আনসার ও মুহাজিরিনের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন
যারা জন্মভূমি ত্যাগ করে মদীনায় হিজরত করেছেন, সে সমস্ত মুহাজিরিন ছিলেন সর্বহারা, বাস্তহারা, তাঁদের অনেকের পরিবারও সঙ্গে আনতে সক্ষম হন নি। তাই আনসারগণের গৃহে ও তাঁদের সাহায্যের উপরই নির্ভর করত মুহাজিরিনের জীবন যাত্রা। কিন্তু মুহাজিরিন ছিলেন স্বাধীনচেতা, কর্মঠ ও উদারমনা। এভাবে অপরের অনুদানের প্রতি সর্বক্ষণ তাকিয়ে থাকা তাদের বরদাশত হত না। তাই তাদের জন্য একটি বিশেষ ব্যবস্থার প্রয়োজন ছিল।
রাসূলে পাক (সাঃ) আনসারগণকে ডেকে বললেন, মুহাজিরগণ তোমাদের ভাই। তোমরা আল্লাহর রেজাবন্দী হাসিলের উদ্দেশ্যে দু’জন করে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হও। তারপর রাসূল (সাঃ) একজন মুহাজির ও একজন আনসারের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন স্থাপন করে দিলেন। তখন হতে আনসার ও মুহাজিরগণ ভাই ভাই হয়ে যান। প্রত্যেক আনসার নিজ নিজ মুহাজির ভাইকে সঙ্গে করে গৃহে নিয়ে যান এবং ঘরের মাঝখানে পর্দা দিয়ে দু’ভাগ করলেন। এক অংশ মুহাজির ভাইকে ছেড়ে দিলেন। যার নিকট একাধিক স্ত্রী ছিল, সে তার মুহাজির ভাইকে বলল, আমার যে স্ত্রী তোমার পছন্দ হয়, আমি তাকে তোমার জন্য তালাক দিয়ে দিব।
এমনি ভাবে এক ঘটনায় হজরত ছায়াদ তাঁর মুহাজির ভাই আব্দুর রহমানকে ডেকে যখন তাঁর এক স্ত্রীকে পেশ করলেন, তখন আব্দুর রহমান (রাঃ) বললেন, আমি আপনার অনেক অনেক শুকরিয়া আদায় করছি। তবে আপনার স্ত্রী আমার দরকার হবে না। এ বলে আব্দুর রহমান বাজারে যেয়ে মহাজনের ঘর হতে কিছু মালামাল নিয়ে তা বিক্রয় করলেন। তাতে তাঁর কিছু লাভ হল সে লাভের টাকা দিয়ে বিবাহ করলেন।
আনসারগণ মুহাজিরিনের খাওয়ার জন্য কিছু খেজুর গাছ দান করে দিলেন। মদীনায় ইহুদী বনু নজীরকে যখন হিজরী চতুর্থ সনে মদীনা হতে বিতাড়িত করা হল, তখন তাদের খেজুর বাগানগুলো হতে মুহাজিরিনকে দান করা হল। ঐ সময় তারা আনসারগণকে খেজুর বৃক্ষ ফেরত দেন। কিন্তু অনেকেই ফেরত নেননি।