আল্লাহর কুদরতী উটনী-শেষ পর্ব

আল্লাহ্‌র কুদরতী উটনী-৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন  

অতঃপর তারা হযরত ছালেহ (আঃ) কে হত্যা করার জন্য রাত্রে তাঁর ঘরে আসল। আল্লাহ্‌ পাক আকাশ হতে তাঁদের প্রতি পাথর বর্ষণ করলেন। আর পাথর বর্ষণের দ্বারা তাদেরকে চর্বিত ঘাসের ন্যায় করে দিলেন। তারা নির্ধারিত সময়ে সম্প্রদায়ের লোকদের নিকট ফিরে না আসায় তারা অস্তির হয়ে পড়ল। অবশেষে হযরত ছালেহ (আঃ) এর বাড়িতে এসে দেখল যে, তাঁদের নেতা সহ নয়জনের মৃত্যুদেহ ছিন্ন ভিন্ন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তখন সম্প্রদায়ের লোকেরা হযরত ছালেহ (আঃ) কে বলল যে, আপনি তাদিগকে হত্যা করেছেন। অতঃপর তারা হযরত ছালেহ (আঃ) কে হত্যা করে প্রতিশোধ গ্রহণের উদ্যোগ নিল। কিন্তু হযরত ছালেহ (আঃ) এর বংশের লোকেরা তাদেরকে বাঁধা দিল।

হযরত ছালেহ (আঃ) এর পক্ষে হাতে অস্ত্র ধারণ করল। আর সম্প্রদায়ের লোকদেরকে বলল, আল্লাহ্‌ পাকের কসম! তাঁকে হত্যা করতে তোমাদিগকে কখনও সুযোগ দিব না। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিন দিনের মধ্যে অবশ্যই তোমাদের প্রতি আযাব নেমে আসবে। যদি সে এ ব্যাপারে সত্যবাদী হয় তা হলে এখন তাঁকে কিছু করতে গেলে আল্লাহ্‌ পাক তোমাদের প্রতি অধিক অসন্তুষ্ট হবেন। সুতরাং আল্লাহ্‌ পাককে অধিক রাগান্বিত করিও না। আর যদি তিনি মিথ্যাবাদী হন তা হলে তোমরা তিন দিন পর যা ইচ্ছা তাই করিও। সম্প্রদায়ের লোকেরা এ কথায় উপর নির্ভর করে ঐ রাত্রে ফিরে গেল।

ছামুদ সম্প্রদায়ের নেতারা পরস্পর পরামর্শ করল যে ছালেহ তিনদিন পর আমাদিগকে ধ্বংস করে আমাদের হাত হতে পরিত্রাণ পাওয়ার চেষ্টা করতেছে। কিন্তু আমরা এটার পূর্বেই তাঁকে এবং তাঁর অনুসারীদেরকে হত্যা করে তাঁদের হাত হতে পরিত্রাণ পেতে চাই। হেজর শহরের উপকণ্ঠে এক পাহাড়ের গুহায় হযরত ছালেহ (আঃ) একটি নামাযের ঘর তৈরী করে নিয়ে ছিলেন। তিনি তথায় নামায আদায় করে নিতেন। সম্প্রদায়ের লোকেরা হযরত ছালেহ (আঃ) কে হত্যা করার জন্য পাহাড়ের গুহার দিকে চলল। তারা বলাবলি করতে লাগল যে, যখন তিনি নামায পড়ার জন্য এখানে আগমন করবে তখন আমরা তাঁকে হত্যা করব। তাঁকে হত্যা করে পরে তাঁর পরিবার পরিজন ও অনুসারীদিগকে হত্যা করব। এসব কথা বলাবলি করতে করতে তারা গুহার ভিতর প্রবেশ করল। এদিকে আল্লাহ্‌ পাক তাঁদের প্রতি বৃষ্টির ন্যায় পাথর বর্ষণ করলেন। তারা অবস্থা বেগতিক দেখে তথা হতে দৌড়ায়ে পলায়ন করতে চাইল। কিন্তু তা সম্ভব হল না। পাথরের আঘাতেই গুহার ভিতিরেই মরে রহিল। তাঁদের সম্প্রদায়ের লোকেরা জানতে পারল যে, তাঁদের সাথে কিরূপ আচরণ করা হয়েছে।

অতঃপর পরের দিন বৃহস্পতিবার সকালে হযরত ছালেহ (আঃ) এর কথা মোতাবেগ তাদের সকলের মুখমণ্ডলের বর্ণ হলুদ হয়ে গেল। এটা আযাবের প্রথম নিদর্শন। কিন্তু আযাবের এ নিদর্শন প্রকাশ পাওয়ার পরও তারা সতর্ক হল না। আল্লাহ্‌ পাকের প্রতি ঈমান এনে নিজেদের অপরাধ হতে ফিরে আসে নাই। বরং হযরত ছালেহ (আঃ) এর প্রতি তাঁদের হিংসা ও গোস্বা আরও অধিক বৃদ্ধি পেল। তাই সম্প্রদায়ের সকলেই হযরত ছালেহ (আঃ) কে হত্যা করার সুযোগ সন্ধান করতে লাগল।

শুক্রবার সকালে ঘুম হতে জেগে সকালে নিজ নিজ মুখমণ্ডল লাল দেখতে পেল। আর তৃতীয় দিন অর্থাৎ শনিবার সকালে এঁকে অপরের মুখমণ্ডল ঘোর কৃষ্ণবর্ণ দেখতে পেল। অবশেষে সকলেই নিজেদের জীবন সম্পর্কে নিরাশ হয়ে পড়ল। এখন শুধু আযাবের অপেক্ষা। কেমন আযাব আসবে? কোন দিক হতে আসবে? কোন সময় আসবে? এভাবে শনিবার কেটে রাত্রিও শেষ হয়ে গেল। পরের দিন রবিবার সকালে যখন সূর্য উদিত হয়ে পূর্ণভাবে আলো বিকিরণ করতে ছিল তখন যমীর নিচের দিক হতে ভয়ানক ভূমিকম্প শুরু হয়ে গেল। সম্প্রদায়ের সমস্তলোক জ্ঞান শুন্য হয়ে এদিক সেদিক ছুটাছুটি করতে লাগল। এমতাবস্থায় আকাশ হতে এক বিরাট আওয়াজ ধ্বণিত হল। ফলে সকলেই ঝড়ে পতিত হয়ে মৃত্যুবরণ করল। সমস্ত এলাকা স্তব্ধ হয়ে গেল। মানুষের কোলাহল একমুহুর্তে থেমে গেল।

ছামুদ সম্প্রদায়ের ধ্বংসের পর হযরত ছালেহ (আঃ) চার হাজার স্বীয় অনুসারীদেরকে সাথে নিয়ে এ স্থান ত্যাগ করে অন্য স্থানে চলে গিয়েছেন বলে তাফসীরকারকগণ অভিমত পেশ করেছেন। তবে তিনি কোথায় চলে গিয়েছেলেন এ সম্পর্কে ওলামাদের মতামত বিভিন্ন।

তফসীরে খাযেনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হযরত ছালেহ (আঃ) ফিলিস্তিনে রমলা নামক এলাকায় বসবাসের জন্য চলে গিয়েছিলেন। কেননা উক্ত এলাকা হেজর শহরের নিকটেই অবস্থিত। অধিকন্তু এটা শস্যশ্যামল ও ফল উৎপাদনের এলাকা। গৃহপালিত পশু চড়াবার উপযুক্ত ঘাস, ক্ষেত ও এদের পানি পান করানোর জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা রয়েছে। এজন্য অনেকের ধারণা হল যে, তিনি শেষ পর্যন্ত ফিলিস্তিনে বসবাস করেছেন। কারও কারও মতে তিনি শেষ পর্যন্ত তাঁর চার হাজার অনুসারীসহ ইয়ামেনের কাছে হাদ্রামাউত এলাকায় চলে যান। কারণ এটাই তাঁদের আসল বাসস্থান। সেখানে একটি কবর রয়েছে। অনেকে মনে করেন যে, এটাই হযরত ছালেহ (আঃ) এর কবর।

সাইয়েদ আলুমী (রহঃ) বলেন যে, ছামুদ সম্প্রদায়ের ধ্বংসের পর তিনি মক্কায় চলে যান এবং সেখানে বসবাস করেন। প্রবিত্র মক্কা শরীফেই তিনি ইন্তিকাল করেন। কাবা শরীফের পশ্চিম দিকে হেরেম শরীফের ভীতরেই তাঁর কবর রয়েছে।

আল্লাহ্‌র কুদরতী উটনী-১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।