আল্লাহর বন্ধু নূরীর হালাত
কথিত আছে যে একদা এক বুজুর্গ দেখতে পেলেন হযরত আবুল হাসান নূরী (রহঃ) হাত পেতে মানুষের নিকট থেকে সাহায্য গ্রহণ করছেন। বুজুর্গ বলেন, এ দৃশ্যটি আমার নিকট বড় অশোভন মনে হল যে, এত বড় বুজুর্গ কেমন করে মানুষের নিকট হাত পাতলেন? পরে আমি হযরত জোনায়েদ বাগদাদীর সাথে সাক্ষাত করে ঐ ঘটনা সম্পর্কে তাকে অবগত করলে তিনি বললেন, হযরত আবুল হাসান নূরীর এ কর্মকে তুমি খারাপ মনে করো না। আসলে তিনি মানুষকে কিছু দেওয়ার জন্যই তাদের নিকট হতে গ্রহণ করেন। অর্থাৎ তিনি এ জন্য মানুষের দান গ্রহণ করেন যেন মানুষ পরকালে তার বিনিময়ে ছওয়াব লাভ করে।
অতঃপর হযরত জোনায়েদ বাগদাদী (রহঃ) একটি পাল্লা আনতে বললেন, পাল্লা আনা হলে তা দ্বারা তিনি একশ দেরহাম মেপে তাতে আরো একটি মুটি দেরহাম মিলিয়ে বললেন, এ দেরহাম নিয়ে হযরত নূরীকে দিয়ে আস।
বর্ণনাকারী বলেন, পাল্লা দ্বারা কোন বস্তুর ওজন করা হয় তার সঠিক মাপ নির্ণয়ের জন্য কিন্তু হযরত জোনায়েদ একশ দেরহাম ওজনকরার পর তাতে এক মুটি দেরহাম মিলিয়ে দেয়ার পর ঐ পরিমানের কি তাৎপর্য রইল। অথচ হযরত জোনায়েদের মত বিজ্ঞলোক এ ক্ষেত্রে কোন প্রকার বোকামীর পরিচয় দেবেন এমন ধারণা করাও অন্যায়। সুতরাং এ বিষয়ে তাকে কিছু জিজ্ঞেস করতেও আমার লজ্জাবোধ হল। অবশেষে আমি ঐ দেরহামের থলি হতে একশ’ দেরহাম ওজন করে তা আমার হাতে দিয়ে বললেন, এ দেরহাম হযরত জোনায়েদকে ফেরৎ দিয়ে বলবে, আমি তার দান গ্রহণ করিনি এবং একশ’র উপর যা ছিল কেবল তাই গ্রহণ করেছি।
বর্ণনাকারী বলেন, এ ঘটনায় আমি পূর্বপেক্ষা আরো বিষ্মিত হয়ে হযরত নূরীর নিকট ঘটনার রহস্য জিজ্ঞেস করলাম। হযরত নূরী বললেন, হযরত জোনায়েদ বাগদাদী বড় বিজ্ঞ মানুষ। তিনি চেয়েছিল রশির উভয় প্রান্ত নিজের হাতে রাখতে। তিনি যে একশ’ দেরহাম ওজন করেছিলেন তা ছিল তার নিজস্ব সম্পদ। ঐ অর্থ আমাকে দান করে তিই আখেরাতের ছওয়াব লাভ করতে চেয়েছিলেন। আর একশ’র উপর অতিরিক্ত এক মুটি দেরহাম তিনি আল্লাহ পাকের নামে উৎসর্গ করেছিলেন। যা হোক, হযরত জোনায়েদ কর্তৃক আল্লাহর নামে প্রদত্ত ঐ এক মুটি দেরহামই আমি গ্রহণ করেছি এবং তার নিজস্ব মালিকানার একশ’ দেরহাম তার নিকট ফেরৎ পাঠাচ্ছি।
বর্ণনাকারী বলেন, আমি ঐ অর্থ নিয়ে হযরত জোনায়দের নিকট ফেরৎ এলে তিনি চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে মন্তব্য করলেন, আসলে হযরত নূরী ঐ সম্পদ হতে তার নিজের অংশটা গ্রহণ করে আমারটা ফেরৎ দিয়েছেন।