি কেমন করে বেঁচে রইলে? হযরত ইউসুফ (আঃ) ছোট ভাইয়ের আবেগপূর্বক প্রশ্ন শুনে আর একবার ফুফিয়ে কেঁদে উঠলেন। অতপর তিনি বললেন, ভাই বেনিয়ামিন ! আমি কখনই মৃত্যুবরণ করিনি। আমাকে বাঘে খায় নাই। সব কিছু ছিল ভাইদের বানান ষড়যন্ত্র । আমাকে তারা মারার জন্য এক অন্ধকূপে ফেলে দিয়েছিল। আমি সেখান থেকে আল্লাহ্ তা’য়ালার অসীম অনুগ্রহে একদল বনিকের সহায়তার বেঁচে যাই। ভাইয়েরা তখন আমাকে দেখতে পেয়ে অধিক ক্ষিপ্ত হয়। তারা আমাকে বণিকদের নিকট অল্পমূল্যে বিক্রয় করে।
বনিকেরা আমাকে মিশরে নিয়ে আসে এবং উচ্চমূল্যে মিশরের প্রধানমন্ত্রীর নিকট বিক্রয় করে। প্রধানমন্ত্রী আমাকে যথেষ্ট যত্নসহকারে প্রতিপালন করেন। অতপর তাঁর স্ত্রীর ষড়যন্ত্রে আমাকে জেলে যেতে হয়। দীর্ঘদিন জেল খাটার পরে আল্লাহ্ তা’য়ালা আমাকে নিজ রহমত দ্বারা মুক্ত করেন এবং মিশরের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব প্রদান করেন। আজ থেকে দশ বছর পূর্বে আমি রাজদরবারের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে আসছি। বর্তমানে মিশরের রাজা রায়হান বৃদ্ধ ও অচল অবস্থায় আছেন। তিনি এক রকম রাজ্যের দায়িত্ব আমার উপর ন্যস্ত করেছেন। বর্তমানে আমি সে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।
সূত্রঃ আল কোরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
ইউসুফ (আঃ)-এর ছোট ভাইয়ের সাক্ষাৎ লাভ-২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন