আসহাবে কাহাফের প্রকৃত ঘটনা-পর্ব ১
আসহাবে কাহাফের রহস্যপূর্ণ ঘটনা-পরিচিতি পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হযরত ঈসা (আঃ) এর আবির্ভাবের কিছু পূর্বে রোম সম্রাজ্যে এক ধর্মদ্রোহী প্রভাবশালী ও জালেম রাজার আবির্ভাব ঘটে। তার নাম ছিল দাকিয়ানুস। সে ছিল একজন নাস্তিক ও ধর্মদ্রোহী। সে এক পর্যায়ে নিজে খোদায়ী দাবি করে দেশের মানুষের ধর্মানুভূতি ভূলুণ্ঠিত করে। ধর্মপরায়ণ মানুষদেরকে নানা রকম নির্যাতন ও অত্যাচার করে জেলে পুরে রাখত অথবা দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করত। এমতাবস্থায় দেশের একদল ধর্মপরায়ণ যুবক গোপনে সংঘবদ্ধ হয়ে রাজাকে উৎখাত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। অল্পদিনের মধ্যে তাঁরা বেশ কিছুটা শক্তি সঞ্চয় করতে সক্ষম হয়। এমনকি বহিঃরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সহানুভূতির আশ্বাস পর্যন্ত সংগ্রহ করেন। এসময় রাজা দাকিয়ানুস যুবকদের পরিকল্পনার বিষয় অবগত হয়। তখন সে খুধার্ত বাঘের ন্যায় যুবক দলের প্রতি সসস্ত্র আক্রমণ চালায় এবং অধিকাংশ যুবককে হত্যা করে। বাকি গুটিকয়েক যুবককে বন্দি করে কারাগারে পাঠায়। পরবর্তী সময় এই জেলবন্দীদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা বের করে এনে প্রকাশ্যে হত্যা করত। এভাবে বন্দীদেরকে প্রায় শেষ করে ফেলল। সর্বশেষে মাত্র তিন জন যুবককে নিজ খেদমতের নামে হত্যা থেকে মুক্তি দিয়ে তাঁদের উপর কঠিন দায়িত্ব চাপিয়ে দিল।
রাজা দাকিয়ানুস ছিল অত্যাধিক মোটা। সে পায়খানা ফেরার পরে নিজ হস্ত দ্বারা শৌচ কার্য সমাধানে অক্ষম ছিল। এজন্য একজম যুবককে তার শৌচ কার্যের জন্য নিয়োগ করল। অপর একজনের উপর আস্তাবল পরিস্কার এবং তৃতীয় জনের উপর বাথরুমের ময়লা পরিস্কার করার দায়িত্ব ন্যস্ত করল। এসমস্ত জঘন্য দায়িত্ব তাঁদের উপর ন্যস্ত করার পরে তাঁদের প্রতি কড়া দৃষ্টি রাখার লক্ষ্যে একজন ছদ্মবেশী পাহারাদারও নিযুক্ত করল।
যুবকেরা নিজেদের ধর্ম, বিশ্বাস ও জান রক্ষার তাগিদে বাধ্য হয়ে অত্যাচারী রাজার ফরমানের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে যেতে লাগলেন। রাজা যুবকদের কার্যকালাপে মোটামুটি কিছুটা নিশ্চিত হল বটে কিন্তু ছদ্মবেশী পাহারাদারদের অনুযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মাঝে মাঝে যুবকদের প্রতি বেত্রাঘাত, খাদ্য বন্ধ ইত্যাদি জাতীয় শাস্তির বিধান বহাল রাখল। যুবকেরা রাজার এ নির্যাতন নিরবে সহ্য করে যেত। কিন্তু রাজার ধর্মদ্রোহী কার্যকালাপ, সেজদা গ্রহণ এবং ওদ্ধত্যপণা যুবকদের নিকট ছিল বেত্রাঘাতের চেয়ে অধিক পীড়াদায়ক। তাই তাঁরা এহেন পরিবেশ থেকে মুক্তি লাভের নিমিত্ত সর্বদা চিন্তামগ্ন থাকতেন।
রাজ দরবারের অসুংখ্য কর্মচারীদের মাঝে কিছু সংখ্যক লোক রাজার এহেন কার্যকলাপকে মনে প্রাণে ঘৃণা করতেন। তাঁরা তৌহিদের প্রতি পূর্ণ আস্থাবান ছিলেন। কিন্তু প্রকাশ্যে রাজার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করত। নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে যেতেন। এ ধরনের দু একটি কর্মচারীর সঙ্গে যুবকদের কিছু সম্পর্ক স্থাপতি হয়। তাঁরা যুবকদের উপর রাজার অমানবিক আচরণের জন্য ভীষণ ক্ষুদ্ধ ছিল এবং যুবকদেরকে রাজার অত্যাচার হতে কিভাবে মুক্ত করা যায় সে নিয়ে যথেষ্ট ভাবনা চিন্তা করতেন।
রাজা দাকিয়ানুস বিভিন্ন খেলাধুলা, নাচ-গান, মদ্যপান ও জুয়ার প্রতি যথেষ্ট আকৃষ্ট ছিল। তাই যুবকদের বন্ধুরা ঠিক করল একদিন নাচ গানের আসরে রাজাকে অধিক মদ্যপান করিয়ে নাচ-গানে বিভোর করে সকলে একত্রে রাজদরবার থেকে পালিয়ে যাবে। এ সিন্ধান্তকে সামনে রেখে তাঁরা সুযোগের অপেক্ষায় দিন গুজরান করছিল। যুবক ও তাঁদের বন্ধুগণ অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নিজেদের উদ্দেশ্য সাধনের পরিকল্পনা নিলেন। রাজা দাকিয়ানুস নাচ-গানের আসর জমজমাট করার জন্য সকল কর্মচারীকে নির্দেশ দিল। রাজার নির্দেশে কর্মচারীবৃন্দ অতি ব্যস্ততার সাথে সকল প্রস্তুতি সমাধা করল। সন্ধ্যার পর পরই আসর আরম্ভের ব্যবস্থা হল।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী