গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
আকালু জবাব দিল, “আমি চোর না, আর মানুষ ঠকিয়েও সংসার চালাই না। চতলার বিল থেকে ধরে আনলাম।”
বেপারির কণ্ঠে তবু অবিশ্বাস, বলল, “চতলার বিলে এত বড় তেলাপিয়া এল কোত্থেকে!”
আকালু যে নিজের উপর অলৌকিক শক্তি ভর করানোর মন্ত্র জানে এবং অলৌকিক শক্তি ভর করলে আকালু যা খুশি করতে পারবে, বেপারিকে প্রমাণ দিতে পারলে কাজের কাজ হত। বেপারি বিশ্বাস করবে না জেনেও জোর গলায় বলল আকালু, “আমি চাইলেই বিলে মেলা মাছ আসবে, আর হুকুম দিলেই বিলের সব মাছ ভ্যানিশ হয়ে যাবে।”
কথাটা জবর ঠাট্টা মনে করে জোবেদ বেপারি হো হো করে হাসতে লাগল। হেসে জবাব দিল, “তোর এত ক্ষমতা বলেই তো তোর মায়ের এত কষ্ট রে বাবা। শোনো আকালুর মা, এইটুকু ছেলের উপর ভরসা করে থাকলে সংসার তোমার চলবে না। তারচেয়ে দেখেশুনে একটা নিকা কর, পুরুষ মানুষ না হলে সংসার চলে? আকালুর একটা সৎ বাবা এলে সেই তোমার সংসারের সব কাজ করে দেবে, আকালুও আবার আগের মতো স্কুলে যাবে।”
এমনিতেই বেপারি লোকটা আকালুর দুচক্ষের বিষ। তার উপর এত বড় একটা বাজে কথা আকালুর সামনেই বলা হল দেখে রাগে চোখ লাল হল। মা হুকুম দিলেই এখুনি লোকটাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বের করে দিতে পারে সে।
আকালুর মা শান্ত কণ্ঠে বলল, “আকালু আছে বলেই ছোট দুইটারে নিয়ে এখনও এ বাড়িতে টিকে আছি। না হলে যে কোথায় ভেসে যেতাম।”
জোবেদ বেপারি বলল, “আকালু ছোট বলেই এখনও মায়ের কথা শুনছে। বড় হলে নিজেই বিয়ে-সংসার করে তোমাকে লাথি দিয়ে তাড়াবে। মেয়ে মানুষের স্বামী ছাড়া চলে না, বুঝলে?”
আকালু বড়দের চেয়ে কম কাজ করে না, বরং অনেক বড় মানুষের চেয়েও বেশি কাজ করে। এ গাঁয়ে এক বুড়ো আকালু ছাড়া আর কেউ চতলার বিল থেকে একবার জাল ছুঁড়েই এমন বড় তেলাপিয়া তুলে আনতে পারবে? একটা প্রমাণ দেওয়ার পরও জোবেদ বেপারির এ রকম তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য আর সহ্য হল না আকালুর। লোকটাকে ভয় দেখাতে মন্ত্রের রহস্যটা এবার ফাঁস করল।
“এই যে চাচা, আমি মন্ত্র পড়লেই আমার শরীরে বড় বড় পালোয়ানের চেয়েও বেশি শক্তি ভর করে, জানেন সে খবর?”
জোবেদ চাচা আবারও ঠাট্টার হাসি দিয়ে জানতে চায়, “কী ভর করে তোর উপর?”
আকালু আরও জোর গলায় বলল, “আমি চাইলেই আপনাকে এখনই ভ্যানিশ করে দিতে পারি।”
জোবেদ বেপারি আকালুর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, “হ্যাঁ… কয় কী ছেলেটা? আমারে ভ্যানিশ না ফিনিশ করবি তুই!”
“দেখবেন? দাঁড়ান।” বলেই ঘরে ছুটে গেল আকালু।
ঘর থেকে দা হাতে বেরিয়ে এসে আকালু দাখানা শক্ত হাতে চেপে ধরল। তারপর চোখ বুজে বিড়বিড় করে মন্ত্র পড়তে লাগল। দা হাতে মন্ত্রপড়া আকালুর ভয়ঙ্কর চেহারা দেখতে লাগল সবাই। জোবেদ বেপারি হঠাৎ ভয় পেয়ে উঠে দাঁড়াল এবং আকালু চোখ খোলার আগেই দিল ভোঁ দৌড়।
আকালুর মা ও ছোট ভাইবোন দুটি অবাক চোখে আকালুর কাণ্ড দেখছিল। মন্ত্রপড়া শেষে চোখ খুলল আকালু, তারপর জোবেদ বেপারিকে চোখের সামনে না দেখে হাতের দাখানা শূন্যে ছুড়ে মারল। আকালুর হাতের দা শূন্যে কোথায় কোনদিকে উড়ে যায়, অপলক তাকিয়ে থেকেও বাড়ির কেউ তা দেখতে পেল না।