আল্লাহর কুদরতী উটনী-১ম পর্ব

হযরত ছালেহ (আঃ) তাঁর সম্প্রদায়ের লোকদেরকে বার বার বুঝাচ্ছেন এবং উপদেশ দিতে থাকেন। কিন্তু তাঁর সম্প্রদায়ের লোক তারা কোন অবস্থায়ই তাঁর উপদেশের প্রতি কর্ণপাত করে নি। বরং তাঁর বিরোধিতার আরও উঠে পড়ে লাগল এবং কিভাবে তাঁকে তর্কবিতর্কের মাধ্যমে পরাজিত করে লজ্জা দেয়া যায় এবং সত্যের প্রচারের এবং প্রসারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যায় এ ব্যাপারে বার বার প্রয়াস চালায়। যদিও তখন পর্যন্ত সম্প্রদায়ের মাত্র কয়েকজন দুর্বল ও অসহায় লোক আল্লাহ্‌ পাকের প্রতি ঈমান এনে মুসলমান হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রদায়ের বাতিল মতামত পরিত্যাগ করে নি। আল্লাহ্‌ পাক প্রদত্ত সুখ শান্তি ও ধন সম্পদের মধ্যে ডুবে থেকেও আল্লাহ্‌ পাকের শুকরিয়া আদায় করে নি। বরং গর্ভ ও অহংকারে ফেটে পড়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। বার বার হযরত ছালেহ (আঃ) এর নবুয়ত ও রিসালত অস্বীকার করেছে। অবশেষে তাঁর নবুয়তের প্রতি চ্যালেঞ্জ করে বসেছে। তাঁর নবুয়তের সত্যতার উপর প্রমাণ আনার দাবী করেছে।

হযরত ছালেহ (আঃ) স্বীয় নবুয়তের সত্যতার প্রমাণ পেশ করতে সম্মত হলেন। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন তারা কি ধরণের প্রমাণ দেখতে চায়। হেজর শহরের উপকণ্ঠে একটি বড় পাথর খণ্ড ছিল। সে পাথরটির নাম ছিল ‘ফাতেবা’। তারা বলল যে, তিনি যেন মোজেযা হিসাবে উক্ত পাথর হতে দশ মাসের গর্ভবতী একটি উটনী বের করে আনেন। আর ঊটনী বের হওয়ার সাথে সাথে যেন এটার গর্ভ হতে একটি বাচ্ছা জন্ম নেয়। হযরত ছালেহ (আঃ) তাঁদের থেকে এ মর্মে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করলেন যে, যদি আল্লাহ্‌ পাক তাঁদের দাবী অনুযায়ী মোজেযা প্রকাশ করেন তা হলে তারা আল্লাহ্‌ পাকের প্রতি ঈমান আনবেন কি না? তারা সকলে প্রতিজ্ঞা করল যে, যদি আল্লাহ্‌ পাক তাঁদের শর্ত মোতাবেক মোজেযা প্রকাশ করেন তা হলে তারা সকলেই ঈমান গ্রহণ করবে। তাঁদের প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করে হযরত ছালেহ (আঃ) নামাযে দাঁড়িয়ে পড়লেন। নামাযান্তে আল্লাহ্‌ পাকের নিকট দোয়া করলেন। তিনি দোয়া করা অবস্থায়ই পাথরটি নড়ে উঠল। পাথরটি ফেটে দশ মাসের গর্ভবতী এক উটনী বের হয়ে আসল। আর সাথে সাথে উটনীর একটি বাচ্চা জন্ম নিয়ে উটনীর চারপাশে ঘুরতে লাগল।

হযরত ছালেহ (আঃ) এর এ মোজেযা দেখে ছামুদ সম্প্রদায়ের প্রধান জুনদা বিন আমর ও তাঁর সঙ্গী সাথীরা সাথে সাথে আল্লাহ্‌ পাকের প্রতি ঈমান গ্রহণ করল। তখন অন্যান্যরাও আল্লাহ্‌ পাকের প্রতি ঈমান গ্রহণ করার ইচ্ছা করেছিল। কিন্তু জওয়াব বিন আমর বিন সেবীদ, ছামুদ সম্প্রদায়ের মূর্তি প্রস্তুতকারক আল হাবাব এবং তাঁদের গনকঠাকুর রিবাব বিন চার বিন জালহাম প্রভৃতিরা অবশিষ্ট লোকদিগকে ঈমান গ্রহণ করা থেকে বিরত রাখল। অতঃপর হযরত ছালেহ (আঃ) সম্প্রদায়ের লোকদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন যে, হে আমার সম্প্রদায়! নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে আমার নবুয়তের সত্যতার প্রমাণ স্বরূপ তোমাদের নিকট এক উজ্জল প্রমাণ এসেছে। তা হল আল্লাহ্‌ পাকের এ উটনী। সুতরাং তোমরা তাঁকে আল্লাহ্‌ পাকের জমীনে ছেড়ে দাও। যেখান হতে এর ইচ্ছা ঘাস খাবে। আর তোমরা কোন খারাপ নিয়তে এর গায়ে স্পর্শও করবে না। যদি এরূপ কিছু কর তা হলে আল্লাহ্‌র গজব তোমাদেরকে ঘেরাও করবে।

আল্লাহ্‌র কুদরতী উটনী-২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন  

আরো পড়তে পারেন...

গাধার সংগীতচর্চা

এক গাঁয়ে এক ধোপার ছিল একটা গাধা। তার নাম অদ্ভূত। দিনভর গাধা ধোপার কাপড়ের বোঝা…

গাধা ও ব্যবসায়ী

এক লবণের ব্যবসায়ী সস্তায় পেয়ে একদিন বাজার থেকে প্রচুর লবণ কিনল। বোঝা বইবার জন্য ব্যবসায়ীর…

পায়রা ও পিঁপড়া

একদিন এক পিঁপড়ে পিপাসায় কাতর হয়ে নদীতে জল পান করতে গেল। এমন সময় আচমকা বাসাতের…

আল্লাহর কুদরতী উটনী-১ম পর্ব

হযরত ছালেহ (আঃ) তাঁর সম্প্রদায়ের লোকদেরকে বার বার বুঝাচ্ছেন এবং উপদেশ দিতে থাকেন। কিন্তু তাঁর সম্প্রদায়ের লোক তারা কোন অবস্থায়ই তাঁর উপদেশের প্রতি কর্ণপাত করে নি। বরং তাঁর বিরোধিতার আরও উঠে পড়ে লাগল এবং কিভাবে তাঁকে তর্কবিতর্কের মাধ্যমে পরাজিত করে লজ্জা দেয়া যায় এবং সত্যের প্রচারের এবং প্রসারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যায় এ ব্যাপারে বার বার প্রয়াস চালায়। যদিও তখন পর্যন্ত সম্প্রদায়ের মাত্র কয়েকজন দুর্বল ও অসহায় লোক আল্লাহ্‌ পাকের প্রতি ঈমান এনে মুসলমান হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রদায়ের বাতিল মতামত পরিত্যাগ করে নি। আল্লাহ্‌ পাক প্রদত্ত সুখ শান্তি ও ধন সম্পদের মধ্যে ডুবে থেকেও আল্লাহ্‌ পাকের শুকরিয়া আদায় করে নি। বরং গর্ভ ও অহংকারে ফেটে পড়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। বার বার হযরত ছালেহ (আঃ) এর নবুয়ত ও রিসালত অস্বীকার করেছে। অবশেষে তাঁর নবুয়তের প্রতি চ্যালেঞ্জ করে বসেছে। তাঁর নবুয়তের সত্যতার উপর প্রমাণ আনার দাবী করেছে।

হযরত ছালেহ (আঃ) স্বীয় নবুয়তের সত্যতার প্রমাণ পেশ করতে সম্মত হলেন। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন তারা কি ধরণের প্রমাণ দেখতে চায়। হেজর শহরের উপকণ্ঠে একটি বড় পাথর খণ্ড ছিল। সে পাথরটির নাম ছিল ‘ফাতেবা’। তারা বলল যে, তিনি যেন মোজেযা হিসাবে উক্ত পাথর হতে দশ মাসের গর্ভবতী একটি উটনী বের করে আনেন। আর ঊটনী বের হওয়ার সাথে সাথে যেন এটার গর্ভ হতে একটি বাচ্ছা জন্ম নেয়। হযরত ছালেহ (আঃ) তাঁদের থেকে এ মর্মে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করলেন যে, যদি আল্লাহ্‌ পাক তাঁদের দাবী অনুযায়ী মোজেযা প্রকাশ করেন তা হলে তারা আল্লাহ্‌ পাকের প্রতি ঈমান আনবেন কি না? তারা সকলে প্রতিজ্ঞা করল যে, যদি আল্লাহ্‌ পাক তাঁদের শর্ত মোতাবেক মোজেযা প্রকাশ করেন তা হলে তারা সকলেই ঈমান গ্রহণ করবে। তাঁদের প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করে হযরত ছালেহ (আঃ) নামাযে দাঁড়িয়ে পড়লেন। নামাযান্তে আল্লাহ্‌ পাকের নিকট দোয়া করলেন। তিনি দোয়া করা অবস্থায়ই পাথরটি নড়ে উঠল। পাথরটি ফেটে দশ মাসের গর্ভবতী এক উটনী বের হয়ে আসল। আর সাথে সাথে উটনীর একটি বাচ্চা জন্ম নিয়ে উটনীর চারপাশে ঘুরতে লাগল।

হযরত ছালেহ (আঃ) এর এ মোজেযা দেখে ছামুদ সম্প্রদায়ের প্রধান জুনদা বিন আমর ও তাঁর সঙ্গী সাথীরা সাথে সাথে আল্লাহ্‌ পাকের প্রতি ঈমান গ্রহণ করল। তখন অন্যান্যরাও আল্লাহ্‌ পাকের প্রতি ঈমান গ্রহণ করার ইচ্ছা করেছিল। কিন্তু জওয়াব বিন আমর বিন সেবীদ, ছামুদ সম্প্রদায়ের মূর্তি প্রস্তুতকারক আল হাবাব এবং তাঁদের গনকঠাকুর রিবাব বিন চার বিন জালহাম প্রভৃতিরা অবশিষ্ট লোকদিগকে ঈমান গ্রহণ করা থেকে বিরত রাখল। অতঃপর হযরত ছালেহ (আঃ) সম্প্রদায়ের লোকদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন যে, হে আমার সম্প্রদায়! নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে আমার নবুয়তের সত্যতার প্রমাণ স্বরূপ তোমাদের নিকট এক উজ্জল প্রমাণ এসেছে। তা হল আল্লাহ্‌ পাকের এ উটনী। সুতরাং তোমরা তাঁকে আল্লাহ্‌ পাকের জমীনে ছেড়ে দাও। যেখান হতে এর ইচ্ছা ঘাস খাবে। আর তোমরা কোন খারাপ নিয়তে এর গায়ে স্পর্শও করবে না। যদি এরূপ কিছু কর তা হলে আল্লাহ্‌র গজব তোমাদেরকে ঘেরাও করবে।

আল্লাহ্‌র কুদরতী উটনী-২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন