
তখন শরৎকাল। নদীর পাড়ের বিস্তৃত মাঠে ফুটে আছে সারি সারি কাশফুল। নদীর জলে ভেসে চলে পালতোলা নৌকা। মাঝি মনের সুখে গান গায় আর দাঁড় টানে। এক ঝাঁক পাখি উড়ে যায় নীল আকাশে। কাশবনে শোনা যায় অনেক পাখির ডাক। গাঙচিল উড়ে এসে বসে কাশবনের মাঝে বাবল গাছের ডালে। স্কুল ছুটি হলে বাড়ি ফেরার পথে আসিফ রোজ এসব নৈসর্গিক দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়। দুষ্টু ডানপিটে বালক আসিফ। এক সময় পাখি শিকারে দারুন আগ্রহী হয়ে ওঠে। কিন্তু উড়ন্ত এসব পাখি নাঈম ধরতে পারে না।
নিরাশ হয়ে যখন বাসায় ফিরে তখন তার বাবা জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে আসিফ তোকে খুব বিমর্ষ দেখাচ্ছে কেন? নাঈম কাঁদো কাঁদো স্বরে বাবাকে বলে আজ নদীর পাড়ে গিয়ে একটি পাখিও ধরতে পারিনি। জানো বাবা ওখানেই কাশবনে বাবলা গাছের ডালে, নীল আকাশে কত সুন্দর পাখিরা খেলা করে। আচ্ছা বাবা, তুমি ওই নদীর তীরের কাশবন হতে আমাকে পাখি ধরে দিবে। বাবা উত্তর দেয় দিব। এখন হাত-মুখ ধুয়ে খেতে চলো। নাঈম খুশিতে মেতে ওঠে। এরপর খেতে যায়। মা আদর করে পাশে বসিয়ে খাওয়ান। খেয়ে স্কুলের পড়া তৈরি করে বাড়ির অদূরে মাঠে বন্ধুদের সাথে খেলতে যায়। রাতের পড়া শেষে আসিফ বিছানায় ঘুমিয়ে পড়ে। গভীর রাত। চারদিকে নিস্তব্ধ। আসিফ দেখল বিশাল একটা দৈত্য তার শয়নকক্ষে হাজির। হঠাৎ দৈত্যের আগমনে আসিফ ভীষণ ভয় পেল। দৈত্য বলল, ‘ভয় পেয়ো না’ আমি তোমার কোন ক্ষতি করবো না। আমি এসেছি তোমার সাথে বন্ধুত্ব করতে। দৈত্যের কথা শুনে আসিফের ভয় কিছুটা কাটলো। দৈত্যের কথা এত মিষ্টি হয় আসিফ তা জানতো না। আসিফ বললো, আচ্ছা দৈত্য ভাই, তুমি নদীর পাড়ে কাশবনে কখনও গিয়েছিলে? একথা শুনে দৈত্য হি হি করে হেসে উঠল। আমি সাত সমুদ্র তের নদী চোখের পলকেই পাড়ি দিতে পারি। আর তুমি কিনা বল কাশবনে কখনও গিয়েছি। দৈত্য বললো, এবার তোমার কি চাই? যা চাই তাই আনতে পারবো। তাই হলো। একটি দু’টো নয় দৈত্য দশটা পাখি ধরে এনে দিলো। পাখিগুলো নানান রঙের। আসিফ পাখিগুলো পেয়ে আনন্দে মেতে উঠলো। এরপর দৈত্য চলে গেলো। আসিফ এবার তার বাবাকে বললো, বাবা আমাকে একটা লোহার খাঁচা এনে দিবে? বাবা একটা সুন্দর লোহার খাঁচা এনে দিল। আসিফ পাখিগুলো সেই খাঁচায় বন্দি করলো। পাখিগুলোকে সে প্রতিদিন দুধ ভাত খাওয়ায়।
এভাবে পাখিগুলোর প্রতি তার মায়া জমে গেলো। খুব ভোরে আসিফের ঘুম ভাঙলো। মনে প্রাণে খুব খুশি। ঘুম থেকে উঠে আগে গেলো বারান্দার দিকে পাখিগুলো দেখতে। চারদিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখে কোথায়ও তার পাখির খাঁচা নেই। রাগে ক্ষোভে ফেটে পড়ে আসিফ। মা এসে সান্ত¡না দেয়। তুই এসব স্বপ্নে দেখেছিল। স্বপ্ন কখনো বাস্তব হয় না। আসিফ কিছুতেই মায়ের কথা বিশ্বাস করে না। তাহলে দৈত্যরা ফাঁকিবাজ। মা আসিফকে সান্ত¡না দিয়ে বলে, দৈত্যদের কথা বিশ্বাস করতে নেই। আসিফ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়- এবার দৈত্য এলে উচিত শিক্ষা দেবে। আসিফ স্কুলের পড়ায় মশগুল হয়। রোজ স্কুলে যায়। স্কুল হতে ফেরার পথে নদীর পাড়ে পাখিদের উড়ে যাওয়ার দৃশ্য মুগ্ধ চোখে দেখে। বিকেলে খেলার মাঠে বন্ধুদের কাছে দৈত্যের গল্প করে। বন্ধুরা দৈত্যের গল্প শুনে অবাক হয়। এরপর রিয়াজ, সাইফ, অপু, আসিফ এই চার বন্ধু মিলে দৈত্যকে ফাঁদে ফেলার বুদ্ধি আঁটে। বেশ ক’দিন পর ঘুমের মধ্যে আবার দৈত্য এলো, মেজাজ খুব শান্ত। আসিফ দৈত্যকে দেখে আর রাগান্বিত হলো না। স্নিগ্ধ স্বরে দৈত্যকে বললো, দৈত্য ভাই। চলো আমরা নদীর পাড়ে যাই। দৈত্য আসিফকে নদীর পাড়ে না নিয়ে বিশাল এক জঙ্গলে নিয়ে গেলো।
নির্জন গভীর জঙ্গলের মাঝে এসে আসিফ মোটেও ভয় পায়নি। বড় প্রতিশোধের আগুনে জ্বলতে লাগলো। এমন সময় আরেকটি দৈত্য এলো আসিফ জঙ্গলের গাছের আড়ালে পালালো। দু’দৈত্য এবার মেতে উঠলো খোশ গল্পে। গল্প করতে করতে এক সময় তারা ঘুমিয়ে পড়লো। এদিকে আসিফ নানান ফন্দিফিকির করতে লাগলো। চেয়ে দেখলো দুই দৈত্য পাশাপাশি ঘুমাচ্ছে। অমনি আসিফের মাথায় বুদ্ধি খেলে গেলো। সে জঙ্গলের গাছের না পেয়ে ভাবলো, পাশের দৈত্যটিই তাকে পাথর ছুঁড়ে মেরেছে। এ নিয়ে দু’দৈত্যের মাঝে বেধে গেলো ভীষণ গ-গোল।
গ-গোলের খবর দৈত্য রাজা এসে হাজির। রাজা জানতে চাইল কেন তার রাজ্যে রক্তাক্ত গোলাগুলি। দু’দৈত্য ক্ষীণ কণ্ঠে জানালো তাদের ঝগড়ার কথা। বিচারের দিনক্ষণ ধার্য হলো। রাজ্যের সকল দৈত্য হাজির সে বিচারে। কঠিন বিচার শেষে দৈত্য রাজার রায় ঘোষণা হলো। এতে অভিযুক্ত দু’দৈত্যের প্রকাশ্যে ফাঁসি হলো। আসিফ মনের খুশিতে মেতে উঠলো। অমনি তার ঘুম ভেঙে গেলো।