ইবলীসের দুনিয়ায় আগমন
আল্লাহর আদেশে ফেরেশতারা শেষবার জিনদেরকে হত্যা করার পরও পাহাড়-পর্বত ও বনে-জঙ্গলে লুকিয়ে থেকে কিছু সংখ্যক জিন প্রাণরক্ষা করে। ক্রমে তাদের বংশ বৃদ্ধি পেয়ে আবার জিনদের দিয়ে জগত পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তাদেরকে হিদায়েত করার জন্য পয়গাম্বর বা আল্লাহর দূত ছিল না। ফলে জিন জাতি ভীষণ পাপাচারী হয়ে উঠেছিল। আল্লাহ তাআলা ইবলিসকে আদেশ করলেন, হে ইবলিশ! তোমার ইবাদত-বন্দেগী ও আমার প্রতি তোমার আনুগত্যে আমি তোমার প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছি। এবার তোমার প্রতি আমার নির্দেশ হল তুমি দুনিয়াতে গিয়ে তোমার স্বজাতীয় জিনদেরকে সৎপথে প্রদর্শন কর।
মহান আল্লাহর এ নির্দেশ শুনে ইবলিস বলল, হে মাবুদ! আপনার নির্দেশ আমি অবশ্যই পালন করব। তবে আমার একটি আরজ হল আপনি আমাকে এমন ক্ষমতা দান করুন, যেন সারাদিন দুনিয়াতে জিনদেরকে হিদায়েত করে সন্ধ্যায় আবার আমি এখানে ফিরে এসে সারারাত আপনার ইবাদত ও ফেরেশতাদেরকে নসিহত করতে পারি।
আল্লাহ পাক ইবলিশের এ আবেদন করবূল করলেন। তখন ইবলীশ অত্যন্ত আনন্দ চিত্তে দুনিয়াতে নেমে আসল এবং জিনদেরকে হিদায়েতের কাজে আত্মনিয়োগ করল। কিন্তু একাধারে বহুদিন পর্যন্ত সে আপ্রাণ চেষ্টা ও পরিশ্রম করা সত্বেও সামান্য সংখ্যক জিন ব্যতীত প্রায় সকলেই ইবলীসের বিরুদ্ধাচরণ করতে লাগল। তখন ইবলীস আবার আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করল, হে মাবুদ! আমাকে ক্ষমতা দিন যাতে এ অবাধ্যচারী জিনদেরকে আমি সমূলে ধ্বংস করতে পারি।
আল্লাহ তাআলা ইবলীসের আবেদন শুনে জিনদেরকে ধ্বংস করার জন্য আসমান থেকে অগণিত ফেরেশতা দুনিয়ায় প্রেরণ করলেন, ফেরেশতাদের সঙ্গে ইবলীসের অনুগত বহু জিনও যোগদান করল। ফেরেশতা ও ইবলীসের বাধ্যগত জিনদের আক্রমণের কিছু সংখ্যক পথভ্রষ্ট জিন সৎপথ অবলম্বন করে তাদের প্রাণ রক্ষা করল। বাকী সমস্ত পাপী জিন প্রাণ হারাল। ইবলীস দুনিয়ার কার্য থেকে অবসর নিয়ে পুনরায় একাগ্রচিত্তে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হল। আল্লাহর দরবারে তার কৃত সিজদার সংখ্যা যে কত ছিল, তা কারও পক্ষে হিসাব করা সম্ভব নয়। আসমান-যমীনে ও আরশে মুআল্লার নিকটে এমন কোনস্থান অবশিষ্ট ছিল না, যেখানে ইবলীশ অসংখ্য সিজদাহ দেয়নি।