অমীমাংসিত কাহিনী

মাঝ রাতে দরজায় কড়া নারার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আমি বিরক্ত ভাব নিয়ে দরজা খুললাম।
দরজা খুলেই বিস্মিত কণ্ঠে বললাম- আরে তুই? এতো রাতে? আকাশ একগাল হেসে বললো- দোস্ত অনেকদিন তোকে দেখি না।
তোকে দেখতে ইচ্ছে হলো তাই চলে আসলাম। আজ রাতটা তোর সাথেই কাটাবো। আকাশ আমার ছোট কালের বন্ধু।
আমরা একই সাথে বড় হয়েছি। আমার বাসা থেকে ওর বাসা প্রায় দু-কিলোমিটার দূরে। অনেকদিন তার সাথে বিভিন্ন ব্যস্ততার জন্য দেখা করতে পারি নাই।
প্রায় এক মাস হতে যাচ্ছে। আমার সাথে শুধু মাত্র দেখা করবার জন্য এতো রাতে সে চলে আসবে বাসায় তা ভাবতেই পারছি না।
এই না হলে বন্ধুত্ব। তুই কি বাহিরেই দাড়িয়ে থাকবি? ভিতরে আস? গল্প করি দুই বন্ধু মিলে সারারাত। নারে দোস্ত ঘরে বসবো না।
চল বাহির থেকে ঘুরে আসি। আমি অবাক হয়ে বললাম- সে কিরে! এতো রাতে কোথায় যাবি? আর তুই এতো সাহসী হলী কবে থেকে? কিছুদিন আগেও না সন্ধ্যার পর তুই ভূতের ভয়ে বাসার বাহির হতি না? এখন কি আর সেই দিন আছে! চল বাহিরে চল।
আকাশ একগাল হেসে উত্তর দিলো। আকাশে কি সুন্দর চাঁদ উঠেছে তাই নারে আকাশ? হু আচ্ছা তোর হয়েছি কি বলতো? আসবার পর থেকেই এতো চুপচাপ কেন? আকাশ মৃদু হেসে বললো- না এমনিতেই।
এখন থেকে ভাবছি একাই থাকবো। সন্ধ্যার সময় ডিসিশন নিয়েছিলাম। সারারাত ছিলামও একা।
কিন্তু এখন খুব বেশি ভয় করছিলো তাই তোকে ডেকে নিয়ে আসলাম।
আমি আবারো অবাক হয়ে বললাম- একা ছিলি, ভয় করছিলো এগুলোর মানে কি? তুই সারারাত কোথায় ছিলি? বাড়ির বাহিরে। কেন? বাসা থেকে কি তোকে বের করে দিয়েছে? নারে বাহির করে নাই।
আর বাহির করবে কেন? আমি নিজেই বের হয়ে এসেছি। কেন? আকাশ আমার হাত ধরে বললো- দোস্ত আমার বাসায় একটু যাবি? আম্মু আমার জন্য খুব কাঁদছে।
আম্মুকে একটু বলে দিয়ে আসবি আমি ভালো আছি। খুব ভালো আছি। আমার জন্য যেন কান্নাকাটি না করে।
আমি অবাক হয়ে বললাম- আমিতো তোর কথাবার্তা কিছুই বুঝতেছি না। কি সব বলছিস? বাসা থেকে কেন বের হয়ে এসেছিস। কি হয়েছে? চল তোকে বাসায় দিয়ে আসি? নারে দোস্ত আজকে আর বাসায় যাবো না।
পরে আরেকদিন বাসায় যাবো। তুই একটু যাবি দোস্ত। আম্মু খুব কান্নাকাটি করছে। বলেই আকাশ আমাকে জরিয়ে ধরে কাদা শুরু করলো।
এখন রাত সারে তিনটা। আমি আকাশের বাসার সামনে দাড়িয়ে আছি। আকাশকে কিছুতেই আনা যায় নি।
ওকে বলেছিলাম তুই গিয়ে আমার রুমে বস আমি খালাম্মাকে বলে দিয়ে আসছি তুই আমার কাছে আছিস এবং ভালো আছিস। সে তাও করে নাই। রাস্তায়ই দারিয়ে আছে।
আমি খালাম্মার সাথে কথা বলে বাহির হবার পর নাকি আমার সাথে আমার বাসায় যাবে। কি ঘটেছে কিছুই বুঝছি না।
আকাশের কান্নার জন্য বাধ্য হয়েই এতো রাতে আকাশের বাসায় আমার আসতে হয়েছে। আমি নিথর পাথর হয়ে দাড়িয়ে আছি।
খালাম্মা আমাকে জরিয়ে ধরে অজর ধারায় কাঁদছেন। আমি খালাম্মাকে কি ভাবে শান্তনা দেব বুঝতে পারছি না।
আমার কাছে সবকিছু এলোমেলো মনে হচ্ছে। পুরো বাড়ি জুরেই কান্নার শব্দ ভেসে বেড়াচ্ছে। বাড়িতে অনেক মানুষ।
পুলিস এসে আকাশের লাশ নিয়ে যাচ্ছে। আজ সন্ধ্যায় আকাশ তার রুমে গলায় ফাঁস আটকিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
আমার আস্তে আস্তে বোধশক্তি লোপ পাচ্ছে। এ আমি কি শুনছি। আমি তাহলে এতক্ষণ কার সাথে ছিলাম? আকাশই তো তার বাসায় আমাকে আসতে বললো।
আকাশের লাশটি পুলিশের গাড়িতে তোলা হচ্ছে। শেষ বারের মতো আকাশকে দেখলাম আমি। আমার সমস্ত পৃথিবী দুলো উঠলো।
মনে হচ্ছে সবকিছু দুলছে। চোখ এর সামনে থেকে সবাই আস্তে আস্তে দূরে সরে যাচ্ছে। আমি আসতে আসতে অন্ধকার একটা জগতে হারিয়ে যাচ্ছি।
দূরে কে যেন কান্না করছে। তার মাঝে কে যেন বলছে- আম্মুকে বলিস, আমি ভালো আছি।

শ্মশানঘাট

রাতের আতঙ্ক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *