আছিয়া কারাগারে-শেষ পর্ব

ফেরাউন এবার তাদের প্রতি সগর্জনে ধ্মক দিয়ে বলে উঠল, আমার নির্দেশ পালনে এত বিলম্ব কেন? যদি তোমাদের প্রাণের মমতা থাকে এ মুহূর্তে আদেশ পালন কর। অনুচরবৃন্দ এবার বাধ্য হয়ে বিবি আছিয়া এবং ফেরাউনের সাতটি পুত্রকে অন্ধকার কারাগৃহের সর্বনিকৃষ্ট কক্ষ মধ্যে বন্দী করে বাইরে হতে উহা তালাবদ্ধ করে দিল।

অতঃপর ফেরাউনের নির্দেশে তারা কক্ষ মধ্যে ভীষণ দুর্গন্ধময় ময়লা এবং গলিত মৃত্যু দেহসমূহ রেখে আসল। তা ছাড়া বন্দীগণের খাদ্য পানীয় বন্ধ করে দেয়া হল। ফলে ক্ষুধা তৃষ্ণার যন্ত্রনার সাথে অসহ্যকর দুর্গন্ধের জ্বালা মিলিত হয়ে বন্ধীগণের প্রাণ ওষ্ঠাগত হল। বিবি আছিয়ার ক্রোড়ে বসে তার একটি দুগ্ধপোষ্য শিশু ক্ষুধায় তৃষ্ণায় অস্থির হয়ে হাত পা আছড়াতে লাগল।

অন্যান্য সকলে পেটে উগ্র দুর্গন্ধে উম্মত্ত প্রায় হয়ে বার বার বমি করতে আরম্ভ করল। বমির সাথে ভিতর হতে নাড়ীভুঁড়িগুলো বের হয়ে আসার উপক্রম হল। এভাবে কঠোর সাজার মধ্য দিয়ে প্রায় দুটি সপ্তাহ কেটে গেল।

তারপর একদা বাদশাহর মন্ত্রী হামান এসে বন্দীগণকে বাইরে এনে বিবি আছিয়াকে বলল, বেগম আপনি আমাদের পরম শ্রদ্ধা ও ভক্তির পাত্রী। যথেষ্ঠ বুদ্ধিমতী ও বিদূষী মহিলা! আপনাকে আমাদের পরম শ্রদ্ধা ও ভক্তির পাত্রী।

যথেষ্ঠ বুদ্ধিমতী ও বিদূষী মহিলা! আপনাকে উপদেশ দিতে পারি তেমন যোগ্যতা আমার নেই। তবে আপনার এবং আপনার সন্তানগণের এ দুরবস্থায় ব্যাকুল হয়ে আপনার সমীপে আমি অনুরোধ জানাতে ছুটে এসেছি। তা এই যে, আপনার স্বামী নিজেকে স্বয়ং খোদা দাবী করছে। রাজ্যের প্রজাবৃন্দ তার সে দাবী স্বীকার করে তার উপসনাদিও করছে।

এমতাবস্থায় আপনি তার বেগম হয়ে এবং এরা তার সন্তান হয়ে যদি তার সে দাবী অমান্য করে তবে এটা অপেক্ষা তার পক্ষে অপমান এবং অশান্তির আর কি থাকতে পারে? অন্ততঃ তার এ অপমান এবং মনের অশান্তি মোচন করতে আপনারা তার মনের বাসনা পূর্ণ করুন। তাকে খোদা বলে স্বীকার করুন।

বিশেষতঃ নারীর ধর্ম স্বামীর সন্তোষ বিধান করা! তা করতে গিয়ে কোন কাজে যদি নিজের বিবেক অবাধ্যও হয়, আমি বলছি তবু তা করা উচিত। এমত ক্ষেত্রে ন্যায়-অন্যায়ের সমস্ত দায়িত্ব স্বামীর উপরই বর্তিয়ে থাকে। কেননা নারীগণ স্বামীর, স্বামীর অনুগত দাসীর তুল্য। তাদের নিজেদের কোন স্বাধীনতা নেই।

আপনি একবার ভেবে দেখুন, যদি তাই থাকত তবে আজ আপনার এরূপ দুর্ভোগ পোহাবার প্রয়োজন হত না। আর তজ্জন্যই আমি আপনাকে পুনরায় বলছি আপনি অযথা স্বেচ্ছায় এরূপ ভীষণ কষ্ট ভোগ না করে স্বামীর ইচ্ছা পূরণ করুন এবং পুনরায় সে সুখ-নিকেতন অন্দর মহলে ফিরে যান।

মন্ত্রী হামানের এ অনুরোধের জবাবে আছিয়া বললেন, উজীর হামান! তুমি এরূপ অনুরোধ আর কখনও আমার সম্মুখে উচ্চারণ করিও না। জানিও আমার প্রাণের জন্য এতটুকু মায়া নেই। তোমরা আমাকে ও আমার এ ধর্মানুরাগী পুত্রগণকে যত কঠোড় শ্বাস্তি দিতে পার দিয়ে যাও।

আমরা তোমরা বাদশাহের অন্যায় দাবী ও পাপ বাসনাকে কিছুতেই মানব না। তুমি অযথা এখানে বিলম্ব না করে চলে যেতে পার।

এ কথা শুনে উজীর হামান নিরাশ হয়ে চলে গেল। গিয়ে বাদশাহর কাছে বেগমের এ দৃঢ়তার কথা জ্ঞাপন করলো।

আছিয়া কারাগারে- পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।